ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বিআরটিএতে দুই বছর ধরে ম্যাজিস্ট্রেট নেই

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৪ আগস্ট ২০১৮

  চট্টগ্রাম বিআরটিএতে দুই বছর ধরে ম্যাজিস্ট্রেট নেই

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে বিআরটিএর কার্যক্রম গত দুই বছর ধরে চলছে ম্যাজিস্ট্রেটবিহীন। ৩ জন বেঞ্চ সহকারী নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট দেয়া হয়নি। ফলে অবৈধ যানবাহন চলাচল রোধে কার্যকর ব্যবস্থা অনুপস্থিত। বিআরটিএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বৃহত্তর চট্টগ্রামজুড়ে দুই লক্ষাধিক বিভিন্ন শ্রেণীর যানবাহন চলাচল করে থাকে। এরমধ্যে তাদের হিসেব অনুযায়ী ১৫ হাজার যানবাহন চলছে অবৈধভাবে। এসব যানবাহনের যেমন ফিটনেস নেই, তেমনি এসব থেকে কোন ট্যাক্সও পাওয়া যায় না। ফলে বিপুল অঙ্কের অর্থের রাজস্বও হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বিআরটিএ সূত্র আরও জানায়, সরকারী যানবাহনগুলো ট্যাক্স ফ্রি। কিন্তু ফিটনেস বাধ্যতামূলক। আবার প্রতিরক্ষা বাহিনীর যানবাহনগুলোর জন্য ট্যাক্স ও ফিটনেস সংস্থার আওতামুক্ত। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিভিন্ন শ্রেণীর চলাচল অনুপযুক্ত লক্কড়ঝক্কড় মার্কা যানবাহনও চলাচল করছে। এগুলোর মধ্যে চার সহস্রাধিক রয়েছে অটোরিক্সা ও পনের শতাধিক রয়েছে অটোটেম্পো। অটোটেম্পোর মধ্যে সাত শতাধিক চলছে রোড পারমিট ছাড়াই। কেন এই অব্যবস্থাপনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, দেশের ৬৪ জেলায় বিআরটিএর কার্যালয়গুলো এভাবেই চলছে। এই সংস্থার পক্ষ থেকে বছরে গড়ে দেড় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব যোগান দেয়া হয়। অথচ, প্রয়োজনীয় জনবল এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়াদির ব্যবস্থা করা গেলে রাজস্ব যোগান দ্বিগুণে যে উন্নীত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। উল্লেখ করা যেতে পারে, ঢাকায় মেট্রোসহ সংস্থার তিনটি এবং অন্যান্য জেলাগুলোর মধ্যে মাদারীপুর ও শরীয়তপুর মিলে একটি এবং ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় মিলে ৬৪ জেলায় সংস্থার মোট ৬৪টি কার্যালয় চালু রয়েছে। এদিকে দিন গড়ানোর পাশাপাশি দেশে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এসব যানবাহনের ফিটনেসসহ অন্যান্য কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে আছে। সূত্র জানায়, রেল চলাচলে যাত্রীদের টিকেট পরীক্ষা- নিরীক্ষার ক্ষমতা রয়েছে একজন টিকেট চেকারের। পাশাপাশি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্টেরও ক্ষমতা রয়েছে যানবাহনের যাবতীয় কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে। অথচ, বিআরটিএর কোন কর্মকর্তার ক্ষেত্রে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা -নিরীক্ষার কোন ক্ষমতা নেই। একমাত্র যখন মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয় তখন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বিআরটিএ কর্মকর্তারা এ ধরনের কার্যক্রম চালানোর অধিকারী হন। অপর একটি সূত্র জানায়, বিআরটিএর সদর অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনৈতিক কিছু কার্যক্রমের ফলশ্রুতিতে সংস্থার আঞ্চলিক দফতরগুলোও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে পোস্টিং বাণিজ্যসহ অন্যান্য নানাভাবে দুর্নীতি গেঁড়ে বসেছে। এদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পরিবহন সেক্টরের মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর সমিতির নেতারাও। সে এক বেহাল অব্যবস্থা। যার ফলে দেশে নিরাপদ যানবাহন চলাচল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হলেও সুফল মিলে না। এর মূল কারণ হিসেবে সদর দফতরের কর্ণধারদের স্বার্থ রক্ষা ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হচ্ছে। সূত্র মতে, দেশের নিরাপদ যানবাহন চলাচল ও সড়ক ব্যবস্থার জন্য দাবির বিপরীতে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে এই প্রেক্ষিতে সময় এসেছে সমুদয় অব্যবস্থাপনা দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থার প্রয়োগ। অন্যথায় সাময়িকভাবে সমস্যার সমাধান হয়তো হবে। কিন্তু স্থায়ী নিরসনের বিষয়টি সুদূর পরাহতই থেকে যাবে।
×