ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৩ আগস্ট ২০১৮

শোকের মাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগস্ট এলেই বাঙালী জাতির মানসপটে যে স্মৃতিটি সবচেয়ে বেশি করে নাড়া দেয় তা হলো বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকা-। ১৫ আগস্ট সপিরবারে হত্যাকা-ের শিকার হন। খুনীরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুকে পৃথিবীকে থেকে সরিয়ে দিলেই জাতির মাসনপটে বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যাবেন। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন কোনদিন পূরণ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর থেকে যত আগস্ট এসেছে, জাতির স্মৃতির মসনপটে তিনিই ততই গাঢ় থেকে প্রগাঢ় হয়েছে। তাই আগস্ট এলেই বাঙালী শোকে কাতর হয়ে পড়ে। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করার মহাকর্মযজ্ঞ। রাজধানী ঢাকা নয়, গ্রাম বাংলার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় পর্যন্ত শোকের মাসকে স্মরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো জাতি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার ৪৩ বছর পরে জাতির সামনে আবারও হাজির হয়েছে সেই শোকাবহ আগস্ট। আজ আগস্টের তৃতীয় দিন। ৭৫ এই দিনেও বঙ্গবন্ধুর কর্মচাঞ্চল্যে বাঙালী ছিল উৎফুল্ল। কিন্তু তারা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেনি আর কদিন পরে ঘাতকের বুলেটের আঘাতে প্রাণ দিতে হবে বাঙালী জাতির স্বাধীনতার স্থপতিকে। খুনীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। বাঙালী জাতির স্বপ্নকেই ধুলোয় মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশ ও জাতিকে বিশ্বের দরবারে স্থান দিতে সক্ষম হয়েছেন। বাঙালী জাতির বেদনাবিধুর শোকের মাস আগস্টের আজ তৃতীয় দিন। সর্বত্রই চলছে শোকের আবহ। রাজধানীসহ সারাদেশেই বিশাল বিশাল কালো পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার টানানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাতে নানা সেøাগান-কবিতা শোভা পাচ্ছে। শোকের মাসে বাঙালী জাতি পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসি এবং খুনীদের দোসর-মদদদাতাদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার। আগস্ট বাঙালীর জীবনে শুধু শোকের নয় একটি অভিশপ্ত মাসও বটে। এ মাসেই ঘটেছিল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। ঘাতকদের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দেশে থাকলে তাদেরও জীবন দিতে হতো নরহন্তারক কাপুরুষদের হাতে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আজও হত্যাকারী ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ১৯৮১ সালের মে মাসে দেশে ফিরে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁর পিছু ছাড়ে না। বারবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা চলতে থাকে। চলে একের পর এক নগ্ন হামলা। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শেখ হাসিনার এক সমাবেশে চলে আরেকটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। মূলত শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ঘাতকরা ওই সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায়। কিন্তু গ্রেনেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় তিনি আবারও প্রাণে রক্ষা পান। তবে নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড প্রাণসংহার করে আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মীর। তাই বর্ষ পরিক্রমায় আগস্ট এলেই সেই রক্তাক্ত স্মৃতিগুলো দেশবাসীর মনে ভেসে ওঠে। নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শোকাতুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শোকের নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে স্মরণ করছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ’৭৫-এ ইতিহাসের নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম এই হত্যাযজ্ঞের পর থেকে বাঙালী ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস এবং পুরো মাসকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাসব্যাপী জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচী নিয়েছে।
×