ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল মাদারীপুর

মহাজোট শরিকরা চায় দুই আসন, জামায়াত ছাড় দেবে না বিএনপিকে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৩ আগস্ট ২০১৮

মহাজোট শরিকরা চায় দুই আসন, জামায়াত ছাড় দেবে না বিএনপিকে

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা থেকে ॥ নির্বাচন এখনও ঢের বাকি। কিন্তু ঘুম নেই সীমান্ত ঘেঁষা জেলা সাতক্ষীরার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের। জেলার চারটি আসনেই নির্বাচনী প্রচার এখন তুঙ্গে। বড় প্রায় সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে, ব্যানার-ফেস্টুন-প্লাকার্ড তৈরি করে দোয়া প্রার্থনার যেন হিড়িক পড়েছে। কে পাবে দলের মনোনয়ন তা নিশ্চিত হতে এখনও ঢের বাকি। কিন্তু মনোনয়নপ্রত্যাশী সকলেই অভীন্ন কণ্ঠে বলছেন, কেন্দ্র থেকে সিগন্যাল পেয়ে সবাই মাঠে রয়েছেন। সাতক্ষীরা জেলায় মাত্র চারটি আসন। আর এই চারটি আসনে নৌকার হাল ধরতে চান প্রায় অর্ধশত মনোনয়ন প্রত্যাশী। প্রবীণের পাশাপাশি নবীনরাও সমানতালে নির্বাচনী মাঠ কাঁপাচ্ছেন। জেলার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন মৌসুমি পাখির যেন হিড়িক পড়েছে ক্ষমতাসীন দলটিতে। এই নতুনদের মাঠে থাকাকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ভাল চোখে দেখছেন না। দলেরই প্রার্থিতার হিড়িক, উপরন্তু জোটের শরিক দলগুলো চারটি আসনের দুটিতেই ভাগ বসাতে চায়। এ নিয়েও দলের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা, বিশ্লেষণ। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দাবি, তৃণমূলের মত নিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের ঘরে চারটি আসনই আসার সম্ভাবনা প্রবল। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিতেও রয়েছে একাধিক প্রার্থী। বিশেষ করে সাতক্ষীরার একাধিক আসন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের টানাপোড়েন রয়েছে। সব আসন বিএনপিকে এবার ছেড়ে দিতে নারাজ জামায়াত। বিএনপিও চায় তাদের হারানো আসনগুলো পুনরুদ্ধার করতে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ (ইনু) চায় জেলার দুটি আসন। জামায়াতও গোপনে তাদের তৎপরতা বহাল রেখেছে। মনোনয়ন লাভের আশায় সাতক্ষীরার চারটি আসনের বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা শহর-গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজারে নির্বাচনী প্রচারে সময় কাটাচ্ছেন। একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাতক্ষীরার ৪টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন নতুন মুখের জনপ্রিয়তা বেশি থাকার রিপোর্ট দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) ॥ এই দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন ১৪ দল সমর্থিত ওয়ার্কার্স পার্টির দখলে। বরাবরই এ আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ এই আসন ধরে রাখে। ২০০১ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপি, ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামী, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি এবং ২০১৪ সালে ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করেন। তবে এবার জোটের শরিক দলকে আসনটি ছেড়ে দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চায় তাদের দল থেকে এখানে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হোক। তবে বড় সমস্যা মহাজোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে। এখানে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ ইনুর প্রার্থীরা এই আসনে ভাগ বসাতে চায়। জাতীয় পার্টির পক্ষেও এই আসনটির দাবিদার রয়েছে। এখানে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীরা প্রকাশ্যে কাজ না করলেও দল নির্বাচনে অংশ নিলে তারাও মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়ে আছে। গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান বিজয়ী হন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে পরাজিত করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে এখানে আওয়ামী লীগের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির এ্যাডভোকেট মোস্তফা লুৎফুল্লাহ নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। তবে আগামী নির্বাচন জোটগতভাবে হলে আওয়ামী লীগ চাইবে তাদের দলের প্রার্থী দিয়ে আসনটি নিজেদের করে রাখতে। এ ক্ষেত্রে এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় এগিয়ে রয়েছেন টানা ১৬ বছর ধরে জেলা সভাপতির পদে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মুজিবর রহমান। তিনি বলেন, তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিলে তিনি মনোনয়ন পবেন বলে বিশ্বাস করেন। মহাজোটের শরিক হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির এ্যাডভোকেট মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, জাসদের ওবায়দুস সুলতান বাবলু ও জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। দশম জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মোস্তফা লুৎফুল্লাহ নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও এবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ কোনভাবেই আসনটি ছাড়তে নারাজ। তাদের দাবি, এ আসনে রয়েছে আওয়ামী লীগের শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান, বিশাল ভোট ব্যাংক। গত ৫ বছরের মূল্যায়নে নিজ দলীয় প্রার্থী চাইছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। আর এ কারণে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে এই আসনে একক প্রার্থী হিসেবে অনেকের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। তবে তাদের জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামীও বিএনপিকে এই আসন ছাড় দিতে নারাজ । এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেনÑ সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মুজিবর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য বিএম নজরুল ইসলাম, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (মন্ময় মনির), তালা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষ সনৎ কুমার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট অনিত মুখার্জী, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সরদার মুজিব, কেন্দ্রীয় সৈনিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক নির্বাহী সদস্য সরদার আমজাদ হোসেন, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা কামরুজ্জামান সোহাগ, সাবেক ছাত্রনেতা এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেনসহ অনেকে। এই আসনে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের তথ্য উপদেষ্টা সৈয়দ দিদার বখত, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক শেখ ওবায়দুস সুলতান বাবলু, কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক ইদ্রিস আলী মনোনয়ন প্রত্যাশী। অন্যদিকে বিএনপির ও জামায়াতের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কলারোয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ। সাতক্ষীরা-২ (সদর) ॥ ২০১৩ সালে জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, তা-বে ক্ষতবিক্ষত সাতক্ষীরা জেলার সদর আসনটি দেশজুড়েই আলোচিত। জামায়াত ঘরানার আসন বলে পরিচিত সদরে সেই আগের অবস্থান আর নেই। বর্তমানে এই আসনটি রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দখলে। গত পাঁচ বছরের উন্নয়ন ও সফলতার হিসাব-নিকাশে আগামী নির্বাচনেও এই আসনে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হবে বলে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দৃঢ় আশাবাদী। তবে গত জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে কিছুটা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুননুর আহমদকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রার্থী ও জেলার সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। সেই থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ দু’ঘরানাই বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় অনেকজনেরই নাম শোনা যাচ্ছে। চার দশকের ব্যবধানে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুইবার নির্বাচিত হলেও ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জয়লাভ করে। তবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এ জব্বার। পরে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকায় খুব একটা ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি আওয়ামী লীগ । ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নারকীয় সন্ত্রাসের পর নাশকতার অভিযোগে এ দলের বেশিরভাগ নেতা কর্মীরা রয়েছে আত্মগোপনে। বর্তমানে এখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্য কোন তৎপরতা দেখা না গেলেও তারা গোপনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন প্রচার রয়েছে। এ আসনে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি রয়েছে দুর্বল অবস্থানে। তবে জাতীয় পার্টি এবার এই আসনটি ছাড় দিতে নারাজ। গত ৫ বছরের রাজনৈতিক মূল্যায়নে দু’ধারায় বিভক্ত আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী এখন মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সহ-সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, জেলা শাখার যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সদর উপজেলা শাখার সভাপতি এস এম শওকত হোসেন, পৌর শাখার সভাপতি আবু সাঈদ, জেলা শাখার যুগ্ম-সম্পাদক শেখ সাইদ উদ্দিন, জাতীয় শ্রমিকলীগ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি ছাইফুল করিম সাবু, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক আ হ ম তারেক উদ্দিন, ভোরের পাতা পত্রিকার সম্পাদক এরতেজা হাসান জজসহ অনেকে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল জব্বার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মাতলুব হোসেন লিয়ন, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু, সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আনোয়ার জাহিদ তপনের নাম শোনা যাচ্ছে। এ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি রহমত উল্লাহ পলাশ, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল আলিম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এম এ জলিলসহ এই দলের অনেকেই নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। এই আসনে জাসদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন লস্কর শেলী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এই আসনে জামায়াতে প্রার্থী হিসাবে মুহাদ্দিস আব্দুল খালেকের নামও প্রচার রয়েছে। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ সাতক্ষীরা-২ এবং সাতক্ষীরা-৩ উভয় আসনেই দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে প্রচার রয়েছে। সাতক্ষীরা-০৩ (আশাশুনি-দেবহাটা-কালিগঞ্জ) ॥ তিন উপজেলার মোট ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে সাতক্ষীরা-৩ আসন। ভাঙ্গা গড়ার এই আসনটি ২০০৮ সালে সর্বশেষ পুনর্গঠিত হয়েছে। নতুন সীমানা অনুযায়ী এই আসনে যুক্ত হয়েছে আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, দেবহাটা উপজেলার ৫টি এবং কালিগঞ্জ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন। এই আসনের এবারেরও শক্ত প্রার্থী হিসাবে পরিচিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। তিনি বর্তমানেও এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ, আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ মোঃ আবদুল্লাহ, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) জামায়াতে হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ডাঃ শহিদুল আলম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বরুন কুমার বিশ্বাস, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট স ম সালাউদ্দিন ও জামায়াতের মুহাদ্দিস রবিউল বাসারের নাম শোনা যাচ্ছে। সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের একাংশ) ॥ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সুন্দরবন ঘেরা এ আসনের ১২টি ইউনিয়নের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে কালিগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন। মোট ২০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জগলুল হায়দার। তবে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিবাদ রয়েছে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নতুন মুখ প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশ। গত ৫ বছরে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দারের কাজের মূল্যায়ন করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। আবার অনেকে এ আসনে দলীয় মনোনয়নে তরুণ মুখের কথা বলছেন। এছাড়া জামায়াত ও বিএনপির রিজার্ভ ভোট মোকাবেলা করে দলের বিজয় সুনিশ্চিত করতে আগামী নির্বাচনে নতুনত্ব আনতে চায় আওয়ামী লীগ এমনও প্রচার রয়েছে এই আসনটিতে। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আতাউল হক দোলন, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শফিউল আযম লেলিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গাজী আনিছুজ্জামান আনিচ। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু) থেকে এই আসনে একক প্রার্থী হিসেবে প্রচারে নেমেছেন সাবেক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সাত্তার মোড়ল, সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা এবং বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী আলাউদ্দিন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ইফতেখার আলী, শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ ও জামায়াতের প্রার্থী হিসাবে সাবেক সংসদ সদস্য গাজী নজরুল ইসলামের নামও প্রচারে রয়েছে।
×