ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বেগুনি ভুট্টা

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৪ আগস্ট ২০১৮

 ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বেগুনি ভুট্টা

বেগুনি ভুট্টা অনেক দেশে নীল বা লাল ভুট্টা নামেও পরিচিত। এ ভুট্টার দানা বা কার্নেল গাঢ় বেগুনি রঙের হওয়ায় একে পারপাল ভুট্টা বলে। পেরু, বলিভিয়া, ইকোয়েডর, চিলি প্রভৃতি দেশে বেগুনি ভুট্টা হতে বেগুনি রঙের এক ধরনের স্বাস্থ্যকর পানীয় তৈরি হয় যার নাম ছিছিয়া মোরাডা। ভুট্টার আটা হতে বেগুনি রঙের রুটি, কেক, পুডিংও তৈরি করা যায়। এ বেগুনি ভুট্টার এ্যান্থোসায়ানিন ২০ শতাংশ ক্যান্সারের সেলকে ইন- ভিট্রো অবস্থায় মেরে ফেলতে পারে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও ফুলে যাওয়া এ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. জামিলুর রহমান ২০১৫ সাল হতে বেগুনি ভুট্টার জাত উদ্ভাবনে গবেষণা করে আসছেন। দীর্ঘ গবেষণার ফলস্বরূপ বর্তমানে ড. জামিলুর রহমান বেগুনি ভুট্টার কিছু ফলনশীল অগ্রসারী লাইন উদ্ভাবন করেছেন। এ সমস্ত বেগুনি ভুট্টার দানা গাঢ় বেগুনি রঙের এবং এমনকি সম্পূর্ণ ভুট্টা গাছের রঙ গাঢ় বেগুনি বর্ণের হয়। এমনকি ভুট্টার পুরুষ ফুল (টাসেল) এবং স্ত্রী ফুলও (কবস) সম্পূর্ণ বেগুনি বর্নের হয়। এ বেগুনি ভুট্টার ফলন হেক্টরপ্রতি ৫ থেকে ৬ টন। রবিতে ১১০-১১৫ দিনে ও খরিপে ৯০-৯৫ দিনে ভুট্টা সংগ্রহ করা যায়। এ বেগুনি ভুট্টার চাষ প্রণালী অন্য ভুট্টার মতোই একই রকম। ড. জামিলুর রহমান আশা করছেন ২০১৯ সালের মধ্যে আগ্রহী কৃষকের মধ্যে এ বেগুনি ভুট্টার বীজ সরবরাহ করতে পারবেন। এ ব্যাপারে প্রফেসর ড. জামিলুর রহমান জানান, বেগুনি বা পারপাল ভুট্টার রঙের জন্য দায়ী এক শ্রেণীর পানিতে দ্রবীভূত পলিফেলোলিক জাতীয় ফ্লাভিনায়েড শ্রেণীর এন্থোসায়নিন যৌগ যা এ জাতীয় ভুট্টাকে অন্য ভুট্টা হতে স্বতন্ত্র, দৃষ্টিনন্দন, আকর্ষণীয় ও স্বাস্থ্যকর করেছে। সায়ানিডিন-৩-গ্লুকোসাইড নামক এক প্রকার রাসায়নিক রঞ্জক বেগুনি ভুট্টার প্রধান উপাদান। তিনি আরও জানান, গবেষণায় দেখা গেছে ১০০ গ্রাম বেগুনি ভুট্টার আটায় প্রায় ৬২.৭ মি.গ্রা. এন্থোসায়ানিন পাওয়া যায়। যেসব ভুট্টার বীজের আবরন ও এলিয়োরন বেগুনি রঙের হয় সে সব ভুট্টাতে অধিক পরিমাণে ১৪১.৭ মি.গ্রামেরও বেশি এ্যান্থোসায়ানিন থাকে। দক্ষিণ আমেরিকা মোরাডা নামক বেগুনি ভুট্টার স্থানীয় জাতে প্রতি ১০০ গ্রাম আটাতে ১৬০০ মি.গ্রাম পর্যন্ত এন্থোসায়ানিন পাওয়া গেছে। উদ্ভিদজাত খাবারের পুষ্টি উপাদানের মধ্যে এন্থোসায়ানিন একটি অন্যতম আকর্ষণীয় পুষ্টি উপাদান যার রয়েছে এ্যান্টি-অক্সিডেন্টসহ অনেক স্বাস্থ্যকর গুণাগুণ। যার কারণে যুগ যুগ ধরে রাজা-বাদশাসহ পুষ্টি সচেতন মানুষেরা বেগুনি, নীল, কমলা, লালসহ নানা রঙের এন্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ খাবার খুঁজে বেড়ায়। এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ছাড়াও এ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ খাবারে রয়েছে এ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি, এ্যান্টি-ক্যান্সার, এ্যান্টি-মাইক্রোর্বিয়াল ও এ্যান্টি-এজিং গুণাবলী। এন্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ খাবার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, স্থুলতা কমায়, ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ রাখে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, স্নায়ু-ক্ষয় জনিত রোগ কে দমন রাখে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও তারুণ্য ধরে রাখে। শরীরে তৈরী হওয়া বিভিন্ন বিক্রিয়ক অক্সিজেন বা মুক্ত মূলকের ক্ষতিকর প্রভাব হতে এ্যান্থোসায়ানিন জাতীয় খাবার দেহকে রক্ষা করে, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও দেহকে দীর্ঘ মেয়াদী রোগ হতে রক্ষা করে। এ ব্যাপারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ভুট্টা একটি বহুমুখী শস্যে। পুষ্টিমানে ভুট্টা অনেক শস্যের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর। বেগুনি ভুট্টার খাবার মান বিশেষ করে আমিষ ও এ্যান্থোসায়ানিনের পরিমাণ বেশি থাকায় জাতীয় পুষ্টি নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যে ভাল ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করা যায়। তাই বেগুনি ভুট্টার উপযুক্ত জাত উদ্ভাবন ও কৃষক পর্যায়ে এর সম্প্রসারণ একান্ত প্রয়োজন। -বশিরুল ইসলাম, শেকৃবি থেকে
×