ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহত্তম সামরিক মহড়া চালাতে পারে ইরান

পারস্য উপসাগরে ফের উত্তেজনা

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩ আগস্ট ২০১৮

পারস্য উপসাগরে ফের উত্তেজনা

পারস্য উপসাগরে ইরান বৃহৎ সামরিক মহড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই হতে পারে এ মহড়া, মার্কিন সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের কর্মকর্তারা অতি সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন। হরমুজ প্রণালীতে ইরানের নৌবাহিনীর আনাগোনা দেখে তারা এটি ধারণা করছেন। পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে বেরিয়ে যাওয়ার পর ওয়াশিংটন ও তেহরানের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে খবরটি এল। দ্য হিল, ভয়েস অব আমেরিকা ও মিডল ইস্ট আই। পারস্য উপসাগরে ইরানের সামরিক মহড়া নতুন কিছু নয়। তবে দেশটি যে এককভাবে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে তা প্রমাণের জন্য বৃহৎ পরিসরে এবার সেখানে মহড়া চালানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য এলাকা দেখাশোনাকারী মার্কিন সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান বিল আর্বান বলেছেন, ‘আরব (পারস্য) উপসাগর, হরমুজ প্রণালী ও ওমান উপসাগর অঞ্চলে ইরানের নৌ তৎপরতার বিষয়ে আমরা দৃষ্টি রাখছি। বিষয়টি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, মিত্রদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি, আন্তর্জাতিক জলপথে নৌ চলাচল নির্বিঘœ রাখতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।’ গত বছরই সেখানে ইরান ও চীন সামরিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালী এবং ওমান উপসাগরে যৌথভাবে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। ইরান ও চীন হরমুজ প্রণালীর পূর্বে এবং ভারত মহাসাগরের উত্তরে মহড়া করারও ঘোষণা দিয়েছিল। এদিকে সিএনএন জানিয়েছে, ইরানের রেভলিউশনারি গার্ড কোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাগরে মহড়া আয়োজন করতে পারে। কয়েকটি অসমর্থিত সূত্রের খবরে প্রকাশ এবারের মহড়ায় ১শ’য়ের বেশি নৌযান অংশ নিতে পারে। ব্যবহার করা হতে পারে ডিফেন্সিভ মিসাইল ব্যাটারিও। গত বছরে আগস্টে অনুষ্ঠিত নৌ মহড়ায় পারস্য উপসাগরে ২০টি নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় ইরান। ইরানের নৌববাহিনীর প্রধান দাবি করেছিলেন তাদের কাছে দ্রুত গতিসম্পন্ন হাজার হাজার যুদ্ধজাহাজ রয়েছে যা শত্রুকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট। এছাড়া তাদের কাছে আছে বিভিন্ন রকমের ড্রোন যা হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সক্ষম। এসব ড্রোনের মাধ্যমে যেকোন দ্রুতগতির যানবাহন লক্ষ্য করে নিখুঁতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা সম্ভব। গত কয়েক বছরে সামরিক দিক দিয়ে ব্যাপক উন্নতি করেছে ইরান। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ছয়টি পশ্চিমা দেশের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞার খড়গ উঠে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়ানো দিকে নজর দিয়েছিল ইরান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলো বলেছে তারা এই চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। ২০১৫ সালে চুক্তিটি হওয়ার পর ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো ক্রমাম্বয়ে শিথিল করা হয়েছিল। ট্রাম্প জানুয়ারি মাসেই হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন যে, তিনি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পরবর্তী আদেশে সই করবেন না। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছেন। তার মতে, এক দশকের জন্য ইরানের পরমাণু কর্মসূচী স্থগিত করা হয়েছে। তেহরান যেন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে না পারে তার কোন নিশ্চয়তা এ চুক্তিতে নেই। ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে না আসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়ছে। শেষ পর্যন্ত ৮ মে তিনি ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর ইরানের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় চাপে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি। পারস্য উপসাগরীয় রাজনীতি গত এক বছরের বেশি সময় তেঁতে রয়েছে। গত বছর মে মাসে ট্রাম্পের সৌদি আরব সফর, আরব-ইসলামিক-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান এবং সৌদি আরবকে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তির পর পারস্য উপসাগরীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। কাতারের সঙ্গে সৌদি আরব তথা গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলভুক্ত চার দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং কাতারের বিরুদ্ধে এক ধরনের অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ ওই সঙ্কটকে আরও জটিল করে।
×