ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লালমনিরহাটে পাটের বাম্পার ফলন

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৩ আগস্ট ২০১৮

লালমনিরহাটে পাটের বাম্পার ফলন

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট ॥ লালমনিরহাটে এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে পাটচাষীরা দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। পাট চাষের প্রথম দিকে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও পরবর্তীতে সময়মতো বৃষ্টিপাত হওয়ায় এই কৃষি পণ্যটি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ। ইতোমধ্যে জেলার অনেক জায়গায় পাট কাটা, পানিতে পচানি দেয়া শুরু করেছেন কৃষক। শ্রমিকের অভাবে ও জমির আশপাশে পানি না থাকায় পাট পচাতে বিপাকেও পড়ছেন অনেকে। লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর লালমনিরহাট জেলায় মোট ৪ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আদিতমারী উপজেলায় ৩২৫ হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৬৩০ হেক্টর, হাতীবান্ধা উপজেলায় ১০১৫ হেক্টর, পাটগ্রাম উপজেলায় ২৯৫ হেক্টর ও লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ২ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর সবচেয়ে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে সদর উপজেলা ও হাতিবান্ধা উপজেলায়। জেলার অনেক উপজেলায় পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় আবাদ গত বছরের তুলনায় এবার একটু কমেছে। গত বছর চাষ হয়েছিল মোট ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আর এবার ৪ হাজার ৭৮০ হেক্টরে। জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে পাট চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে চাষ, বীজ-সার-কীটনাশক ক্রয়, পরিচর্যা, পচানি দিতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা নেয়ার পরিবহন খরচ, পাটকাঠি থেকে পাট ছড়ানো ও রোদে শুকিয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত ১৬-১৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এর মধ্যে পাট কাটতে এবং জাগ দেয়ার জন্য নদীতে পৌঁছাতে পরিবহনসহ বিঘাপ্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা লেগে যায়। তারা জানান, এ বছর পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। পাটের ন্যায্যমূল্য না পেলে তাদের আর্থিকভাবে অনেক লোকসান গুনতে হবে। প্রান্তিক কৃষক আব্দুর রহিম(৫৫) জানান, সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত বীজসহ কৃষি উপকরণসমূহ থেকে তারা সব সময়ই বঞ্চিত থাকেন। তাদের অভিযোগ, যাদের জমির পরিমাণ বেশি কৃষি বিভাগ তাদেরই মধ্যে সরকারী উপকরণসমূহ বিতরণ করে থাকেন। অপরদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা কৃষি অফিস ও পাট অধিদফতর যৌথভাবে পাটের উৎপাদন ও ফলন বেশি করার জন্য এ বছর কৃষকের মাঝে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, তথ্য প্রদানসহ মাঠ পর্যায়ে কাজ না করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা কৃষি প্রশিক্ষকের দায়িত্বে থাকা লালমনিরহাট জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক পিপি (শস্য সংরক্ষক) জানান, প্রয়োজনীয় উদ্বুদ্বকরণ সভা, প্রশিক্ষণ, তথ্য প্রদানসহ মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এতে কৃষকও পাট চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আশা করছি আগামীতে জেলায় পাট উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। লালমনিরহাটে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের সাগর, কালীগঞ্জ উপজেলার মহসীন আলীসহ অনেক পাটচাষী জানান, আশা রাখছি এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হবে। তবে আঁশ মোটা হবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। তারা আরও জানান, জমিতে পাট আবাদ করতে যে ব্যয় হচ্ছে ন্যায্য দাম না পেলে উৎপাদন খরচ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন তারা। পাটগ্রাম উপজেলার উফারমারা গ্রামের আরশাদ আলী বলেন, এবার তিনি প্রায় তিনবিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। শুরুতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট বড় হতে বিলম্ব হয়েছিল। পরে যখন বৃষ্টি হওয়া শুরু হয়েছে তখন শুধু পাটগাছই বড় হয়েছে, কিন্তু পাটগাছের আঁশ মোটা হয়নি। তিনি আরও বলেন, এলাকায় পুকুর-ডোবা না থাকায় পানির অভাবে পাট জাগ (পচাতে) দিতে পারছি না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেচ খালে যদি নিয়মিত পানি থাকত, তাহলে আমাদের পরিবহনে অতিরিক্ত খরচ করে নদীতে জাগ দিতে হতো না। এতে লোকসানের পরিমাণও কম হতো। কারণ, এক বিঘা জমির পাট শুধু তিস্তা নদীতে পৌঁছানোতেই খরচ হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। আর কাটতে লাগছে ৫ হাজার টাকা। কীভাবে যে খরচ উঠবে, সেই চিন্তায় বার বার করছি। এ বিষয়ে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিধু ভূষণ রায় বলেন, পানি হচ্ছে প্রকৃতির দান। কিন্তু কৃষকের জন্য সেচ খালে পানি থাকা না থাকা সেটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবে পাটজাত কৃষি পণ্যের ফলন কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমিতে রাসায়নিক সার সঠিকভাবে ব্যবহার না করায় আঁশ মোটা ও ফলন কম হতে পারে। তবে হ্যাঁ, কৃষক যে ফসলে কম খরচে বেশি মুনাফা পায়, সে ফলনের দিকেই ঝুঁকে পড়ে এ এলাকার কৃষক। এ এলাকার কৃষক খুবই সহজ সরল। আমার মনে হয়, তাদের একটু ভাল করে প্রশিক্ষণ দিলে এবং পরামর্শ প্রদান করলে কৃষক অল্প খরচে পাটজাত কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে আগ্রহ প্রকাশ করবে।
×