ডিএম তালেবুন নবী ॥ আমের নাম ‘জাদুভোগ’। আলোড়ন সৃষ্টিকারী নাবিজাতের এই আম সাড়া ফেলে দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে কৃষি গবেষণাগার গাজীপুরের বারি পর্যন্ত। কৃষিবিজ্ঞানী, কৃষি ও ফল গবেষকরা এই জাদুর পেছনে দৌড়ে নাগাল পাচ্ছেন না। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ পুলের সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর একান্ত অনুগত ও পরামর্শদাতা গবেষক কৃষিবিদ এনামুল হক ছুটে আসেন এই জাদুভোগ আম দেখতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে। আমটি এসেছে পশ্চিমবাংলার মালদহ জেলা থেকে। উপজেলার একেবারে সন্নিকটে ও মিলেমিশে থাকা মালদহ ইংরেজবাজার ভোলাহাট থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। নদীর এপার-ওপার আইহো পশ্চিমবাংলায় হলেও ভোলাহাট থানার বিপরীতে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। তাই ভোলাহাট অঞ্চলে পৃথিবীখ্যাত যে কোন আমের চালান চলে আসে পশ্চিমবাংলার মালদহ থেকে। এমনি একজন আমপ্রিয় চাষী আব্দুস সালাম কিষান। নিজ বাড়ি সদর উপজেলার সন্দ্রাবাড়ী গ্রামে বেড়ে উঠেছেন। আমপাগল এই মানুষটির কানে আসে নাবিজাতের শ্রেষ্ঠ আম জাদুভোগের। খবর আসে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত এই আম পাকতে সময় নিয়ে থাকে। তিনি পরবর্তীতে কলাম করার মাধ্যমে পাঁচ শ’ গাছের জাদুভোগ আমের বাগান গড়ে তোলেন। ফল ধরার ধরন, ফলের আকার, রং, গন্ধ, স্বাদ, মিষ্টতা, সংরক্ষণ গুণ থাকায় সালাম কিষাণের কাছে আকর্ষণীয় হবার কারণে জাদুভোগের চাষ শুরু করেন। এতদিন অতুলনীয় আকারের নাবিজাত আমটি লোক চক্ষুর আড়ালে ছিল। লাইমলাইটে নিয়ে আসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তা ড. সাইফুর রহমান ও তার সহকর্মী কৃষিবিদ গবেষক জোহরুল ইসলাম। কৃষিবিদ জোহরুল এক জার্মপ্লাজম বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা হয়েও সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেন আমচাষী আব্দুস সালাম কিষাণের সঙ্গে। আব্দুস সালামের কাছ থেকে আমের স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ‘জাদুভোগ’ আমের পরিচিতমূলক সভার আয়োজন করেন ভোলাহাটের দুর্গম একই অঞ্চলে। তাদের (কৃষিবিজ্ঞানীদের) পরীক্ষায় জানা যায়, আমের মিষ্টতা ২৩.০ হতে ২৪.০; যা বাজারে প্রাপ্য যে কোন সুস্বাদু আম থেকে ভিন্ন। অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যারোটিন, খনিজ পদার্থ ও ক্যালোরিসমৃদ্ধ। আঁটি ও খোসা খুবই পাতলা হওয়ায় ভক্ষণযোগ্য অংশের পরিমাণ অনেক বেশি, শতকরা ৯০ শতাংশ। আমের পরিপক্বতার সময় আম মৌসুমের একেবারে শেষে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত। নাবি জাতের আমের অন্য আমের তুলনায় সংরক্ষণশক্তি অনেক বেশি। তাই বাজারে মূল্যও অত্যধিক। সালাম কিষাণ জানান প্রতিবছর সিলেট এলাকায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা মণ দরে আম বিক্রি করে থাকেন। এবার মূল্য অনেক চড়া হবে। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনকারী পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক ছুটে আসেন। প্রকল্প পরিচালক মোঃ মেহেদি মাসুদ হর্টিকালচার সেন্টার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডাকে সাবেক মহাপরিচালক (কৃষি সম্প্রসারণ) এনামুল হককে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হন ভোলাহাটে। সঙ্গে আসেন ড. কে এম আব্দুল আওয়াল। তিনি বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা হলেও তার আগ্রহ অনেক বেশি ছিল ‘জাদুভোগ’ আম নিয়ে। এছাড়া উদ্যানতত্ত্ববিদ মাহমুদুল হাসান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলামসহ স্থানীয়ভাবে জেলার সকল ধরনের কৃষিবিদ ও জার্মপ্লাজম অফিসার জহরুল ইসলাম উপস্থিত থেকে নাবিজাতের আম জাদুভোগকে তার বৈশিষ্ট্যের কারণে শীর্ষে নিয়ে যান। জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়, খামারবাড়ী ও গাজীপুরের বারি পর্যন্ত এর সুমিষ্ট স্বাদ পৌঁছে গেছে। তাই সবার আকর্ষণ এখন জাদুভোগ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ পরিচালক ও সহকারী কৃষিবিদ জহরুল ইসলাম জানানÑ তারা জাতটিকে অনুমোদিত করার লক্ষ্যে উপরে পাঠিয়েছেন। রিপোর্ট আসা মাত্র তারা তাদের ফার্মে চারা তৈরির প্রকল্প হাতে নেবেন। এই অনন্য, অসাধারণ জাত; যা স্বাদে, গন্ধে ও আকারে অতুলনীয়। সাধারণ আম চাষীর মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে তারা এই নাবিজাতের আমটি নিয়ে আর্থিকভাবে খুবই উপকৃত হবেন। উপ-পরিচালক গবেষক, কৃষিবিদ ড. সাইফুর রহমান আশা করছেন আমের বছরে তার ফার্মে ‘জাদুভোগ’ আমের চারা তৈরি ও বিক্রি শুরু হলে আম সা¤্রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সমগ্র দেশ দারুণভাবে উপকৃত হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: