ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পপি দেবী থাপা

ফিলিস্তিনে প্রতিবাদের মুখ আহেদ তামিমি

প্রকাশিত: ০৭:৪৮, ৩ আগস্ট ২০১৮

ফিলিস্তিনে প্রতিবাদের মুখ আহেদ তামিমি

সামাজিক যোগাযোগ মাধমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে নিজ গ্রাম নাবি সালিহতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমনরত ইসরাইলী সেনাদের সঙ্গে তর্ক করছে ১৬ বছরের এক কিশোরী। প্রথমে সে তাদের চিৎকার করে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। সৈনরা তাতে অস্বীকৃতি জানালে বাদানুবাদের এক পর্যায়ে সেই কিশোরী এগিয়ে গিয়ে চড় বসিয়ে দেয় এক ইসরাইলী সেনার গালে। ভিডিওটি ভাইরাল হলে কিশোরীর সাহসে স্তম্ভিত হয়ে যায় সারা বিশ্ব। ইসরাইলী বর্বরতার সঙ্গে যারা পরিচিত তারা জানেন মৃত্যু ছিল সে কিশোরীর এক চুল দূরত্বে। প্রশ্ন ওঠে মৃতুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে স্বজাতির অধিকার আদায়ের পক্ষে বিক্ষোভে ফেটে পড়া, কে এই কিশোরী? তিনি আহেদ তামিমি। ফিলিস্তিনের অধিকার আদায়ের, প্রতিরোধ, সগ্রামের সম্মুখসারির যোদ্ধা। গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়াতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা ফিলিস্তিন। এরই এক পর্যায়ে ওই ঘটনা। তার এই আচরণ সারা বিশ্বকে আরও একটি বার্তা জানিয়ে দেয়, কতটা কোণঠাসা হলে পরে মানুষ হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে এতটা বেপরোয়া হতে পারে। নারী বলে, কিশোরী বলে নিজেকে গুটিয়ে রাখেননি আহেদ তামিমি। তার এই প্রতিবাদ দখলদার ইসরাইল ও তার প্রভুদের অন্য যে বার্তাটি দেয় তা হলো, যখন ফিলিস্তিনের ঘরে ঘরে আহেদ তামিমির মতো কন্যা, ভগ্নি, মাতারা আছেন তখন এ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত দমন করা যাবে না কিছুতেই। যতই ছলচাতুরী কিংবা পাশবিক বল প্রয়োগ করা হোক না কেন ফিলিস্তিনীরা ঠিকই আদায় করে নেবে তাদের অধিকার। কারণ তাদের আছে শত আবেদ তামিমি। আবেদ তামিমির জন্য অবশ আন্দোলন সংগ্রাম নতুন কিছু নয়। তিনি বেড়ে উঠেছেন দখলদারের নির্মম নিপীড়ন, নির্যাতনের মাঝে। জন্মেই নিজ মাতৃভূমিতে নিজেকে আবিষ্কার করেছেন উদ্বাস্তুরূপে। আবেদ তামিমির জন্ম ৩১ জানুয়ারি ২০০১, ফিলিস্তিনীর পশ্চিম তীরের ছোট্ট গ্রাম নাবি সালিহতে। পিতা বাশেম আল তামিমি। ষোড়শ শতাব্দীতে তার পূর্ব পুরুষরা হেবরন থেকে এসে নাবি সালিহতে বসতি স্থাপন করেন। তার বাবা কাসেম তামিমিও ফিলিস্তিন প্রতিরোধ সংগ্রামের পরিচিত মুখ, স্বজাতির স্বাধীনতা আদায়ের আন্দোলনে নিবেদিত কর্মী। দখলদারিত্বের মাঝে বেড়ে ওঠা আহেদ তামিমি অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবদান রাখতে আইনজীবী হতে চান। ইসরাইলী হয়রানির হাত থেকে রক্ষার জন্য তার পরিবার তাকে রামাল্লায় আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তাদের প্রত্যাশা ছিল সেখানে সে অন্তত নিরাপদে তার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে। প্রতিনিয়ত তাকে চেক পোস্টে নিরাপত্তা তল্লাশির নামে হয়রানির মুখোমুখি হতে হবে না। হয়রানির মাত্রা বোঝাতে তার বাবা বলেন কেবল ২০১৭তে তাদের বাড়িতে ইসরাইলী সৈন্যরা তল্লাশি চালিয়েছে ১৫০ বারের বেশি। তবে এর কোন কিছুই আহেদকে দূরে রাখতে পারেনি ন্যায়ের সংগ্রাম আর অধিকার আদায়ের লড়াই থেকে। তিনি জড়িয়ে পড়েন ইসরাইলী অবৈধ বসতি স্থাপন ও ফিলিস্তিনীদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, সুশৃঙ্খল প্রতিবাদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনীদের অধিকার আদায় হবে অনেক সহজ। ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়া তার প্রতিবাদের ছবি কেবল ফিলিস্তিন কিবা ইসরাইলীদের দৃষ্টি কেড়েছে তা নয়, আন্তর্জাতিক জনমত গঠনেও রেখেছে ব্যাপক প্রভাব। মায়ের গ্রেফতারের প্রতিবাদে তার সাহসী ভূমিকার জন্য ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তার সাহসের প্রশংসা করেন, তখন তার বয়স মাত্র ১১। ভাইয়ের গ্রেফতারের প্রতিবাদে ইসরাইলী সেনার সঙ্গে তার সংঘর্ষের দৃশ্য ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে তাকে দেয় আন্তর্জাতিক পরিচিতি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান তাকে আমন্ত্রণ জানান সে দেশে ভ্রমণের। সংগ্রামী পরিবারে বেড়ে ওঠা আহেদের জীবনে এমন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা একটি দুটি নয়, অসংখ্য। ২০১৬তে আমন্ত্রণ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র তাকে সে দেশের ভিসা দিতে অস্বীকার করে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর ১৫ তে ইসরাইলী নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে যে দুর্দান্ত সাহসের পরিচয় দিয়েছেন আহেদ, তা তাকে আবারও এনেছে আলোচনায়। তিনি হয়ে উঠেছেন নিজের জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতীক। শুধু তাই নয় কিশোরী আহেদ তামিমি আজ বিশ্বজুড়ে লড়াই-সংগ্রামের মুখ, সাহসের প্রতীক, নারীদের গর্ব।
×