ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাউথ এশিয়ান অনুর্ধ-১৫ মহিলা ফুটবল

শিরোপা ধরে রাখাই লক্ষ্য ছোটনের শিষ্যাদের

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১ আগস্ট ২০১৮

শিরোপা ধরে রাখাই লক্ষ্য ছোটনের শিষ্যাদের

রুমেল খান ॥ সৎ পন্থায় সাফল্য অর্জন করতে এরজন্য শর্টকাট কোন রাস্তা নেই। সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছাতে গেলে অতিক্রম করতে হয় একটির পর একটি ধাপ। করতে হয় নিরন্তর সুকঠিন সাধনা। এরজন্য দরকার সঠিক-সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, সদিচ্ছা, আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য, পরিশ্রম-ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা, নিরবচ্ছিন্ন-দীর্ঘমেয়াদী উন্নত প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত অনুশীলন, প্রয়োজনীয় অর্থ এবং সবশেষে ভাগ্যদেবীর কিঞ্চিৎ কৃপা। এর সবগুলোই পাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। কি অ-১৪, কি অ-১৫, কি অ-১৬, কি সিনিয়র জাতীয় দল... প্রতিটি দলই পাচ্ছে অভাবনীয়-নজরকাড়া সাফল্য। এই সাফল্য কিন্তু মোটেও অপ্রত্যাশিত বা আকস্মিক সাফল্য ছিল না। মেয়েদের নিয়ে গত বছর তিনেক ধরেই ক্যাম্প চলছে সুযোগ্য কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের অধীনে। তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, উন্নত নিউট্রিশন, ফিজিও, চিকিৎসা, ফিটনেস নিয়ে কাজ করা, বিদেশে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ ও অনুশীলন করা... সবকিছুই হয়েছে এবং হচ্ছে। এর সুফলও এসেছে হাতে-নাতে। গত চার বছরে তিনটি বয়সভিত্তিক দল পাঁচটি শিরোপা জিতেছে। এর সুপ্রভাব পড়তে শুরু করেছে সিনিয়র বা জাতীয় দলেও। ২০১৬ মহিলা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলেছে জাতীয় দল। হয়েছে রানার্সআপ। আগামীতে এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শিরোপার স্বপ্নে বিভোর তারা। তবে তার আগে আরেকটি শিরোপা জিততে চায় তারা। আগামী ৯ আগস্ট শুরু হচ্ছে সাফ অনুর্ধ-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসর। শিরোপা ধরে রাখাই মূল লক্ষ্য গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যাদের। প্রস্তুতির শেষদিকে এসে গোলরক্ষদের দিকে দেয়া হচ্ছে বাড়তি মনোযোগ। ভুটানের কন্ডিশনে সবাই সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে খেলতে পারলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব বলেই মনে করছেন কোচ ও ফুটবলাররা। তবে আসরের আগে দু’একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারলে আরও ভাল হতো বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের কৃত্রিম ঘাসের বুকে প্রথমবারের মতো আয়োজিত অনুর্ধ-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয় করেছিল বাংলার বাঘিনীরা। ভারতকে হারিয়ে দাপুটে এ জয় দেশের নারী ফুটবলকে দিয়েছিল আরও একটু এগিয়ে। বছর না ঘুরতেই (প্রায় আট মাস) আবারও এসেছে সেই একই আসর। এবার ভেন্যু দেশের বাইরে, ভুটানে। পাহাড়ে ঘেরা নৈসর্গিক সৌন্দ্যর্যের এ লীলাভূমিতে টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট হিসেবে আবারও বিজয় নিশান ওড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৫ জাতীয় নারী ফুটবল দল। আসরের আগে চলছে কঠোর অনুশীলন। এবার গ্রুপে বাংলাদেশের দুই প্রতিপক্ষ পাকিস্তান ও নেপাল। গ্রুপপর্বের বাধা পেরোতে খুব একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে না তহুরাদের। গত আসরে খেলা দলের অনেক সদস্যই এবারও আছে দলে। নিঃসন্দেহে এটা বাড়তি সুবিধা দেবে কোচ ছোটনকে, কোন সন্দেহ নেই। প্রস্তুতি নেয়ার পালা প্রায় শেষ। তবে প্রতিবেশী কোন দেশের সঙ্গে যদি কোন একটা ম্যাচ খেলা যেত তবে আরও ভাল হতো বলে মনে করেন বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি। তিনি বলেন, ‘ভুটানের কন্ডিশন একটু আলাদা। প্রতিটি ম্যাচই হিসেব করে খেলতে হবে। মেয়েরা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে ভারত বা ভুটানের সঙ্গে যদি দু’একটা ম্যাচ খেলা যেত, তাহলে ওদের শক্তিমত্তা ও কৌশল সম্পর্কে আরও একটু ধারণা পাওয়া যেত।’ সবগুলো ম্যাচই হবে চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে। আর্টিফিসিয়াল টার্ফের কথা মাথায় রেখে নিয়মিত বাফুফের টার্ফে অনুশীলন করছে ছোটন-শিষ্যারা। এবার বাড়তি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে গোলরক্ষকদের দিকে। কারণ কয়েক মাস আগে হংকংয়ে চারজাতি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে গোলরক্ষকরা। তাই এবারও চমক দিতে চায় মাহমুদা, রূপনারা। বাংলাদেশের মেয়েরা এ পর্যন্ত জিতেছে পাঁচটি শিরোপা। এর আগে তারা ২০১৫ সালে নেপালে ‘এফসি অ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ’ এবং ২০১৬ সালে তাজিকিস্তানে একই দল একই আসরের শিরোপা জিতেছিল। এছাড়া ২০১৬ সালে এএফসি অ-১৬ আসরের আঞ্চলিক বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল দেশের মাটিতে। তারপর সর্বশেষ এপ্রিলে হংকংয়ে জেতে চার জাতি আমন্ত্রণমূলক অ-১৫ ফুটবলের শিরোপা। বলাইবাহুল্য, প্রতিটি দলের ও শিরোপাজয়ের মূল কারিগর ছিলেন কোচ ছোটন। এবার ভুটানেও কী দলকে শিরোপা জেতাতে পারবেন তিনি?
×