ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জন্মের তিন বছর পর থেকেই শিকলে বাঁধা ফারেস আলী

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২ আগস্ট ২০১৮

জন্মের তিন বছর পর থেকেই শিকলে বাঁধা ফারেস আলী

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ জন্মের তিন বছর পর থেকেই শিকলে বাঁধা ফারেস আলী। ৩৪ বছর ধরে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধী এই যুবক কোন কথা বলতে পারে না। চোখেও কম দেখে। শুধু পরিবারের সদস্যদের কোন রকমে চিনতে পারে। ছোটবেলা সে খুব চঞ্চল থাকায় ছোট ছোট গাছপালা ভেঙ্গে ফেলে আনন্দ পেত। সেই থেকে দিনমজুর বাবা এমরান আলীপাড়া পড়শীর ক্ষতি করে দিতে পারে এই ভয়ে শিকল দিয়ে বাঁধা শুরু করে। এমরান আলীর তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে বাকপ্রতিবন্ধী ফারেস আলীর পায়ে পরানো শিকল আর খোলা হয়নি প্রায় ৩৪ বছর। ইতোমধ্যই পিতা এমরান আলী ঘোষণা দিয়েছে তার বড় ছেলে পাগল বলে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার দাদনচক গ্রামে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ও টাকাপয়সা না থাকায় পিতা এমরান কোন সন্তানকেই স্কুলে পাঠাতে পারেনি। বাঁধা ফারেস আলীকে রাখা হয়েছে একটি গোয়ালঘরে। সেখানেই একটি বাঁশের খুঁটির সঙ্গে দুই পায়ে লোহার শিকল দিয়ে বাঁধা রয়েছে। ৩৪ বছর ধরে একই ভাবে বেঁধে রাখার ফলে পয়ে শক্ত কড়া পড়ে গেছে। যেহেতু ফারেস আলী কথা বলতে পারে না, সেহেতু সারাদিন কাটে অমানবিক ভাবে। কয়েকটি চটের বস্তা দিয়ে তার বিছানা ও বালিশ এবং চটের বস্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সারাদিনে দু এক টুকরা বি¯ু‹ট ও সংস্থান হলে কিছু সাদা ভাত খেতে দেয়া হয়ে থাকে। অর্থ সঙ্কটের কারণে চিকিৎসা করাতে পারেনি পরিবারের কেউ। পিতা এরফান আলীর অভিযোগ সারাদিন কাজ করে যে পয়সা আসে তা দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে। চিকিৎসা করার কথা চিন্তাও করতে পারি না। এখন পর্যন্ত ছেলের চিকিৎসা করাতে কারও কোন সহযোগিতা মিলেনি। উপজেলা সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস জানান, তিনি খবর পেয়েছেন, যতদ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদিও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সচিবের বাড়ি এই উপজেলায় হলেও এখন পর্যন্ত আর্থিকভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে অনেকের বিশ্বাস ফারেস আলীর উন্নত চিকিৎসা হলে ভাল হয়ে যাবে। এখন অপেক্ষার পালা যে কোন প্রশাসন বিষয়টি দেখভালের ব্যবস্থা করলে হয়তবা ৩৪ বছর ধরে শিকলে বাঁধা ফারেস আলী মুক্তি পাবে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।
×