ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ড-ভারত হাই ভোল্টেজ টেস্ট দ্বৈরথ

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১ আগস্ট ২০১৮

ইংল্যান্ড-ভারত হাই ভোল্টেজ টেস্ট দ্বৈরথ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্ট ক্রিকেটে ‘হাইভোল্টেজ’ বিষয়টা বিলুপ্তির পথে। কারণ প্রতিটি দেশ এখন নিজেদের মাটিতে মনের মতো পিচ তৈরি করে অনায়াসে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করছে। ক’দিন আগেই যেমন দুর্ধর্ষ প্রোটিয়াদের হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডোবাল দুর্বল লঙ্কানরা। তার আগে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ঐতিহ্যের এ্যাশেজে ভরাডুবি ইংলিশদের। তবু এই সিরিজটাকে ‘হাইভোল্টেজ’ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কারণ সাদা পোশাকে দারুণ সফল বিরাট কোহলি এ্যান্ড কোং। অনেকেই বলছেন, ‘নাম্বার ওয়ান’ (র‌্যাঙ্কিংসেরা) দলটির ব্যর্থতার ইতিহাস ঘোচানোর এটাই সেরা সুযোগ। তবে বিলেতে ৫৭ টেস্টের ৪৩টিতে হারা সফরকারীদের জন্য কাজটা মোটেই সহজ হবে না। বার্মিংহামে নিজেদের ঐতিহাসিক ১০০তম টেস্ট স্মরণীয় করে রাখতে চাইবে জো রুটের দল। প্রস্তুত কিংবদšিীতুল্য দুই তারকা পেসার জেমস এ্যান্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রডও। ঐতিহাসিক এ্যাশেজের বাইরে এখন আর পাঁচ টেস্টের দীর্ঘ সিরিজ নেই বললেই চলে। সেখানে একদিকে ক্রিকেটের জন্মদাতা কুলিন ইংল্যান্ড, অন্যদিকে অঘোষিত মোড়ল ভারতের মধ্যকার এই দ্বৈরথ ঘিরে তাই থাকছে বাড়তি আকর্ষণ। যেখানে আলোচনার বিষয়বস্তুও কম নয়। শেষবার বিলেতের মাঠে ভারতের হয়ে ১৯ উইকেট নিয়ে জেমস এ্যান্ডারসনের সঙ্গে যুগ্মভাবে সিরিজসেরা হয়েছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। এবার চোটের জন্য ভুবি প্রথম ৩ টেস্টে দলের বাইরে তিনি। দেশের মাঠে ভারতের বিরুদ্ধে এটাই এ্যান্ডারসনের শেষ টেস্ট সিরিজ। আর ১০টি উইকেট পেলেই টেস্টে তার উইকেট সংখ্যা ছোঁবে ৫৫০-এর ম্যাজিক ফিগার। এছাড়া ভারতের বিপক্ষে শেষ দুটি সিরিজে ইংলিশদের অধিনায়ক ছিলেন এ্যালিস্টার কুক। এবার ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব জো রুটের কাঁধে। দুটি সিরিজেই ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান এসেছিল রুটের ব্যাট থেকে। নতুন দায়িত্ব কাঁধে রুট কি সেই পারফমেন্সের পুনরাবৃত্তি করতে পারবেন? সিরিজে নতুন কীর্তির সামনে দাঁড়িয়ে সুপার কোহলি। অধিনায়ক হিসেবে ২১ টেস্টে জিতে সৌরভ গঙ্গুলীর সঙ্গে তার রেকর্ড এখন ঠিক সমানে সমান। আর একটি টেস্ট জিতলেই সৌরভকে পেছনে ফেলে ভারতের দ্বিতীয় সফলতম টেস্ট অধিনায়ক হওয়ার হাতছানি বিরাটের সামনে। এছাড়া ভারতের দুই উইকেটরক্ষকই গত দুই সিরিজে ছিলেন না। ঋষভ পন্থের প্রথম টেস্ট সিরিজ এটি। দীনেশ কার্তিক শেষবার ইংল্যান্ডের মাঠে টেস্ট খেলেছিলেন ২০০৭-এ। সুখস্মৃতির ৩ ম্যাচের সেই সিরিজটা কিন্তু ১-০তে জিতেছিল ভারত। ৬ ইনিংসে ২৬৩ রান করে কার্তিক ছিলেন সেবার সফরকারীদের সর্বোচ্চ স্কোরার। এরপর ইংল্যান্ডের মাঠে শেষ দুই সিরিজেই ভারত হেরেছে। এই সফরে তাই ভারতের অন্যতম কা ারী হতে পারেন আইপিএল মাতিয়ে ফের জাতীয় দলে ফিরে আসা উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। নিয়মিত টেস্ট উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমানের ইনজুরিতে একাদশে নবীন পন্থের তুলনায় তিনিই বেশি এগিয়ে থাকবেন। ইংল্যান্ডে ৫৭ টেস্টের মাত্র ৬টিতে জিতেছে সফরকারীরা। হেরেছে ৪৩ বার। এই পরিসংখ্যান শোধরানোর সুযোগ কোহলিবাহিনীর সামনে। আজ প্রথম টেস্ট যে মাঠে, সেই এজবাস্টনেই ২০১১ সালে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ৭১০ রান করেছিল ইংল্যান্ড। এই মাঠে এটাই সর্বোচ্চ স্কোর। ম্যাচে ইনিংস ও ২৪২ রানে হেরেছিল ভারত। কোহলিরা নিশ্চয়ই এই ফলাফলের পুনরাবৃত্তি চাইবেন না। চার বছর পর ইংল্যান্ডের মাঠে তাদের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে ভারত। শেষ চার বছরে বেশ কিছু বদল এসেছে দু’দলেই। ২০১৪ সালে সেই সিরিজ হারলেও ২০১৬-১৭ ফিরতি সিরিজে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে আবার ‘হোয়াইটওয়াশ’ করেছিল ভারত। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা ভারতীয় জায়গা ধরে রাখতে হলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজটা জিততেই হবে। কারণ ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই মুহূর্তে ২৯ ম্যাচ খেলে ভারতের পয়েন্ট ৩৬৩৪। রেটিং ১২৫। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে ১৯ রেটিংয়ে এগিয়ে। অন্যদিকে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও পয়েন্টে ভারতের থেকে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৯৭ রেটিং নিয়ে পঞ্চম স্থানে সিরিজে ভারতের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংলিশরা। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের ভয়াবহ রোদ ও গরমে পিচের চরিত্রে বদল আসতে পারে, অনেকের ধারণা এমনই। কিন্তু দু’দিন আগে হঠাৎ করেই বৃষ্টির কারণে সমীকরণে পরিবর্তন হতে পারে। মেঘলা আবহাওয়া হলে তুখোড় দুই পেসার এ্যান্ডারসন ও ব্রডের বোলিং তোপের মুখে পড়তে হবে সফরকারীদের। সেখানে দলের ও নিজের অতীত ব্যর্থতা মুছে ফেলতে অধিনায়ক কোহলির ব্যাটিংয়ের ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করবে। বিশ্বের সর্বত্র শাসন করলেও ইংল্যান্ডে কোহলির ব্যক্তিগত রেকর্ড মোটেই ভাল নয়। বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হয়েও এখনও ইংল্যান্ডে নিজেকে প্রমাণ করা বাকি ভারত অধিনায়কের। ২০১৪তে তার খেলা একমাত্র পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মাত্র ১৩৪ রানই করেছিলেন তিনি। গত পাঁচ বছরে ভারত ছ’টির মধ্যে মাত্র একটিই টেস্ট সিরিজ জিততে পেরেছে এশিয়ার বাইরে। তাও আবার রীতিমতো হারিয়ে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। ইংল্যান্ডের মাটিতে ভারতের টেস্ট রেকর্ড আশাব্যঞ্জক নয়। ৫৭টি ম্যাচের মধ্যে ছ’টিতেই মাত্র জিতেছে ভারত এবং তার মধ্যে রয়েছে তিনটি সিরিজ জয়। তাও শেষ সিরিজ জয় সেই ২০০৭-এ, আগের দুটি ১৯৭১ ও ১৯৮৬ সালে।
×