ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চৌগাছায় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২ আগস্ট ২০১৮

চৌগাছায় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘জমি আছে, ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ’ উপখাতে চৌগাছা উপজেলার সাড়ে ৫শ’ উপকারভোগীর বাড়ি নির্মাণে সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে কারা পাচ্ছেন সরকারী বরাদ্দের সেই বাড়ি, সেটি নিয়ে ধোয়াশা তৈরি হয়েছে। কারণ উপকারভোগীদের নামের তালিকা চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকাশ করেননি। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটেও পাওয়া যায়নি উপকারীভোগীদের নামের তালিকা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইবাদত হোসেনের নেতৃত্বে চলছে বাড়ি নির্মাণ কাজ। ‘যারা ঘুষ দিয়েছে, তাদেরই বাড়ি দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবাদত হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে উপকারভোগীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কাজ বাস্তবায়ন করছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি। কমিটির সদস্যরা হলেন- সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘জমি আছে, ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ’ উপখাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুই দফায় যশোরের চৌগাছা উপজেলায় ৫৫০টি গৃহনির্মাণ বাবদ সাড়ে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৭ মে ২৫০টি গৃহনির্মাণ বাবদ দুই কোটি ৫০ লাখ ও ৪ জুন ৩শ’টি গৃহনির্মাণ বাবদ ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি ঘর ( দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৬ ফুট ও প্রস্থ সাড়ে ১৫ ফুট, টিনের ছাউনি, বেড়া, মেঝে ইটের গাঁথুনি) নির্মাণ বাবদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে ২৯ জুলাই পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইট কিংবা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে উপকারভোগী ৫৫০ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। যারা টাকা দিয়েছে তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ। ঘুষের টাকা দিতে না পারায় বাড়ি পাননি চৌগাছা উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী। তিনি জানান, দুই ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে রাস্তার পাশে চার শতক জমিতে ঝুপড়ি ঘরে তার পরিবারের বসবাস। ঝড় বৃষ্টিতে অনেক কষ্টে মাথা গুঁজতে হয়। ভ্যান চালিয়ে কোন রকমে সংসার চলে। আমার পক্ষে এর চেয়ে ভাল বাড়ি করার সামর্থ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর তৈরি করে দিচ্ছে শুনে আশায় ছিলাম। গ্রামের কয়েকজন যুবক (দলীয় কর্মী) ১২ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিল। তারা বলল টাকা দিলে এক সপ্তাহের মধ্যে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হবে। কিন্তু টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই। ইয়াকুবের আক্ষেপ, ঘুষের টাকা দিতে না পারায় তালিকায় নাম ওঠেনি তার। শুধু ইয়াকুব আলী নয়, তার মতো অনেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বাড়ি পেতে ‘ঘুষ’ না দেয়ায় বঞ্চিত হয়েছেন।
×