টানা চার দশক ক্ষমতায় থাকা রবার্ট মুগাবের পতনের পর দায়িত্ব নেয়া ইমারসন মানানগাগওয়া জিম্বাবুইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বলে দেশটির নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। নির্বাচনের তিন দিন পর বৃহস্পতিবার ১০টি প্রদেশের ফল ঘোষণা শেষে জানু-পিএফ পার্টির প্রার্থী মানানগাগওয়া ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বলে জানিয়েছে জিম্বাবুইয়ের নির্বাচন কমিশন। প্রতিদ্বন্দ্বী মুভমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাটিক চেঞ্জ (এমডিসি) জোটের প্রার্থী নেলসন চামিসা ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাওয়ায় মানানগাগওয়া দ্বিতীয় দফার ভোট এড়াতে পারলেন। খবর বিবিসির।
ফল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের মঞ্চে বিরোধী প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ জানাতে থাকলে পরে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে নেয়। এমডিসি জোটের চেয়ারম্যান এ ফল প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের দেয়া ফল যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ফল ঘোষণার পর সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন মানানগাগওয়া। টুইটারে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ রায়কে ‘নতুন শুরু’ হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার আগ পর্যন্তও চামিসা নিজেকে বিজয়ী বলে দাবি করে আসছিলেন। ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি ‘ফল বদলে দেয়ার’ চেষ্টা করছে বলে বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার আগেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। আমরা এটি মেনে নেব না, বলেছিলেন তিনি। ফলে ‘কোন ধরনের চাতুরি’ হয়নি বলে জানিয়েছে জিম্বাবুইয়ের নির্বাচন কমিশন (জেডইসি)। সোমবারের সাধারণ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে ছাড়াও পার্লামেন্টের সদস্য ও স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা ঠিক করতে ভোট দিয়েছে জিম্বাবুইয়ের নাগরিকরা। মুগাবে পরবর্তী এ নির্বাচনে ভোট দিতে নিবন্ধন করেছিলেন ৫০ লাখেরও বেশি ভোটার। ভোটের হারও ছিল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৭০ শতাংশের ওপর। পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলে জানু-পিএফ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছে জেডইসির এমন ঘোষণার পর থেকেই হারারাজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু করে বিরোধী জোটের সদস্যরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
বিক্ষোভকারীদের পাথরের জবাবে সৈন্যরা পাল্টা গুলি ছুড়লে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দেশটিতে অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। সঙ্কট নিরসনে সরকার বিরোধী প্রার্থী চামিসার সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানিয়েছেন মানানগাগওয়া। সহিংসতার পেছনে কারা ছিল, তাদের আইনের আওতায় আনতে স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ২১০ আসনের মধ্যে জানু-পিএফ ১৪৪টি ও বিরোধী এমডিসি ৬৪টি আসনে বিজয়ী হয়েছে বলে জানিয়েছে জেডইসি। এর বাইরে ক্ষমতাচ্যুত মুগাবের ঘনিষ্ঠদের বানানো দল ন্যাশনাল পেট্রিয়াটিক ফ্রন্টও একটি আসনে বিজয়ী হয়েছে। জানু-পিএফ জিতলেও আগের তুলনায় তাদের ভোট কমেছে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে মুগাবের অধীনে তারা পার্লামেন্টের ১৬০টি আসনে বিজয়ী হয়েছিল, সেবার এমডিসির আসন ছিল ৪৯টি।
