ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আকবরের মৎস্য খামার

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৪ আগস্ট ২০১৮

  আকবরের মৎস্য খামার

৩৬টি পুকুর নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই বৃহত মৎস্য খামার। ২০ হেক্টর জমির ওপর এর অবস্থান। অন্য রকম এক নিঃসর্গ। যতদূর চোখ যাবে শুধু পুকুর আর পুকুর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বেরিয়ে কল্যাণপুর হর্টিকালচার হয়ে নয়াগোলা-আমনুরা জংশন সড়কের ধারে গড়ে উঠেছে এই খামার। অঞ্চলটির পূরোটাই বরেন্দ্র ভূমির মধ্যে। খরার সময় মাঠঘাট ফেটে চৌচির হলেও এই মৎস্য খামারের কোন ক্ষতি হয় না। বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। পুরোপুরি পরিকল্পিত এক উদ্যোগ। বিনিয়োগ আর মুনাফা তুলে আনার সুদূরপ্রসারী এক হিসাব নিকাশ সর্বক্ষণ তাড়া করে নিয়ে বেড়াচ্ছে উদ্যোক্তাকে। গত তিন বছর ধরে চলছে এই কর্মযজ্ঞ। মাছ চাষের বিষয়টি এখন আর ছোট করে দেখা হচ্ছে না। কিংবা ছোট পরিসরে নেই। মাছ চাষ এখন বড় বড় বাণিজ্যিক উদ্যোক্তার হাতে চলে এসেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা রোড়ের বুলনপুরের বিশাল খামারটির নাম নবাব মৎস্য খামার। তিনি এই অঞ্চলের একজন বড় শিল্পপতি। তার একাধিক আধুনিক চাল মিল, আটার মিল ও তেলের ডিপো রয়েছে। এখন তার পুরো মনোযাগ মাছের খামারে। অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ঘুরেছেন দেশ বিদেশের নানান খামারে। তিনি একই সঙ্গে কৃষি খামারের মাটি ব্যবহার করেছেন কৃষি কাজেও। তাই রোপণ করেছেন দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গাছ গাছালি। মাছের সঙ্গে খামারটি ফুল ফল শাক সবজির অনন্য এক কৃষি খামার হয়ে উঠেছে। স্বীকৃতি স্বরূপ এ বছর জাতীয় মৎস্য পুরস্কার পেয়েছেন আকবর। মালিক আকবর হোসেন জানান তিনি পুকুরের পাড়ে মাল্টা চাষ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মাল্টা গাছের সংখ্যা প্রায় চার শ’। ড্রাগন গাছ রয়েছে ছয়শ’, আছে বিভিন্ন জাতের সারি সারি পেপে গাছ। এক পাশে লাগিয়েছেন উন্নত জাতের কলা। গত বছর তিনি দুই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন। রয়েছে নিজস্ব ফিডমিল। ফিডেমিলের পাশের জমিতে রয়েছে সুন্দর এক কবুতরের খামার। বিশাল এই খামারে স্থায়ী শ্রমিক কাজ করছে প্রায় ২২ জন। এর বাইরেও দিনমজুর রয়েছে অর্ধশত। মাছ চাষে তিনি নতুন অনুশীলন শুরু করেছেন। সব পুকুরেই অক্সিজেন দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক মেশিন। পূর্বে বাশ দিয়ে পানি পেটানো হতো। এক কথায় আধুনিক এই মৎস্য খামার তৈরিতে ও আধুনিক উপায়ে খাদ্য সরবরাহে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আকবর বলেন, ভিয়েতনাম থেকে এক সময় কোটি কোটি টাকার মাছ আমদানি করতে হয়েছে। এখন আর প্রয়োজন পড়বেনা। আমরা দেশের মাছ চাহিদা পূরণে সফলতা পেয়েছি। আকবর হোসেনের মতো মাছ চাষীরা এখন প্রস্তুত মাছ রফতানিতে। আর এই কারনে বাংলাদেশ মাছ চাষে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পাঙ্গাস মাছ থেকে ফিশ ফিলেট তৈরি করে ইউরোপে রফতানি শুরু করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বিবেচনায় মাছ উৎপাদনে এই দেশ এখন রোল মডেল। বড় বড় বিনিয়োগকারী নতুন নতুন প্রযুক্তি ও কৌশলকে যুক্ত করে যা ব্যবহার করছেন তাই তিনি ব্যবহার করবেন। আকবর মাছ চাষে বিপ্লব সাধনের জন্য রাতদিন কাজ করছেন। -ডি.এম তালেবু নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে
×