ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাসমালিক গ্রেফতার ॥ চতুর্থ দিনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২ আগস্ট ২০১৮

বাসমালিক গ্রেফতার ॥ চতুর্থ দিনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক বাসচালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চতুর্থ দিনেও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অচল হয়ে পড়েছিল ঢাকা। এদিকে বিক্ষোভকারীদের সব দাবি সরকার মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের আড়ালে কেউ যাতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার পর পরই জাবালে নূরের সেই ঘাতক বাসটির মালিক শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। আগে গ্রেফতার হওয়া বাসটির চালক মাসুম বিল্লাহকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সন্ধ্যায় নৌমন্ত্রী শাজাহান খান দিয়া খানম মীমের বাসায় গিয়ে তার পবিবারকে সান্ত¦না দেয়ার পাশাপাশি সব শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এদিকে বুধবারও ঢাকা ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গা বিক্ষোভ হয়েছে। দু-চারটে ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া ঢাকার রাস্তায় কোন গণপরিবহন ছিল না। ফলে মানুষের দুর্ভোগ ছিল চরমে। পুরো ঢাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, অতীতে এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ঘাতকদের বিচার হয়নি। আর যাতে এমন না হয়, এজন্যই এবার তারা পুরো ঢাকায় বিক্ষোভ করছে। বিক্ষোভকালে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পুরো ঢাকায় অবস্থান নিলেও কোথাও কোন ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। উপরন্তু বিক্ষোভকারীরা এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, খাবারের গাড়ি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত যানবাহন নিজ উদ্যোগে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে। পুরো ঢাকা অচল থাকলে খোলা ছিল সব অফিস আদালত, বিপণি বিতান, দোকানপাটসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একটি ঢিল ছোড়ারও ঘটনা ঘটেনি। সাধারণ মানুষের সঙ্গেও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিআরটিএ রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অভিযান চালিয়েছে। এছাড়া বুধবার বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ ঘাতক জাবালে নূর পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করেছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অচল ছিল ঢাকা ॥ গত ২৯ জুলাই রবিবার দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীবাহী জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী। ঘটনার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। তারই রেশ ধরে বুধবার সকাল থেকেই আবারও ঢাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। বুধবার সকাল দশটা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সেসব এলাকার কলেজের শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসে। তারা রাস্তায় অবস্থান নেয়। সরেজমিনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মিলেছে নানা চিত্র। সকালে মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কোন গণপরিবহন নেই। আগে কলেজটির উল্টো দিকে লাইন করে ২৫/৩০টি বিভিন্ন কোম্পানির বাস দাঁড় করিয়ে রাখত। বুধবার তা ছিল। মঙ্গলবার কলেজের উল্টো দিকে রাখা জাবালে নূর পরিবহনের অন্তত ২৫টি যানবাহন বিক্ষোভের কবলে পড়ে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এলাকাটিতে মিরপুর সরকারী বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। মিরপুর-১ নম্বর, সনি সিনেমা হলসহ আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ করেছে চিড়িয়াখানা রোডে অবস্থিত বিসিআইসি কলেজ, কর্মাস কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা রাস্তা অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখায়। এ সময় রাস্তায় কোন গণপরিবহন দেখা যায়নি। এছাড়া মিরপুর-১০, শ্যামলী, টেকনিক্যাল মোড়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে, শ্যামলী শিশু মেলার সামনে বিক্ষোভ দেখায় মোহাম্মদপুর সরকারী কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকারীদের পরনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোশাক ছিল। তারা আসাদ গেট পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখায়। অন্যদিকে ধানম-ি সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের সামনে, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে, ল্যাবএইডের সামনের রাস্তায়, নিউমার্কেট, ধানম-ি-২৭ নম্বর, রাইফেলস স্কয়ারসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। তারা পুরো রাস্তায় অবস্থান নেয়। তবে বিক্ষোভকারীদের কারও সঙ্গে কোন খারাপ ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। বিক্ষোভে ছাত্রছাত্রী সবাই অংশ নিয়েছিল। একদিকে চলছিল বিক্ষোভ আরেকদিকে এলিফ্যান্ট রোডের সব দোকানপাট খোলা ছিল। কয়েক দোকানির সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সামনেই ঈদ। এজন্য তারা সকাল থেকেই দোকান খুলে রেখেছেন। তাদের দোকানের সামনে দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল গেলেও কোন বিক্ষোভকারী একটি পাথর বা ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারেনি। যা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়। এজন্য যখন মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা যাচ্ছিল, তাদের হাততালি দিয়ে সমর্থন দিচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থা ধানম-ি, কলাবাগান, মৌচাক, শান্তিনগরসহ ঢাকার অধিকাংশ এলাকায়ই। ঢাকার রাস্তায় কোন গণপরিবহন চলেনি। তবে প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়ি চলেছে অনায়াসে। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ বাধা দিলেও অনেকেই পরে গাড়িগুলোকে নিরাপদে গন্তব্যে যেতে দিয়েছে। এছাড়া এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়িসহ অন্যান্য জরুরী সেবার গাড়ি অনায়াসে চললেও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সিদ্বেশ্বরী, বেইলী রোড, শান্তিনগর, মৌচাকসহ আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ করেছে আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে অনেক পিতামাতাও যোগ দিয়েছেন। তারা অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোন বিক্ষোভ দেখাননি। তাদের সশরীরে উপস্থিত থেকে সমর্থন দেয়ার বিষয়ে অনেকেই বলছিলেন, যে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, তারা তো আমাদেরও সন্তান হতে পারত। তাই তাদের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। এজন্যই ছেলেমেয়ের আন্দোলনের সঙ্গে মানসিকভাবে যোগ দিয়েছি। এদিকে ধারাবাহিক বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় চালকদের অধিকাংশই মোবাইল ফোন বন্ধ করে নিরাপদে চলে গেছেন। চালকের অভাবে অনেক বাস মালিক রাস্তায় বাস নামানোর ইচ্ছে থাকলেও নামাতে পারেননি। তবে সাভার থেকে যাত্রাবাড়ীগামী এমএন লাভলী, বাহনসহ কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির বাস রাস্তায় চলাচল করেছে। ঢাকার রাস্তায় সবচেয়ে বেশি চলাচল করেছে বিআরটিসির দুতলা বাস। বিক্ষোভকালে নারায়ণগঞ্জে আরেক শিক্ষার্থী পিকআপ চাপায় আহত ॥ বিক্ষোভ করার সময় ঢাকার অদূরে শনিরআখড়ায় পিকআপের নিচে চাপা পড়ে আহত হয়েছে সরকারী তুলারাম কলেজের ছাত্র ফয়সাল। সে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রোএ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের ম্যানেজার ডাঃ সালাউদ্দিন ভুইয়া জানান, ফয়সাল শঙ্কামুক্ত। তবে তার বাম পা, হিপ জয়েন্ট ও ঠোঁটে আঘাত লেগেছে। ফয়সালের পিতা শামসুল হক সাংবাদিকদের জানান, তার ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। জানা গেছে, বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বাস আটকে চালকদের লাইসেন্স দেখছিল। যেসব চালকের লাইসেন্স নেই তাদের গাড়ি রাস্তার পাশে রাখতে বলছিল। এ সময় রাস্তা ফাঁকা পেয়ে উল্টোপথ দিয়ে একটি পিকআপ দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময় ফয়সালকে চাপা দেয়। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পিকআপটি আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানান, ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান। শিক্ষার্থীরাই পরীক্ষা করল গাড়ির কাগজপত্র ॥ নিরাপদ সড়ক ও বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে। যেসব চালক সরল বিশ্বাসে গাড়ির চাহিদা মোতাবেক কাগজপত্র নেই বলে জানিয়েছেন, তাদের গাড়ি অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে কোন গালাগাল, ভাংচুর বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়নি। ঢাকার যেসব এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে, প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই ঘটেছে এমন ঘটনা। বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে ছিল প্রতিবাদী বক্তব্য সংবলিত পোস্টার ॥ ‘নির্বিচারে হত্যার পর পরিহাসের হাসি কেন?, ঘুরে বেড়ায় অপরাধী মার খায় প্রতিবাদী, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, ক্ষমা চেয়ে কী হবে, ভাঙ্গা গাড়ি সরাবা কবে, ৫-জি চাই না নিরাপদে ঘরে ফিরতে চাই, ৯ দফা মেনে নাও রাজপথ ছেড়ে দেবো, এমন অনেক সেøাগান সংবলিত প্রতিবাদী পোস্টার ছিল বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে। বিক্ষোভকারীদের দাবি ॥ বেপরোয়া চালককে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ব্রেকার দিতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালনা বন্ধ করতে হবে। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না। ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের দাবি মোতাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার ॥ সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। সরকার শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে। কারণ তাদের দাবি যৌক্তিক। ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে রাজধানী অচল হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বুধবার সচিবালয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবি মেনে নিয়েছে। কারণ তাদের দাবি যৌক্তিক। তিনি বলেন, দেশব্যাপী স্টার্টিং পয়েন্টে (বাস টার্মিনাল) গাড়ির ফিটনেস, রুট পারমিট, ড্রাইভারের লাইসেন্স পরীক্ষা করা হবে। লাইসেন্সবিহীন কোন ড্রাইভার রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবে না। যারা অন্যায় করেছে, যারা ঘাতক, আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে তারা পায়, সেই ব্যবস্থা আমরা করছি। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের এই বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, যে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রাজপথে বিক্ষোভ করছে, তারাও ভাঙচুরে পক্ষে নয়। কিন্তু গত চার দিনে মোট ৩০৯টি গাড়ি ভাঙচুরের শিকার হয়েছে, আটটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর এজন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহলকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান খান কামাল। জাবালে নূর নামের সেই ঘাতক বাসটির মালিক গ্রেফতার ॥ দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে হত্যা করা সেই আলোচিত জাবালে নূর নামের ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৯২৯৭ নম্বরের বাসটির মালিক মোঃ শাহাদাৎ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বুধবার তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। অন্যদিকে ঘাতক বাসটির চালক মাসুম বিল্লাহকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। দুর্ঘটনা নিহত মীমের পিতা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করেন। নিহত দিয়ার বাসায় নৌমন্ত্রী, হাসির জন্য ক্ষমা চাইলেন ॥ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর একজন দিয়া খানম মীমের বাসায় গিয়েছিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নৌমন্ত্রী মহাখালীর দক্ষিণপাড়ায় দিয়াদের বাসায় যান। প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করে দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর ফকির এবং স্বজনদের সান্ত¡না দেন। সেখানে দিয়ার বন্ধু-বান্ধবীসহ অন্য শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিল। দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর ফকির জানান, আমি মন্ত্রীকে রাস্তায় যেসব অদক্ষ ড্রাইভার আছে তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে বলেছি। ফিটনেসবিহীন বাসগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। মন্ত্রী এসব করবেন বলে আশ্বাস দেন। তিনি আরও জানান, ঘটনার পরদিন তার হাসি নিয়েও ব্যাখ্যা দেন মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেছেন, অন্য একটা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। সে সময় মন্ত্রী হেসেছিলেন। দুর্ঘটনার বিষয়ে উত্তর দেয়ার সময়ও সেই হাসিটাই ছিল। ঘটনার জন্য মন্ত্রী আমি ছাড়াও সবার কাছে চেয়েছেন। শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের ধৈর্য ধরার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর ॥ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও মর্মবেদনা প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় সহপাঠীর মৃত্যুতে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ আমরা শিক্ষা পরিবারের সকলে শোকার্ত। বুধবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক তাৎক্ষণিক সভায় তিনি শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করে এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, উক্ত দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং সড়ক পরিবহনকে আরও সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সে অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং দোষীদের গ্রেফতার করেছে। সংশ্লিষ্ট দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়ে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ অব্যাহত আছে। সভায় মন্ত্রী শোকার্ত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শোক সংবরণ করে শান্ত থাকা ও ধৈর্য ধারণ করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষক, অভিভাবক ও অন্যদের শিক্ষার্থীর পাশে থেকে শিক্ষা কার্যক্রমে সহয়োগিতা করার জন্য ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান। সভায় শিক্ষাসচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবগণ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ মাহবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ॥ বুধবার সচিবালয় থেকে বাংলামোটরে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সামনে অবস্থান নেয়। পরে মন্ত্রী নেমে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। মন্ত্রী দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় চরম কষ্ট পেয়েছেন বলে জানান। সড়ক পরিবহন আইনে সম্মতি দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয় ॥ সড়ক পরিবহন আইনে সম্মতি সম্পন্ন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার ভেটিং সম্পর্কিত নথিতে অনুমোদন দেন। নথিটি এরপর সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় যে শাস্তি হওয়া উচিত, তার সর্বোচ্চটাই থাকছে সড়ক পরিবহন আইনে।
×