ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এক দশকেরও বেশি সময় কাজ করেছেন মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসে ॥ হাতিয়ে নিয়েছেন গোপন তথ্য

মার্কিন দূতাবাসে রুশ গুপ্তচর

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৪ আগস্ট ২০১৮

 মার্কিন দূতাবাসে রুশ গুপ্তচর

মস্কোতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে সন্দেহভাজন রাশিয়ান গুপ্তচরকে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটস রিজিওনাল সিকিউরিটি অফিস (আরএসও) চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ওই নারী গোপনে কাজ করে আসছিলেন। প্রতি পাঁচ বছরে একবার আরএসওর পর্যালোচনাগুলো দেখার সময় বিষয়টি ধরা পড়ে। খবর গার্ডিয়ান ও এএফপির। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হচ্ছে সিক্রেট সার্ভিস। এজেন্সিটি ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির অধীনে কাজ করে। বিশ্বব্যাপী এর ১৫০টির বেশি দফতর রয়েছে। সন্দেহভাজন রুশ গুপ্তচরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন সাড়া দেননি। এক সূত্র দাবি করেছে, ওই নারী তার কাজের সুবাদে সিক্রেট সার্ভিসের ইন্টারনেট, অভ্যন্তরীণ ই-মেইল ও নকল টাকা ট্র্যাকিং ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারতেন। এফএসবির সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘন ঘন হত। তাদের সঙ্গে ওই নারীর অসংখ্যবার বৈঠক ও যোগাযোগ হয়েছে। পররাষ্ট্র দফতরের এজেন্টরা ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সিক্রেট সার্ভিসের ওই গুপ্তচরের বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করেন। অন্তত নয়জন উচ্চপদস্থ সিক্রেট সার্ভিস কর্মকর্তা বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন। একই সময়ে সিআইএ ও এফবিআইয়ের পৃথক তদন্ত চলছিল। আশা করা হচ্ছিল, সিক্রেট সার্ভিসের নেতৃত্বে কোন একটি কাজ শুরু হবে। তারা তা করতে ব্যর্থ হন। ওই গুপ্তচর সিক্রেট সার্ভিসের অফিসিয়াল মেইল সিস্টেমের অধিকাংশ ডাটাবেজ ধ্বংস করে দিয়েছেন। যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট, তাদের স্ত্রীদেরসহ হিলারি ক্লিনটনের বর্তমান ও ভবিষ্যত কার্যতালিকাও রয়েছে। তিনি নজরদারি ছাড়া গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি নোটিস দিয়েছিল। এটি স্পষ্ট নয় যে কত পরিমাণ তথ্য তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন। এটিও স্পষ্ট নয় যে একজন রুশ ব্যক্তিকে এ ধরনের পদে কেন নিয়োগ দেয়া হল। তাকে নিয়োগের সময় কি ধরনের পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল তাও জানা যায়নি। জাতিগত রুশ ওই নারীকে মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিয়েছিল। যেজন্য সংস্থাটির ইন্টারনেট ও ই-মেইল সিস্টেমে তার প্রবেশাধিকার ছিল। তিনি প্রেসিডেন্ট ও ভাইস- প্রেসিডেন্টের কার্যসূচীসহ অতি গোপনীয় বিষয়গুলোতে সহজেই প্রবেশ করতেন। ২০১৬ সালে সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসেবে তার নামটি উঠে আসে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটস রিজিওনাল সিকিউরিটি অফিসের (আরএসও) দুই তদন্তকারীর দ্বারা পরিচালিত একটি নিয়মিত নিরাপত্তা তদন্তের পর তার ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়। ওই দুজন তদন্তকারী প্রমাণ করেন যে, ওই নারী রাশিয়ার প্রধান নিরাপত্তা সংস্থা এফএসবির সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত ও অননুমোদিত বৈঠক করেছেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আরএসও বিষয়টি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। তবে সিক্রেট সার্ভিস এজন্য নিজেরা কোন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত পরিচালনা করেনি। এর পরিবর্তে তারা সিদ্ধান্ত নেয় তাকে গোপনে বরখাস্ত করার। যাতে মাস শেষে ওই সন্দেহভাজন গুপ্তচর চলে যাওয়ার সুযোগ পায়। কোন রকম সম্ভাব্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে তারা পড়তে চায়নি। মস্কোর মার্কিন দূতাবাসে ১২০০ কর্মী রয়েছেন। যাদের মধ্যে ৭৫০ জনের বেশি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ওই গুপ্তচর নারীর বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়ে এবং তার বরখাস্ত হওয়া নিয়ে সিক্রেট সার্ভিসকে প্রশ্ন করা হয়। সংস্থাটি তার ভূমিকা নিয়ে নিন্দা করার চেষ্টা করে মাত্র। তারা অস্বীকার করেনি যে, তাকে একজন সম্ভাব্য গুপ্তচর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ইউএস সিক্রেট সার্ভিস স্বীকার করে যে, সব ফরেন সার্ভিস ন্যাশনালস (এফএসএন) যারা আমাদের মিশনে প্রশাসনিক অথবা অন্য ধরনের সেবা প্রদান করেছেন তারা বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। বিশেষ করে রাশিয়ার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। সব এফএসএনরা সেই অনুযায়ী পরিচালিত হন যাতে সিক্রেট সার্ভিস ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্বার্থ সবসময় সুরক্ষিত থাকে। এর ফলে দায়িত্বগুলোর মধ্যে সীমিত অনুবাদ, বিশদ ব্যাখ্যা, সাংস্কৃতিক নির্দেশিকা, যোগাযোগ ও প্রশাসনিক সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এদের কাজ ছিল সিক্রেট সার্ভিসের উন্নতি বিধান করা। কোন কোন সময় যে কোন সিক্রেট সার্ভিসের অফিসে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার জন্য যে কোন সংস্থার কাছে এফএসএন ব্যক্তিদের পাঠানো বা ন্যস্ত করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গোয়েন্দা বা কর্মকর্তা সংক্রান্ত কোন অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করবে না। আমাদের কাছে এই অভিযোগের বিষয়ে কোন তথ্য নেই। এটি জানিয়েছে, তারা মার্কিন সরকারের কর্মীদের বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। মার্কিন সরকারের সঙ্গে কাজ করার কারণে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা তাদেরকে টার্গেট করতে পারে। যখন আমরা নিরাপত্তা সংক্রান্ত নির্দেশনা লঙ্ঘনকারী কোন একজন কর্মীকে শনাক্ত করতে পারি তখনই আমরা উপযুক্ত সময়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করি।
×