ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএমপি কমিশনারের ঘোষণা

আজ থেকে সারাদেশে ট্রাফিক সপ্তাহ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৫ আগস্ট ২০১৮

আজ থেকে সারাদেশে ট্রাফিক সপ্তাহ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় রবিবার (৫ আগস্ট) থেকে সারাদেশে ট্রাফিক সপ্তাহ ঘোষণা করেছে পুলিশ। শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এ ঘোষণা দেন। এদিন নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন ডিএমপি কমিশনার। ডিএমপি কমিশনার জানান, সারাদেশে ট্রাফিক সপ্তাহে পুলিশ সদস্যরা যানবাহনের বৈধতা, মেয়াদ, ফিটনেস, চালকের লাইসেন্স যাচাই-বাছাই করবেন। আমাদের কার্যক্রমে আগেও স্কাউট এবং গার্ল গাইডস সহযোগিতা করেছে। এবারও তারা থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যে উদ্দেশে আন্দোলনে নেমেছেন তা অত্যন্ত মহৎ। কিন্তু এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার জন্য, ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি গোষ্ঠী উস্কানিমূলক তৎপরতা চালাচ্ছে। এটা চলতে দেয়া হবে না। শিক্ষার্থীদের কর্মসূচীতে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকেছে বলে মন্তব্য করে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, আমরা গোয়েন্দা সূত্রে প্রমাণ পেয়েছি, স্কুল ড্রেস তৈরির হিড়িক পড়েছে। স্কুলড্রেস পরে ছাত্রদের মাঝে ঢুকে যৌক্তিক আন্দোলনকে অন্যখাতে প্রবাহিত করে ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে একটি চক্র। এ কারণে আমরা ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা এভাবে রাস্তায় থাকার কারণে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে, অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে, এই অবস্থাও চলতে দেয়া যায় না। শিক্ষার্থীরা আইন প্রয়োগে আমাদের নৈতিক ভিত্তি দিয়েছে, আমরা এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে এখন ট্রাফিক রুলের কঠোর প্রয়োগে উদ্যোগ নিয়েছি। এখন আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাই। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার জানান, দুর্ঘটনায় জড়িত সেই বাস দু’টি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজন আসামি, যাদের মধ্যে বাসের মালিক পর্যন্ত রয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল আসামি চালক মাসুম বিল্লাহকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে এরইমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা। শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য মহৎ। সরকারের পক্ষ থেকে এ আন্দোলনের দাবিতে সাড়া দেয়া হয়েছে। পুলিশও নৈতিকভাবে এতে সমর্থন করে। কিন্তু গোয়েন্দা প্রতিবেদন, সোশ্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত রিপোর্টসহ বিভিন্ন তৎপরতা ঘেঁটে আমরা বুঝতে পেরেছি, এই আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য, রাজনৈতিক রূপ দেয়ার জন্য উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। এতে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এমনকি আমাদের হাতে যে তথ্য রয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় স্কুল ড্রেস তৈরিরও হিড়িক পড়ে গেছে। শনির আখড়ায় আন্দোলনরত দুই শিক্ষার্থী পিকআপ ভ্যান থামাতে গিয়ে চাপা পড়ে আহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন। আন্দোলনে পুলিশ ও রাষ্ট্রকে নিয়ে নোংরা ভাষায় প্ল্যাকার্ড তৈরির অভিযোগ তুলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যে নোংরা ভাষায় পুলিশ ও রাষ্ট্র সম্পর্কে প্ল্যাকার্ড বানানো হয়েছে, সেটা আমরা বলতে পারছি না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে কারা পুলিশকে হেয় করতে চাইছে সেটা আমাদের কাছে স্পষ্ট। ২০১২-১৩ সালের পুরনো ছবি এখন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন বলে চালানো হচ্ছে। পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়েছে উল্লেখ করে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পুলিশে আমার ৩১ বছরের চাকরি জীবনে মিরপুর পুলিশ লাইনে বা রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হামলা হবে, ধারণাও করতে পারিনি। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় থাকার কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের লাইসেন্স চেকিংয়ের তৎপরতার কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। কর্মস্থলে যাতায়াতে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। হজযাত্রীদের ফ্লাইট মিস হচ্ছে, এ্যাম্বুলেন্স যেতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা পুলিশের প্রতিপক্ষ নয় জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, তারা আমাদের পরিপূরক। তাদের আন্দোলনের ফলে ভবিষ্যতে ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সাহস পেয়েছি আমরা। তাদের দাঁড় করানো নৈতিক ভিত্তির ওপর আমরা সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছি। সারাদেশে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করব আমরা। এই সময়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্স ছাড়া চালক, হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালকসহ কোনভাবে ট্রাফিক আইনের ব্যত্যয় হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন না মানার যে চেষ্টা, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব। ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষেত্রে কেবল যানবাহনকে দায়ী না করে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আমাদের নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে ওঠা, ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও সেটা ব্যবহার না করে রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা দীর্ঘদিনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বহুবিধ কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে, নানা সীমাবদ্ধ সত্ত্বেও আমরা চেষ্টা করছি এ আইন বাস্তবায়নের। অনেক সময় পেশাজীবীদের স্টিকার লাগিয়ে আইন লঙ্ঘন করা হয়। আরও একটি সমস্যা আমাদের ভৌত অবকাঠামো না থাকা। বাস টার্মিনাল নেই, যেসব আছে তা ডিপোতে পরিণত হয়েছে। আইন না মানার সংস্কৃতি সবচেয়ে বড় সমস্যা। একটি এলাকায় গেলে আমরা খুব ট্রাফিক রুল মানি, কিন্তু সেখান থেকে বেরোলে আর মানি না। সবার কাছে আহ্বান জানাই সব জায়গায় ট্রাফিক রুল মেনে চলার। বিশৃঙ্খলা নয়, শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। আইন মানতে হবে, যারা আইন মানে না, তাদের রুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। জনগণের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুলিশ সারারাত জেগে থাকে বলে আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন। সবার কর্মঘণ্টা আছে, পুলিশের কর্মঘণ্টা নেই। ১৬-১৭ ঘণ্টাও আমাদের ডিউটি করতে হয়। তাপদাহ, শৈত্যপ্রবাহ, ঝড়-বৃষ্টি, সবসময় পুলিশ আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শৃঙ্খলা ধরে রাখার জন্য। আমাদের ত্যাগ খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই।
×