ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম টি২০তে হারল সাকিবরা

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২ আগস্ট ২০১৮

প্রথম টি২০তে হারল সাকিবরা

মিথুন আশরাফ ॥ ডার্কওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিটাই একটা ‘ধাঁধা’। বৃষ্টি আইনে টার্গেট কমে যায়। কখনো বেড়ে যায়। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম টি২০ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টার্গেট কমে গেল। তাতে করে বৃষ্টি আইনে ৭ উইকেটে হারল বাংলাদেশ। সিরিজ জেতার আশা নিয়ে খেলতে নেমে প্রথম টি২০তে হেরে গেল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল সাকিববাহিনী। ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে বাংলাদেশ ১৪৩ রান করে। এরপর বৃষ্টির বাগড়ায় ১১ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে জিততে ৯১ রানের টার্গেট দাঁড় হয়। ৯.১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৯৩ রান করে জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অথচ ১১ ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ১০০। সমান ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জিততে লাগে ৯১ রান। বৃষ্টি আইনের কী মারপ্যাঁচ! এখন ৫ ও ৬ আগস্ট যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন মুল্লুকের ফ্লোরিডায় ম্যাচগুলো হবে। এই দুই ম্যাচে জিততে পারলে সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। যে কোন একটি ম্যাচ হারলে সিরিজ হার হবে বাংলাদেশের। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশ। দুর্দান্তভাবে নিজেদের মেলে ধরে। আত্মবিশ্বাসও ফিরে পায়। কিন্তু প্রথম টি২০তে সেই আত্মবিশ্বাসের ঝলকানির দেখা মিলল না। সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে টস জিতেই ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বোঝাই গেল, বাংলাদেশকে অল্পতে বেঁধে রেখে টার্গেট অতিক্রম করার দিকেই মনোযোগী ক্যারিবীয়রা। তাই করল। ব্যক্তিগত রানের খাতা খোলার আগেই তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার আউট হওয়া দিয়েই হোঁচটের শুরু হলো। একটি মাত্র ওভার করলেন স্পিনার এ্যাসলে নার্স। দলের, নিজের প্রথম ওভারেই তামিম ও সৌম্যকে সাজঘরে ফেরালেন। আউট হওয়ার ধরনগুলোও হাস্যকর দেখাল! দলের ৫ রানে প্রথম দুই উইকেট পড়ার পর লিটন কুমার দাস ও সাকিব আল হাসান মিলে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু ৪৩ রান হতেই আবার জোড়া আঘাত। এবার পেসার কিমো পলের গতির সামনে হার মানলেন ২৪ রান করা লিটন ও ১৯ রান করা সাকিব। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের এলোমেলো ব্যাটিংয়ে খাদের কিনারায় তখনই পড়ে গেল দল। এরপরও আশা থাকে। মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যে ব্যাটিংয়ে থাকেন। দুইজন মিলে দলকে সেই আশায় ভাসানও। ১০ ওভার না হতেই স্কোরবোর্ডে ৯০ রান জমাও হয়ে যায়। সুন্দরভাবে এগিয়ে যাওয়াই যেখানে যৌক্তিক ছিল। সেখানে মুশফিক বরাবরের মতো আশা জাগিয়ে হতাশায় ভোগালেন। দলের ৯০ রানের সময় আউট হয়ে গেলেন মুশফিক (১৫)। দল আরও বড় বিপদে পড়ে গেল। ৪ উইকেট হারানোর পর যে বিপদ ছিল, তা উতরে নেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন মুশফিক। উল্টো আরও দল বিপদে পড়ে যায়। মাহমুদুল্লাহ এরপর আরিফুল হককে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ১১৬ রান পর্যন্ত দুইজন উইকেটে টিকে থাকেন। এমন মুহূর্তে আরিফুল (১৫) সাজঘরে ফেরেন। ৯ রান পর মাহমুদুল্লাহও দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করে আউট হলে বড় স্কোর গড়ার আর কোন আশাই যেন থাকে না। তবুও মেহেদী হাসান মিরাজ (১১), নাজমুল ইসলাম অপু (৭) কিছুটা এগিয়ে নেন। দুই পেসার রুবেল হোসেন (২*) ও মুস্তাফিজুর রহমান (৩*) দলকে অলআউট হতে দেননি। ১৪৩ রান গড়ে বাংলাদেশ। যখন এই রান গড়ে বাংলাদেশ, তখনই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেতার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যায়। টি২০তে যে সেরা দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলীয় ১০ রানের সময় মুস্তাফিজের জোড়া আঘাতে একটু এলোমেলো হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতেই বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর যে ১১ ওভারে জিততে ৯১ রানের টার্গেট দাঁড় হয়, সেটিতে ভরসা থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। আন্দ্রে রাসেল (৩৫*) ও রোভমেন পাওয়েল (১৫*) ধুমধড়াক্কা ব্যাটিং করে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। মারলন স্যামুয়েলসের ২৬ রানের ইনিংসও সহজভাবে ম্যাচ জেতাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সহায়তা করে। প্রথম টি২০ জিতে সিরিজেও এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি২০তে বাংলাদেশকে যেন পাত্তাই দিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কেন এমনটি হলো? টি২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ব্যাটসম্যানদেরই দুষেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা শুরুতে উইকেট হারিয়েছি, এটা একটা সমস্যা ছিল। আরেকটা ব্যাপার হলো, আমরা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট হারিয়েছি। শুরুতে উইকেট হারানোর পরও আমার আর লিটনের একটা জুটি হয়েছিল। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আমরা পরপর দুই বলে ফিরে যাই, এটা একটা বড় ধাক্কা ছিল।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এরপর মুশফিক ভাই, (মাহমুদুল্লাহ) রিয়াদ ভাইয়ের একটা জুটি হয়েছিল, পরে মুশফিক ভাই আউট হয়ে গেল। আমরা যেভাবে নিয়মিত উইকেট হারিয়েছি তার জন্য মোমেন্টামটা পাইনি। তাই বড় স্কোর করতে পারিনি। যেমন উইকেট ছিল, আর এটা যেমন মাঠ এখানে অন্তত ১৮০ রান যদি করতে না পারি, তাহলে লড়াই করাই কঠিন। সেদিক থেকে আমরা অনেক রান কম করেছিলাম।’ কম রান করায় প্রথম টি২০তে সহজেই হারও হলো বাংলাদেশের।
×