ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দরপত্র আহ্বানের আগেই রাস্তা নির্মাণ শেষ

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৪ আগস্ট ২০১৮

 দরপত্র আহ্বানের আগেই রাস্তা  নির্মাণ শেষ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ দরপত্র (টেন্ডার) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে গত জুন মাসের ৬ তারিখে। নিয়মানুযায়ী দরপত্র খোলা ও যাচাইবাছাই করা হলেও সর্বনিম্ন দরদাতার অনুকূলে এখনও কার্যাদেশ প্রদান করা হয়নি। কিন্তু তার আগেই ঝিকরগাছা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের পুরন্দপুর মহিলা মাদ্রাসা হতে হাজেরালী সিমান্তপাড়া হয়ে লিংকরোড পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার মাটির রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেছে। ঠিকাদার কিংবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নয়, খোদ পৌর মেয়র নিজেই করেছেন এই কাজটি। কাজ শেষে দরপত্র আহ্বানের বিষয়টি হতবাক করেছে সবাইকে। স্বয়ং মেয়রের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হওয়া কাজের জন্য দরপত্র আহ্বানকে নিছক ভুল হিসেবে মানতে নারাজ তারা। এ ছাড়া এ নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতাও। কারণ দরপত্র খোলা ও লটারির পর ১৫ লাখ ১৬ হাজার টাকার ঠিকাদারি কাজটির জন্য মনোনীত হয়েছেন মেসার্স আজাদ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী হাসানুর রেজা আজাদ বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই তিনি কাজটি পেয়েছেন। দরপত্র শর্তানুসরণ করেই করতে চান কাজটি। কিন্তু সম্পন্ন হওয়া কাজ করবেন কিভাবে তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় তিনি। তিনি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি মেয়র ও পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগে কয়েকদফা যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু এ বিষয়টি কিভাবে সুরাহা হবে এখনও সে বিষয়ে তাকে কিছু বলা হয়নি। তবে কার্যাদেশ প্রদানের আগে হয়তো সমাধান বের করবে কর্তৃপক্ষ। ঝিকরগাছা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী সরদার দরপত্র আহ্বানের আগেই সড়কটি নির্মাণের কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়র নিজেই তার স্কেভেটর দিয়ে কাজটি করিয়েছেন। তবে সম্পূর্ণ কাজ করা হয়নি। এখনও ৫০ শতাংশ বাকি আছে। আর এ নিয়ে কোন জটিলতার আশঙ্কা নেই। যে ঠিকাদার কাজটি পেয়েছেন তিনি মেয়রের সঙ্গে সমঝোতা করে নেবেন। স্থানীয় একাধিক সূত্র অভিযোগ করেন, যে এলাকায় রাস্তাটি নির্মাণ করা হয় সেখানে বসতির সংখ্যা বেশি নয়। কিন্তু স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা সেখানে সম্প্রতি ওই এলাকায় কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন। ওই নেতার সদ্য কেনা জমির গুরুত্ব বাড়াতেই তড়িঘড়ি করে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ঝিকরগাছা পৌর মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন নেতার সুবিধার্থে তিনি রাস্তাটি দরপত্র আহ্বানের আগে নির্মাণ করেননি। বরং স্থানীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে এক শ্রেণীর লোক মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। টেন্ডারের আগেই নিজে নিজে নির্মাণ কাজ করাটা আইনসিদ্ধ কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার স্বার্থে স্থানীয় লোকজনের দাবির মুখে অনেক সময় এগুলো করতে হয়। উল্লেখ্য, গত ৬ জুন প্রকাশিত ঝিকরগাছা পৌরসভার বিজ্ঞপ্তিটিতে মোট ৮ গ্রুপ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে ৪ নং গ্রুপের কাজটি ছিল পুরন্দপুর কাঁচারাস্তা নির্মাণ। এ ছাড়া ৬ নং গ্রুপে পৌর কবরস্থান রোড সংস্কার ও সিলকোট এবং ৮ নং গ্রুপে ঝিকরগাছা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের গ্রাউন্ডফ্লোর কলাম, ফ্লোরবিম ও রুফস্লাব নির্মাণকাজ। এ কাজ দুটি অন্য ঠিকাদার পেলেও ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে মেয়র নিজেই সেটি করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। কাজ দুটির জন্য নির্বাচিত ঠিকাদার সেলিম রেজাকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ দুটি ছেড়ে দেয়ার জন্য তাকে চাপ দেয়া হয়নি। তবে মেয়র জামাল নিজেই কাজটি করার বিষয়ে তার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
×