ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একমত পোষণ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দিনে বন্ধ রাখা হলেও রাতে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়ার ঘোষণা

চরম জনদুর্ভোগ ॥ নিরাপত্তার অজুহাতে বন্ধ বাস মিনিবাস

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৪ আগস্ট ২০১৮

চরম জনদুর্ভোগ ॥ নিরাপত্তার অজুহাতে বন্ধ বাস মিনিবাস

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দরুন নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আকস্মিক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দেশের সব বাস মিনিবাস। এতে দুদিন ধরে রাজধানীর সঙ্গে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মূলত নিজেদের অপকর্ম ও অরাজকতার চিত্র ঢাকতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যেই হঠাৎ গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করেছে মালিক-শ্রমিকরা। এটা তাদের অন্য কৌশল। শিক্ষার্থীরা বৈধ বাস চলাচলে কখনই বাধা দেয়নি। দেবেও না। অন্যদিকে মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, পরিস্থিতি দেখে আজ শনিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পরপর দুদিন বাসমালিকরা পরিবহন বন্ধ রাখায় একেবারেই ফাঁকা রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ, গাবতলী ও গুলিস্তান কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। এসব টার্মিনালের সামনে দেখা গেছে শত শত যাত্রীর ভিড়। সবারই জিজ্ঞাসা, ‘বাস ছাড়বে কখন। জবাবে কিছুই বলতে পারছে না মালিক-শ্রমিকরা। সবাই বলছেন, ‘ওপরের মহলের নির্দেশে।’ প্রশ্ন উঠেছে, ওপরের মহল কারা। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বিকেলে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে ঘোষণা দিয়েছে, আপাতত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে দিনে বন্ধ রাখা হলেও রাতে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার সব যানবাহন চলাচল করবে। রাতেই মালিকরা মহাখালী টার্মিনালে অবস্থান করে বাসের টিকেট বিক্রি শুরু করেন বলেন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। এদিকে ঘোষণা ছাড়া গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে হাজার হাজার যাত্রী। বাইরে থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ও ঢাকা থেকে ঘরে যাওয়ার পথে আটকা পড়েছেন তারা। নগরীর সব টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় কী ধরনের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার তারা। শুক্রবার সকালে মহাখালী টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়তে দেখা যায়নি। এখানকার টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, নিরাপত্তা না থাকায় বাস চলাচল বন্ধ আছে। কেন বন্ধ জানতে চাইলে বলেছেন, ওপরের নির্দেশে। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মহাখালী থেকে উত্তরবঙ্গের ৭টি জেলাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও সিলেটের কোন বাস চলাচল করেনি। একই অবস্থা সায়েদাবাদেরও। এখান থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চলের বাস ছাড়ে। এখন এসব রুটের বাস বন্ধ রয়েছে। নরসিংদীতে মহাসড়কে ঢাকা-সিলেট রুটের কোন বাস চলাচল করছে না। এখানকার শ্রমিকরা বলছে, ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর হচ্ছে। এ অবস্থায় গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। মহাখালী টার্মিনাল থেকে কিশোরগঞ্জ রুটে চলাচলকারী অনন্যা পরিবহন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরানুর রশিদ তুহিন জনকণ্ঠকে বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করার প্রথম দিনেই তো বিমানবন্দর এলাকায় প্রায় একশত গাড়ি ভাংচুর করা হয়। তারপর শুধু যাত্রাবাড়ী এলাকাতেই ভাংচুর করা হয়েছে দুই শতাধিক গাড়ি। যেখানে আমার নিজেরই রয়েছে ৪টি। ঘোষণা না দিয়ে হঠাৎ কেন বন্ধ করা হলো জানতে চাইলে তুহিন বলেন, যেখানে মালিক-শ্রমিক-চালক ও যাত্রীর নিরাপত্তা নাই সেখানে কিসের ঘোষণা কিসের সমন্বয়। শিক্ষার্থীদের যেমন অধিকার আছে নিরাপদ সড়কের আমাদেরও তেমনই আছে। আমার যে গাড়িগুলো ভাংচুর করা হয়েছে সেগুলো চলাচল করত বাংলা একাডেমি ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স অফিসের স্টাফ গাড়ি হিসেবে। প্রত্যেকটা গাড়ির লাইসেন্স, ফিটনেস, ও অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও কেন হামলার শিকার হলো? কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি তো ছিল না। মহাখালীর বাস টার্মিনালে মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, বাসচালকরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে চাইছে না। শুধু চালকরা নয়, যাত্রীরাও নিরাপদ থাকছে না। এ কারণে ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মহাখালী টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, মালিক-শ্রমিকরা বিক্ষোভ সভা-সমাবেশ করছে। শ্রমিকরা তাকিয়ে আছে মালিকের দিকে। মালিকরা তাকিয়ে আছেন ঢাকা সড়ক পরিবহনের দিকেÑ যে সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে রাজধানীর সব বাস মিনিবাস। আর শ্রমিকরা নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইছেন। প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনের ঘোর বিরোধিতা করেও তির্যক মন্তব্য করেন কোন কোন শ্রমিক। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়েও ক্ষোভ এসব শ্রমিকের। আর এ কারণে শ্রমিকদের অনেকেই মিডিয়াকে দোষারোপ করেছেন। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য তারা নিজেদের দায়ী না করে পাবলিকের অসচেতনতার দিকেই আঙ্গুল তোলেন। হাসান নামের এক শ্রমিক বলেন, মহাসড়কের ওপর বাজার, পার্কিং বন্ধ করতে হবে। উঠিয়ে দিতে হবে লেগুনা-মাহেন্দ্র ও অটোরিক্সার অবৈধ স্ট্যান্ড। এসবের কারণে যানজট হয় আর তখনই এ্যাক্সিডেন্ট হয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাল্টায় এবার বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। কোন কর্মসূচী ডাকা না হলেও বাসমালিকরা বলছেন, সড়কে ভাংচুরের কারণে পরিবহন শ্রমিকরা বাস চালাতে চাইছেন না। অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, মালিকরা বাস নামাতে নিষেধ করেছেন। এদিকে শুক্রবার সকালে ঢাকার সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়তে দেখা যায়নি। যাত্রাবাড়ীতে এক দল পরিবহন শ্রমিককে সড়কে অবস্থান নিয়ে গাড়ি আটকাতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে চলাচলকারী ইউনিক পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক আব্দুল হক বলেন, নিরাপত্তা না থাকায় অঘোষিতভাবে বাস চলাচল বন্ধ আছে। সড়কে শ্রমিকদের অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, গাড়ি বন্ধ থাকায় তারা যাত্রাবাড়ীর সড়কে দাঁড়িয়ে আছে, এটা অবরোধ বা সে ধরনের কিছু নয়। সায়েদাবাদ থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চলের বাস ছাড়ে। এখন এসব রুটের বাস বন্ধ রয়েছে। নরসিংদীতে মহাসড়কে ঢাকা-সিলেট রুটের কোন বাস চলাচল করছে না। এখনও শ্রমিকরা বলছে, ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর হচ্ছে। এ অবস্থায় গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। এদিকে দুদিন বন্ধ রাখায় চরম দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রীরা। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার পাটুয়ভাংগার আবু তাহের বলেন, ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় রওনা হই। ঘর থেকে বের হয়েই দেখি বাস বন্ধ। বাধ্য হয়ে লেগুনায় আসি কাপাসিয়া, সেখান থেকে সিএনজিতে রাজেন্দ্রপুর, তারপর হলারে গাজীপুর। সেখান থেকে কখনও ট্রাকে, কখনও লেগুনায় আসি বিমানবন্দর। এখন আটকা পড়েছি। বাড়িতে কিভাবে ফিরব সেটাই বুঝতে পারছি না। শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন জেলার বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও বাসের দেখা পাননি। জরুরী প্রয়োজনে বেরিয়েও বিফল হয়ে অনেককে বাড়ির পথ ধরতে হয়েছে। কেউ কেউ বিকল্প পথে রওনা হলেও কাউকে কাউকে দেখা গেছে অনিশ্চয়তার মধ্যে বাসের অপেক্ষায় বসে থাকতে। মাহবুব বলেন, এনা কাউন্টারে এসে জানতে পারি বাস চলাচল বন্ধ। এই সুযোগে প্রাইভেটকার, অটোরিক্সা, লেগুনা, হলার ও এ্যাপসভিত্তিক পাঠাও ও উবার যাত্রীদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিয়েছে দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া। বিকেলে এ প্রতিনিধি পাঠাওয়ের একটি মোটরসাইকেল কল দেয়ার পর রেসপন্স করেও হাজির হয়নি চালক। পরে উবারের একটি প্রাইভেটকার চারশত টাকা ভাড়া মিটিয়ে তিনি বিমানবন্দর থেকে মহাখালী আসেন। সেখান থেকে হেঁটে অফিসে। শত শত যাত্রীকে এভাবে জিম্মি করে আদায় করা হয়েছে অস্বাভাবিক ভাড়া। শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও একমত পরিবহন সেক্টর ॥ এদিকে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে বাসমালিকরা সমর্থন করে বলে জানিয়েছেন বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। যদিও সড়কে নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালী টার্মিনালের দ্বিতীয় তলায় সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, এ পর্যন্ত চার শতাধিক গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। ৮টি গাড়ি পুড়িয়েছে। সে জন্যই যানবাহন নামছে না। আমরা যখন সড়ক নিরাপদবোধ করব, তখন থেকে গাড়ি নামাব। এটা আমাদের আনুষ্ঠানিক কোন কর্মসূচী নয়। এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা আইন মেনে চলার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। আইনানুযায়ী দোষীদের যেই শাস্তি হোক আমরা মেনে নেব। নতুন আইনকে আমরা স্বাগত জানাই। কবে নাগাদ গাড়ি চালাবেন জনকণ্ঠের এ প্রশ্নের জবাবে মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ্ বলেন, আন্দোলন তো এখন আর শিক্ষার্থীদের হাতে নেই। তাদের সব দাবি তো মেনে নেয়া হয়েছে। এখন ওদের ঘরে ফেরার সময়। এখন কেন রাস্তায়? আসলে এখন আন্দোলনকারীদের ওপর ভর করেছে শিবির ও ছাত্রদল। তারাই নাশকতা করছে। এ অবস্থায় গাড়ি চালানোর নিরাপদবোধ করতে পারছেন না মালিক-শ্রমিকরা। গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বেশ কিছু গাড়ি ভাংচুর হয়। সেদিনই হাসিমুখে ভারতের একটি সড়ক দুর্ঘটনার উদাহরণ টেনে বক্তব্য দিয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়েন পরিবহন শ্রমিকদের নেতা নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। পাঁচ দিন পর বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে তাদের ঘরে ফেরার প্রত্যাশা প্রকাশের পরদিন শুক্রবার সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন মালিক-শ্রমিকরা। পরিবহন মালিক কিংবা শ্রমিক সংগঠনগুলোর কোন ঘোষণা ছাড়াই বাস চলাচল বন্ধের কারণে সারাদেশে চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার পাঠানো খবর- নারায়ণগঞ্জ ॥ শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে সকল প্রকার গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। শুক্রবার সকাল থেকে মালিক ও শ্রমিকরা গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এদিকে কোন রকম আগাম ঘোষণা ছাড়াই গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। এদিন নারায়ণগঞ্জ টার্মিনালসহ জেলার বিভিন্ন বাস স্টেশনে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায়। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক যাত্রীকে বিকল্প ব্যবস্থায় ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে হয়েছে। আর এই সুযোগে রিক্সা ও সিএনজি অটোরিক্সা চালকরা দ্বিগুণ বা তিনগুণের বেশি ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে। চট্টগ্রাম ॥ নিরাপদ সড়কের দাবিতে শুক্রবার ছাত্রদের কোন অবস্থান কর্মসূচী ছিল না। কিন্তু তারপরও অনেকটা যানবাহনশূন্য ছিল চট্টগ্রাম নগরীর সড়কগুলো। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়িসহ সকল মহাসড়কে যাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। শ্রমিক সংগঠনগুলো বলেছে, কোন কর্মসূচী নেই। বিষয়টিকে অঘোষিত ধর্মঘট হিসেবে দেখছেন নাগরিকরা। শুক্রবার সকালে কিছু যানবাহন দেখা গেলেও বেলা ১১টার পর থেকে সড়কে যান চলাচল কমতে থাকে। দুপুরের পর আরও কমে যায়। এর ফলে নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্পটে শত শত যাত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। গণপরিবহন না থাকায় তারা দুর্ভোগে পড়েন। সিএনজি অটোরিক্সাও কম চলাচল করেছে। যা চলেছে তার ভাড়া বেশি। সন্ধ্যার পরে যান চলাচল কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাজশাহী ॥ নিরাপত্তহীনতার কারণে রাজশাহী থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। বিভিন্ন জায়গায় বাস ভাংচুরের আশঙ্কা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি রক্ষায় শুক্রবার সকাল থেকে রাজশাহী থেকে কোন বাস ছেড়ে যায়নি। খুলনা ॥ খুলনা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখেছে মালিক-শ্রমিকদের সংগঠন। যানবাহন ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার দাবিতে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। এতে ঢাকাসহ অন্যান্য দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বেনাপোল ॥ ঢাকায় স্কুল শিক্ষার্থীদের গণহারে পাবলিক পরিবহনের কাগজপত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করার ঘটনায় যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। ফলে ভারত থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ফেরত আসা পাসপোর্টে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। এদের মধ্যে অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বেশি। তবে শ্রমিকরা বলছেন, স্বেচ্ছায় তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। চুয়াডাঙ্গা ॥ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির দাবিকৃত চাঁদার টাকা পরিশোধ না করায় শহরের ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে না দেয়ায় শুক্রবারও দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে পরিবহন ধর্মঘট। চুয়াডাঙ্গা পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে গোটা জেলা স্থবির হয়ে পড়ে। যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হয়েছে। কুড়িগ্রাম ॥ সড়ক ও মহাসড়কে পরিবহনের নিরাপত্তার দাবিতে কুড়িগ্রামে বাস ও মিনিবাসসহ দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে কুড়িগ্রাম জেলার সঙ্গে সকল রুটে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রংপুর ॥ দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে নিরাপত্তার অভাবের অজুহাতে রংপুরে সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে শ্রমিকরা। শুক্রবার সকাল থেকে জেলার কোন রুটেই বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। কাদের নির্দেশে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। নওগাঁ ॥ শুক্রবার সকাল থেকেই নওগাঁ থেকে দূরপাল্লার সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিক শ্রমিকরা। হঠাৎ করেই গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রী। তবে পরিবহনগুলোর টিকেট কাউন্টার খোলা রয়েছে। জামালপুর ॥ সারাদেশের ন্যায় শুক্রবার সকাল থেকে জামালপুরের বাস মালিক ও শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পাল্টা এ ধর্মঘটের কারণে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। অঘোষিত এই ধর্মঘটের কারণে শুক্রবার ভোর থেকে জামালপুর বাস টার্মিনাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাত্রীবাহী কোন বাস চলাচল করছে না। বাসের টিকেটের সকল কাউন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাস ধর্মঘটের কারণে দূরপাল্লার সাধারণ যাত্রী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দূরপাল্লার বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের দাবি, নিরাপত্তার স্বার্থে শুক্রবার সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর থেকে দূরপাল্লার কোন রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। এছাড়াও বিক্ষোভ করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রী। পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, বাস ও চালকদের নিরপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। জয়পুরহাট ॥ জয়পুরহাটে শুক্রবার সকাল থেকে মালিক-শ্রমিকদের ডাকে শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রী। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জানান, বিভিন্ন পরিবহনে ভাংচুর করছে শিক্ষার্থীরা। এতে শ্রমিক ও মালিকদের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে জয়পুরহাট থেকে দূরপাল্লা ও আঞ্চলিক বাস চলাচল বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছে তারা। বগুড়া ॥ বগুড়া থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আকস্মিকভাবে ঢাকাসহ দূরপাল্লার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রী। বাস চলাচলে নিরাপত্তার অভাব দেখিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুধু ঢাকাগামী বাস চলাচল সীমিত ছিল। শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকাগামী সকল বাস চলাচল ও টিকেট কাউন্টার বন্ধ হয়ে যায়। পরে অন্য রুটের বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে পড়ে। দুপুরে ঢাকাগামী বাসের টার্মিনাল ছাড়াও বগুড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কোন রুটে বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। কলাপাড়া ॥ কলাপাড়া-কুয়াকাটা থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটের বাস ধর্মঘটের কারণে পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছেন। পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা জানান, গত কয়েকদিনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রুটের বাস চলাচলে যেভাবে বাধা দিচ্ছে এবং গাড়ি ভাংচুর করছে তাতে সড়কে বাস চলাচল করা সম্ভব নয়। এ কারণে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর ॥ লক্ষ্মীপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। বন্ধ রাখা হয়েছে দূরপাল্লার ছোট-বড় যাত্রীবাহী বাস। শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা এ কর্মসূচী পালন করে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। এদিকে বাস বন্ধ থাকায় টার্মিনাল এলাকায় যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে কিছু যানবাহন চললেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। চাঁদপুর ॥ সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে চাঁদপুর থেকে বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে চাঁদপুর-ঢাকা ও কুমিল্লা, চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, চাঁদপুর-সিলেট, চাঁদপুর-খাগড়াছড়ি, হাজীগঞ্জ-ঢাকা, ফরিদগঞ্জ-চট্টগ্রাম, মতলব-ঢাকা, কচুয়া-ঢাকাসহ বেশ কিছু রুটে শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন বাস মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়ন। চাঁদপুর পৌর বাসস্ট্যান্ডে কর্তব্যরত মালিক প্রতিনিধিরা জানান, সড়কে কাগজপত্র দেখার নামে শুধু হয়রানিই নয়, যানবাহন ভাংচুর, যাত্রী এবং তাদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। তাই নিরাপত্তাজনিত কারণে আপাতত বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। মুন্সীগঞ্জ ॥ শুক্রবার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে তেমন কোন যাত্রীবাহী বাস চলাচল করেনি। এতে এ রুটে চলাচলকারী হাজার হাজার যাত্রী সাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীবাহী বাসগুলো সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। ঘাটে অসংখ্য যাত্রী থাকলেও তেমন কোন বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে না। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হয়। এ ব্যাপারে ঢাকা-মাওয়া বাস মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলী আকবর বলেন, বাস মালিক ও ড্রাইভারদের মধ্যে অনেকটা ভীতি কাজ করছে। বাস ভাংচুরের ঘটনা এড়াতে তারা বাস বন্ধ রেখেছে।
×