ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

টি২০তে হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ২ আগস্ট ২০১৮

টি২০তে হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ টি২০তে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আবার টি২০ ক্রিকেটটাতে তারা সেরা। খেলাটি তাদের ফেবারিট খেলা। এমন এক দলের বিপক্ষে টি২০তে খেলতে নেমে দুই শ’ রানের কাছাকাছি না করতে পারলে কী আর জেতা সম্ভব? যাদের হার্টহিটারে ভরা। তাদের বিপক্ষে দেড় শ’ রানের নিচে করা মানেই তো হার হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে পড়া। জেতা গেলেও সেটি বিশেষ বোলিংয়ের জন্য হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিংটাই এত খারাপ হয়েছে যে, বোলিংয়ে বিশেষ কিছু করার ছিলই না। আবার বৃষ্টিতে যখন দুর্ভাগ্য যুক্ত হয়ে যায়, টার্গেট ছোট্ট হয়ে আসে, তখন তো জেতা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশও তাই শেষপর্যন্ত তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথম টি২০তে বৃষ্টি আইনে ৭ উইকেটে হারল। তাতে করে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়েও পড়ল বাংলাদেশ। সেন্ট কিটসে টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিস গেইল নেই। তিনি বিশ্রামে। এরপরও যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কার্লোস ব্রাথওয়েট আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখনই বোঝা গেল ব্যাটসম্যানদের ওপর অগাধ বিশ্বাস তার। বোলাররাও তো দুর্দান্ত বোলিং করলেন। বাংলাদেশ ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৪৩ রানের বেশি করতেই পারল না। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতেই শুরু হলো বৃষ্টি। এরপর ম্যাচ গড়াল বৃষ্টি আইনে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিততে ১১ ওভারে ৯১ রানের লক্ষ্য দেওয়া হলো। ৩ উইকেট হারিয়ে ৯.১ ওভারে ৯৩ রান করে জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সহজ জয়ই পায়। শুরুতে ২ উইকেট করে নেয়া স্পিনার এ্যাসলে নার্স ও কিছুক্ষণ পর পেসার কিমো পল এবং মাঝামাঝি থেকে শেষপর্যন্ত ৪ উইকেট নেয়া পেসার কেসরিক উইলিয়ামস এমন বোলিংই করলেন; বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের কাছে বরাবরের মতো টি২০ ক্রিকেটটা ‘ধাঁধা’ই হয়ে থাকল। প্রথম ওভারেই, ৫ রানের মধ্যেই তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার সাজঘরে ফেরেন। ৫০ রানের কাছাকাছি যেতে লিটন কুমার দাস ও সাকিব আল হাসানও একই পথের পথিক হন। ৪৩ রানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ চার উইকেটের পতন ঘটলে কী আর ম্যাচ থেকে কিছু আদায় করে নেয়া সম্ভব হয়। এরপরও পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ চেষ্টা করেন। দুইজন মিলে ৪৭ রানের জুটিও গড়েন। আরও বড় জুটি হতে পারত। কিন্তু মুশফিক যে এমনই। অনেক আশা জাগানোর পর হতাশ করেন। দলের ৯০ রানের সময়, ইনিংসের ৬৩ বল বাকি থাকতে, ১০ ওভারের বেশি বাকি থাকতে আউট হয়ে যান। নিজেও বিপদের সময় ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি। ১০ ওভারের আগেই যেখানে ৯০ রান হয়ে গেছে, সেখানে মুশফিক থাকলে স্কোর অনেক মজবুত হতে পারত। এরপর দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করা মাহমুদুল্লাহ নিজেই দলের হাল ধরার চেষ্টা করে যান। কিন্তু আরিফুল হক সঙ্গটা ঠিকঠাক দিতে পারেননি। যখন ১২৫ রান হয়, মাহমুদুল্লাহও (৩৫) আউট হয়ে গেলে দলের বড় স্কোর গড়ার সব আশা শেষ হয়ে যায়। শেষে মেহেদী হাসান মিরাজ (১১) একটু এগিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু দল শেষ পর্যন্ত ১৪৩ রানের বেশি যেতে পারেনি। ৪৩ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও আশা থাকে। টি২০ ক্রিকেটটাই এমন। উইকেট নিয়ে বিশেষ চিন্তা থাকে না। ২০ ওভারে অলআউট হওয়াই কঠিন! কিন্তু যখন মুশফিক আউট হয়ে গেলেন, তখনই যেন বাংলাদেশের রানের গতিও দুর্বল হয়ে পড়ল। বাংলাদেশ যে রান স্কোরবোর্ডে জমা করে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সেই রান জেতার জন্য কঠিন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ভাগ্য এমনই সহায় হয়েছে স্বাগতিকদের, বৃষ্টি ঝড়ল। সেই বৃষ্টিতে টার্গেট রানও কমে আসল। ১১ ওভারে জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৯১ রান লাগল। ১০ রানের মধ্যেই মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিং দ্যুতিতে এভিন লুইস ও আন্দ্রে ফ্লেচারকে আউট করা গেছে। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে আন্দ্রে রাসেল ও মারলন স্যামুয়েলসের ৪২ এবং চতুর্থ উইকেটে রাসেল ও রোভমেন পাওয়েলের অবিচ্ছিন্ন ৪১ রানের জুটিতেই খেলা শেষ হয়ে যায়। মাঝপথে ২৬ রান করা স্যামুয়েলসে আউট করেন রুবেল। কিন্তু রাসেল (৩৫*) ও পাওয়েলকে (১৫*) আউট করা যায়নি। সহজভাবে জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা এমনভাবে ব্যাটিং করলেন। আউটগুলো এতটাই দৃষ্টিকটু ছিল যে আত্মবিশ্বাস দেখাই যায়নি। টেস্ট সিরিজ হারের পর ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর যে আত্মবিশ্বাস মিলেছিল, প্রথম টি২০তে তার ছিটেফোঁটাও মিলেনি। এলোমেলো খেলা হয়েছে। ব্যাটসম্যানরা যেন ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন। অথচ সিরিজ জয়ের আশা নিয়েই নেমেছিল বাংলাদেশ। টি২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানই বলেছিলেন, ‘আমরা টি২০ সিরিজটা নিয়ে অনেক আশাবাদী। এর বড় কারণ হচ্ছে, আমরা ওয়ানডে সিরিজটা বেশ ভালো করলাম। দেশের বাইরে নয় বছর পর একটা ওয়ানডে সিরিজ জেতা আমাদের জন্য বড় একটা অর্জন।’ সঙ্গে যোগ করেছিলেন, ‘আশা করি, এই আত্মবিশ্বাস টি২০ সিরিজে আমাদের কাজে আসবে। সবাই এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই খেলতে পারবে।’ কিন্তু সেই আত্মবিশ্বাস মেলেনি। তাতে করে প্রথম টি২০তেই হার হলো। এই ম্যাচে জয় পেয়ে সিরিজেও এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১-০ ব্যবধানে সিরিজে পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ। এখনও হাতে দুই ম্যাচ রয়েছে। সেই দুটি ম্যাচ মার্কিন মুল্লুকে হবে। ফ্লোরিডায় হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পর্ব শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। এখন মার্কিন মুল্লুকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দুটি ম্যাচ হবে ৫ ও ৬ আগস্ট ভোরে। এই দুটি ম্যাচ জিতে সিরিজ জেতার সুযোগ এখনও আছে। নতুন ভেন্যুতে এখন ভাগ্য ফিরলেই হয়। না হয়ে সিরিজে যে পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ, আর যে কোন একটি ম্যাচ হারলেই সিরিজ হার হয়ে যাবে।
×