ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পটুয়াখালীর মুগডাল রফতানি হচ্ছে জাপানে

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৩ আগস্ট ২০১৮

পটুয়াখালীর মুগডাল রফতানি হচ্ছে জাপানে

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী ॥ জাপানীদের জনপ্রিয় খাবার স্প্রাউট স্যুপ। যা তৈরি হয় মুগডাল থেকে। আর এ মুগডাল রফতানি হচ্ছে পটুয়াখালী অঞ্চল থেকে। ফলে মুগডাল রফতানি করে দেশের অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী হচ্ছে, তেমনি অর্থনৈতিক এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। উল্লেখ্য, দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭৫ ভাগ মুগডালই উৎপাদিত হয় পটুয়াখালীতে। জাপানে মুগডালের ব্যাপক চাহিদা থাকায়, ২০১৬ সাল থেকে গ্রামীণ ইউগ্লেনা নামক একটি প্রতিষ্ঠান কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি মুগডাল ক্রয় করে জাপানে রফতানি করা শুরু করে। জাপানীরা সাধারণত ৩.৫ মিমি এর বড় আকারের মুগডাল দিয়েই স্যুপ তৈরি করে। তাই বারি মুগ-৬ সহ অন্যান্য যে সকল মুগের দানার আকার ৩.৫ মিমি-এর ওপরে এবং রং উজ্জ্বল সবুজ গ্রামীণ ইউগ্লেনা সেই সকল বারি এবং বিনা জাতের ডালই ক্রয় করে। তবে পটুয়াখালী অঞ্চলের কৃষকরা একটা সময় স্থানীয় জাতের ছোট দানার ডাল চাষ করলেও কৃষি বিভাগের পরামর্শ এবং কারিগরি সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লু গোল্ড প্রোগ্রাম পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলায় বাজারমুখী কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে কৃষকদেরকে দিয়ে বারি মুগ-৬ জাতের ডাল চাষ করছে। ব্লু গোল্ডের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, উন্নত জাত এবং প্রযুক্তি সহায়তার মাধ্যমে মুগডালের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি একটি শক্তিশালী বাজার সংযোগ তৈরিতে কৃষকদেরকে সহায়তা করা। যাতে কৃষকরা বিক্রির নিশ্চয়তাসহ মুগডাল চাষকে একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত করতে পারে। ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত কোম্পানিটি পটুয়াখালী সদর, দশমিনা এবং গলাচিপা উপজেলার ৩৯টি উৎপাদক দলের ১৭৫২ জন কৃষকের কাছ থেকে মোট ২৫৬.৩০ মেট্রিক টন মুগডাল ক্রয় করে। যার মোট মূল্য ১,৪৬,০৯,১০০ টাকা। এ বছর কোম্পানিটি কৃষকদেরকে প্রতি কেজিতে স্থানীয় বাজারের তুলনায় ১৭ টাকা বেশি দর দেয়। ফলে কৃষকরা ভাল মানের মুগডাল সরবরাহ করে অতিরিক্ত ৪,৩৫,৭,১০০ টাকা বাড়তি আয় করতে সক্ষম হয়। কৃষি বিভাগের নানা কর্যক্রমের পাশাপাশি ব্লু গোল্ড এবং গ্রামীণ ইউগ্লেনার কিছু সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে মুগডালের বাজার ব্যবস্থা অনেকটা শক্তিশালী হওয়ার ফলে উন্নত জাতের মুগডাল চাষের প্রতি আগ্রহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। লক্ষণীয় যে, ২০১৫ সালে পটুয়াখালী অঞ্চলে যেখানে মুগ চাষের উপযোগী জমির মাত্র ১০-১৫ ভাগ জমিতে উন্নত জাতের মুগডাল চাষ হতো বর্তমানে সেখানে ৭০-৮০ ভাগ জমিতে বারি মুগ-৬ সহ অন্যান্য উন্নত জাতের মুগডাল চাষ হচ্ছে। স্থানীয় জাতের তুলনায় উন্নত জাতের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় পূর্বের তুলনায় দেশে মুগডালের ফলন দ্বিগুণ হচ্ছে। অপরদিকে স্থানীয় জাত এবং উন্নত জাতের মুগের দাম প্রায় একই হওয়ায় কৃষকরাও বর্তমানে দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছে। মুগডালের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন দেশের মানুষের উদ্ভিজ্জ আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
×