ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গণতন্ত্রের বিজয়ের পথে

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৩ আগস্ট ২০১৮

গণতন্ত্রের বিজয়ের পথে

একই দিনে দেশের তিনটি বিভাগীয় শহরের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয় হয়েছে গণতন্ত্রের। প্রতিফলিত হয়েছে জনমতের। নানা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, অনিয়ম এবং কিছু গোলযোগের ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। ভোটাররা তাদের প্রার্থিত প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটদানের উৎসবে মেতেছিল। রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষের নানা জেরবারের ঘটনা দৃশ্যমান হলেও সার্বিক অর্থে নির্বাচন হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। প্রতিপক্ষের উপর হামলা, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে না দেয়ার মতো অতীতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। বিপুলসংখ্যক ভোটার এবার স্বাচ্ছন্দ্যে ভোটদান করেছে। বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন তাদের দক্ষতার প্রমাণ রেখেছে। সে প্রমাণ রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। তবে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধের কিছু ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে রেষারেষির ঘটনা কারও চোখ এড়ায়নি। আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই তিন সিটি নির্বাচন রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন চাইলে শান্তিপূর্ণ, হানাহানি ও সংঘাতমুক্ত নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। তিন সিটিতে ভাল নির্বাচন বলতে অবশ্যই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সবার ভোটদানের ব্যবস্থা, ভাল বা যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়া এবং পরবর্তী পাঁচ বছর তিন সিটিতেই জনগণের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হবে, কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ঘটবে। গাজীপুর, খুলনায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর এই তিন সিটি নির্বাচনে হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ঘোষিত ফলে দেখা যাচ্ছে, রাজশাহী ও বরিশালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন মেয়র পদে। অপরদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। সেখানে ১৩৪টির মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রের ঘোষিত ফলে বিএনপি প্রার্থী তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে চার হাজার ৬২৬ ভোটে এগিয়ে আছেন। দুটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত থাকায় চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়নি। তবে ফল ঘোষণা না হলেও ভোটের যে চিত্র তাতে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। রাজশাহীর বিএনপি মেয়র প্রার্থী অনিয়মের অভিযোগ এনে একটি কেন্দ্রের মাঠে বসে অবস্থান নেন। এমনকি নিজের ভোটও প্রদান করেননি। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করাই ছিল তার লক্ষ্য। বরিশালে বিএনপিসহ চার মেয়র প্রার্থী অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ এনে মাঝপথে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। সিলেট সিটি নির্বাচনে জালভোট, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে কিছু কেন্দ্রে। নির্বাচন শেষ হওয়ার পরই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী। শুধু ভোট বর্জন নয়, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগও দাবি করেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোটের ফলে দেখা গেল, তিনিই নিশ্চিত মেয়র হতে যাচ্ছেন সিলেটে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে কোনভাবেই বিজয়ী হতে পারতেন না। নির্বাচন কমিশন যেসব ভুলক্রটি হয়েছে তা নিরূপণ করে শোধরানোর পথ অবলম্বন করবেন নিশ্চয়ই। আমরা নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের অভিনন্দন জানাই। গণতন্ত্রের এ বিজয়কে তারা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে গুরুত্ব প্রদান করবেন বলে বিশ্বাস করি। গণতান্ত্রিক চেতনা অব্যাহত রেখে যথাযথই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের প্রতিভাত করতে সক্ষম হবেন আগামীতে।
×