ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহহীনের স্বপ্নের নীড় আশ্রয়ণ প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৪ আগস্ট ২০১৮

গৃহহীনের স্বপ্নের নীড় আশ্রয়ণ প্রকল্প

শেখের বেটি হামাক বাড়ি বানে দিছে, আল্লাহ তাক হাজার বছর বাছি থুক। স্বপ্নের নীড় প্রাপ্তির আনন্দে আত্মহারা হয়ে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের ভিক্ষুক বিধবা ছপিয়া বেওয়া (৬১)। কারণ ‘আসমানি’ এর মতো বসতঘরে খড়তাপ, বৃষ্টি ভেজা রাত আর শীতের প্রকোপে কুকড়িয়ে কেটেছে তার কয়েক যুগের জীবন প্রবাহ। এটি পরিবর্তনের স্বপ্ন থাকলেও সম্ভব ছিল না। তবে আজ সেই সাধ পূরণের পথে। সরকারের দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তার মতো প্রায় তিনশত গৃহহীন দরিদ্রের পরিবার ঘর পাওয়ায় সকলেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মঙ্গলময় জীবনের প্রার্থনা করেন। জানা যায়, বর্তমান সরকারের বিশেষ প্রতিশ্রুতিতে ২০১৭-১৮অর্থ বছরের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে জমি আছে যার, ঘর নাই তার’ শীর্ষক প্রকল্পে গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এই প্রকল্পের অওতায় সৈয়দপুর উপজেলায় দরিদ্র ভূমিহীন পরিবার বাছাই করে একটি ঘর ও একটি ল্যাট্রিন নির্মাণের জন্য ১লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এতে উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৩শ’ জনকে বাছাই করা হয়। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী অফিসার এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার। গৃহহীনদের তালিকা তৈরি করেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ। যাদের এক শতাংশ থেকে ১০শতাংশ জমি রয়েছে, কিন্তু ঘর নেই বা থাকলেও তা বসবাসের অনুপযোগী এমন ব্যক্তিরা এই প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করবেন। এছাড়া দুঃস্থ, অসহায় মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা মহিলা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী, উপার্জনে অক্ষম, ভিক্ষুক ও অতি বার্ধক্য এবং পরিবারের আয় উপার্জনক্ষম সদস্য নেই তারা কেবল এমন সুবিধা পাবেন। এতে সৈয়দপুর উপজেলায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা ৩ শতটি পরিবারের ঘর নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রতিটির জন্য এক লাখ টাকা। এতে এক ইউনিয়নে ৬০টি করে ৫ ইউনিয়ন মিলে ৩ শত ঘর নির্মাণ করা হবে। যার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এর তদারকিতে রয়েছেন পিআইও (সদস্যসচিব), উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও পিআইসিসহ ৫ সদস্যর কমিটি। সরেজমিনে দেখা যায়, এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের সরকারপাড়ার রমজান আলীর স্ত্রী আকিমন নিছা। ৪ সদস্য নিয়ে বসবাস করছেন জরাজীর্ণ একটি কুঁড়েঘরে। এতেই কাটে তাদের কয়েক যুগের দাম্পত্য জীবন। আকিমন নিছা স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এমন একটি ঘর পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত। তিনির বলেন, শেখ হাসিনা আমাদের দিকে নজর দেয়ায় এমন একটি ঘর পেয়েছি। এজন্য কাউকে কোন টাকা দিতে হয়নি। পাইকার পাড়া গ্রামের এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী সদস্য আজহারুল ইসলামের অনুপস্থিতিতে তার ছেলে এরশাদের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, ঘরের অবকাঠামোগুলো উন্নত ইতোমধ্যে পিলার স্থাপন, ইটের সিমানা প্রাচির, বালু সিমেন্ট খোয়া দিয়েছে। সেগুলো দিয়ে ঘর নির্মাণের কাজ করছে সরকার। এরজন্য কোন ব্যায় হয়নি। তারমতো গৃহহীন সদস্য নেবরু রায়, রাবেয়া, মুক্তা বেগম, হৈমন্ত চন্দ্র, চেলু মামুদসহ সুবিধাভোগী ৩ শতাধিক সদস্য একই কথা বলেন। এরজন্য দোয়া করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে। খাতামধুপুর ইউপির চেয়ারম্যান জুয়েল চৌধুরী জানান, এর আওতায় ৬০ গৃহহীনকে ২৯৭ বর্গফুটের সেমিপাকা ঘর, প্রতিটি পরিবার টিনশেডের চারচালার একটি ঘর, একটি ল্যাট্রিন তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ঘর নির্মাণ কমিটির সদস্য সচিব মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ৩শ’ গৃহহীনকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। যার জন্য পরিবার প্রতি ১ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। কমিটির মাধ্যমে ঘর নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হচ্ছে। আমরা দফায় দফায় গৃহহীনদের সঙ্গে এ নিয়ে মতবিনিময়ও করেছি। উপজেলা আশ্রয়-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন টাক্সফোর্সের সভাপতি ও সৈয়দপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ বজলুর রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্পের গৃহহীনদের গৃহনির্মাণ বাবদ ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। প্রেরিত প্ল্যান, ডিজাইন ও প্রাক্কলন মোতাবেক গুণগতমান বজায় রেখে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুর রহীম খাতামধুপুর ইউনিয়নের নির্মাণাধীন ঘরগুলো পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। -এম আর মহসিন, সৈয়দপুর থেকে
×