ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৩ আগস্ট ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ এমন ছবি, না, আগে কেউ দেখেননি। এবারই প্রথম। স্কুল কলেজের ইউনিফর্ম পরা ছেলে মেয়েরা রাস্তায় নেমে এসেছে। গত কয়েকদিন ধরেই রাস্তায় তারা। ঘাতক বাস দুই সহপাঠীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় মন ভারাক্রান্ত, বিষণ্ণ। প্রতিকার চায় শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়ক চাই। প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার তারা রীতিমতো ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। এর চেয়ে অভিনব আর কি হতে পারে? অনেকেই পথে যেতে যেতে কৌতূহলী চোখে তাকাচ্ছিলেন। বাচ্চারা এসবের কী-ই বা বোঝে, তবুও সহযোগিতা করছিলেন হাসিমুখে। ওদের দাবির প্রতি বড়দের একধরনের সমর্থন ছিল, তা বেশ বোঝা গেছে। কিন্তু ঢাকার এখন যে অবস্থা, একটু সময় কোন একটি রাস্তা বন্ধ থাকলে অচল হয়ে যায় শহর। অথচ প্রধান প্রধান সব রাস্তার মোড়ে অবস্থান নিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। ফলে যানচলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। গণপরিবহনের মালিকেরা শ্রমিকেরা পরিস্থিতি বুঝে বাস বের করেননি তেমন। ফলে মূলত ভোগান্তির শিকার হয় ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীরা। অফিসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া আসা, জরুরী কাজকর্ম সবই মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। তবে ভালটি এই ছিল যে, অনেকগুলো সমস্যা শিক্ষার্থীরা সামনে আনতে পেরেছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পেরেছে, কেন এত দুর্ঘটনা, কী কী কারণে ট্রাফিক সিস্টেম ভেঙ্গে পড়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ভিআইপিরা পর্যন্ত আইন কানুনের তোয়াক্কা করেন না। এভাবেই তো বিশৃঙ্খলা। এভাবেই তো আজকের অরাজক পরিস্থিতি। কচিকাঁচা ছেলে মেয়েরা নতুন করে বিষয়গুলোকে জাতির সামনে তুলে ধরতে পেরেছে। এখন সমস্যার আলোকে সরকার দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ব্যাপক এই জনসমর্থন থাকতে থাকতে সবাইকে আইন মানতে বাধ্য করার কাজটি শুরু করতে পারে। তবে আপাতত এই ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ঘরে ফেরানো জরুরী। তাদের লেখা পড়ার ক্ষতি হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে মনসংযোগ। বহির্মুখী প্রবণতাও পেয়ে বসতে পারে। বিষয়গুলো গভীরভাবে ভাবা উচিত বলেই মনে হয়। তাছাড়া গতকাল পর্যন্ত পরিস্থিতির ওপর তাদের মোটামুটি একটা নিয়ন্ত্রণ ছিল বলে মনে হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ন্ত্রণ তারা লম্বা সময় ধরে রাখতে পারবে না। সম্ভব হবে না। আর তখনই অনাকাক্সিক্ষত কিছু না কিছু ঘটে যেতে পারে। এই যেমন বৃহস্পতিবার ফার্মগেট এলাকায় একটি দৃশ্য দেখে পিলে চমকে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো। ছোট্ট একটি পিকআপ ভ্যানে উঠে বাড়ি ফিরছিল একদল শিক্ষার্থী। একে তো ভ্যানটি যাত্রী পরিবহনের উপযোগী নয়, তার ওপর অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে উঠেছিল তারা। চলন্ত গাড়ির কেউ এ দিকে ঝুঁকে ছিল। কেউ ওই দিকে। দিনভর নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন। তার পর এমন অনিরাপদ বাড়ি ফেরা! দেখে কী যে আতঙ্কে কেটেছে। এখানেই শেষ নয়, স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা যারপর নাই আবেগী। রাস্তায় নেমে এলোমেলা ছুটছে। চলন্ত গাড়ি তাড়া করছে। ভাংচুর আগুন দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এভাবে চললে যখন তখন আরও বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তার চেয়ে বড় কথা, কোমলমতি ছেলেমেয়েদের মনে কাঠিন্য জায়গা করে নিচ্ছে। এরও একটা মন্দ দিক আছে। এখনই তা সংশ্লিষ্টদের বোঝা উচিত। প্রতিবাদটা তারা শিখুক। কিন্তু সে প্রতিবাদের শেষটা জানা আরও জরুরী বলেই মনে করছেন ঢাকার সচেতন মহল। অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক, বহুল প্রতীক্ষিত বাড্ডা ইউলুপ খুলে দেয়া হয়েছে শনিবার। রামপুরা-বনশ্রী এলাকার যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সমন্বিত হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ ইউলুপ প্রকল্পটি নির্মাণ করেছে। ২১৪ মিটার দীর্ঘ এবং ৭ দশমিক ৭ মিটার প্রস্থ ইউলুপটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় নির্মিত ইউলুপটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। ইউলুপ খুলে দেয়ার মধ্যদিয়ে রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, আফতাবনগর, শাহাজাদপুর ও বাড্ডা এলাকার যানজট অনেকাংশই কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। একইভাবে হাতিরঝিল থেকে সহজেই রামপুরা-বনশ্রী হয়ে মালিবাগের দিকে যাওয়া যাবে। এসব এলাকা থেকে হাতিরঝিল হয়ে কাওরান বাজার এলাকার দিকে যাওয়াও সহজ হবে। এ দিকে, শহর ঢাকায় জাতীয় শোক দিবসের একটি আবহ ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। নির্মম হত্যাকা-ের পর মুজিব নামটি প্রায় মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেই ঔজ্জ্বল্য সেই দ্যূতি নিয়েই সামনে এসেছেন পিতা। গোটা শহরেই এখন তাকে ফিরে ফিরে পাওয়ার আকুতি। কান্না। রাজনীতি শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিসহ সব অঙ্গনের মানুষ স্মরণ করছেন বঙ্গবন্ধুকে। শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করছেন। জাতীয় জাদুঘরে এখন চলছে তাঁর স্মৃতি নিদর্শনের বিশেষ প্রদর্শনী। মাসের শেষ দিন পর্যন্ত চলবে সেমিনার। শিল্পকলা একাডেমিতেও চলছে নানা আয়োজন। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে গান, নাটক নৃত্যনাট্য, কবিতা পাঠের আসর ও বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত গ্রন্থের পাঠ পর্যালোচনা। এ ছাড়া জাতীয় চিত্রশালার ২নং গ্যালারিতে শুরু হওয়া বিশেষ প্রদর্শনী চলবে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত।
×