ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপের আগেই পাঁচ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে মাশরাফিদের

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১ আগস্ট ২০১৮

বিশ্বকাপের আগেই পাঁচ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে মাশরাফিদের

মিথুন আশরাফ ॥ আর ১০ মাস বাকি। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ শুরু হবে ৩০ মে। শেষ হবে ১৪ জুলাই। ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে হবে বিশ্বকাপ। এ বিশ্বকাপের আগে মাশরাফিবাহিনী পাঁচ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হচ্ছে। আসরে ভাল করতে হলে এর বিকল্প কোন পথও খোলা নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজেও যে দেখা গেছে পাঁচ স্থানে ভালই দুর্বলতা আছে বাংলাদেশের। সেই দুর্বলতাগুলো দূর করতে না পারলে বিশ্বকাপের মিশন সফলভাবে শেষ করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিশ্বকাপের আগেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ওপেনার তামিম ইকবালের একজন যোগ্য সঙ্গী, ভাল ফিনিসার, নির্ভরযোগ্য স্লগ ওভার বোলার, নতুন বলের জুটি, বেঞ্চ ক্রিকেটারের সামর্থ্য নিয়ে ভালভাবেই ভাবতে হবে। ইএসপিএন ক্রিকইনফো এ নিয়ে একটি দুর্দান্ত রিপোর্ট করে। সেই রিপোর্টে তারা বাংলাদেশের দুর্বলতাগুলো তুলে ধরে। যে দুর্বলতাগুলো বিশ্বকাপের আগে দূর করা খুবই জরুরী। বিশ্বকাপে এবার কোন গ্রুপ নেই। ১০টি দল পরস্পরের বিপক্ষে লড়াই করবে। চারটি দল পয়েন্ট তালিকায় ওপরে থেকে খেলবে সেমিফাইনালে। এরপর হবে ফাইনাল। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলবে ২ জুন ওভালে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। পরেরটি ৫ জুন, একই ভেন্যুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এই একটি ম্যাচই দিবারাত্রিতে খেলবে বাংলাদেশ। ৮ জুন ‘পয়া ভেন্যু’ কার্ডিফে বাংলাদেশ খেলবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ১১ জুন ব্রিস্টলে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ১৭ জুন টন্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলবেন মাশরাফিরা। ২০ জুন ট্রেন্টব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলার পর ২৪ জুন সাউদাম্পটনে বাংলাদেশ পাবে আফগানিস্তানকে। উপমহাদেশের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানকে বাংলাদেশ পাচ্ছে প্রাথমিকপর্বের প্রায় শেষ দিকে। ২ জুলাই বার্মিংহামে ভারতের বিপক্ষে লড়বে বাংলাদেশ। ৫ জুলাই লর্ডসে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ৯ জুলাই ম্যানচেস্টারে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল, ১১ জুলাই বার্মিংহামে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। ১৪ জুলাই লর্ডসে ফাইনাল। নকআউট পর্বে বাংলাদেশের খেলার সুযোগ হবে কি না সেটি অবশ্য এখনই বলার উপায় নেই। তবে সেই সুযোগ করে নিতে চাইলে দলতো ভালভাবে গুছিয়ে নিতে হবে। দল গুছাতে হলে বাংলাদেশ দলকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দ্রুতই খুঁজে বের করতে হবে। ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী ॥ তামিমের ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে এনামুল হক বিজয় নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। দলের হয়ে খেলা সর্বশেষ সাত ওয়ানডেতে তার রান মোটে ৮৮। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচে বিজয় ওপেনে ব্যাট করতে নেমে মোটে ৩৩ রান করতে পেরেছেন। নির্বাচকরা চলতি বছর বাংলাদেশের ওয়ানডে দল থেকে সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস এবং ইমরুল কায়েসকে বসিয়ে রেখে বিজয়কে সুযোগ দেন। কিন্তু তিনি সুযোগ নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ। এর আগে অবশ্য তামিমের সঙ্গী হিসেবে ২০১৬-২০১৭ সালে বাংলাদেশ ইমরুল, সৌম্য, লিটস দাসকে পরীক্ষা করে দেখেছে। এছাড়া মোহাম্মদ মিঠুনকেও দেয়া হয়েছে সুযোগ। ব্যর্থ হয়েছেন সবাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি২০ সিরিজে বাংলাদেশ আবার তামিমের সঙ্গী বাছতে সৌম্য এবং লিটন দাসের কাছে ফিরে যাবে। বাংলাদেশ এই দু’জনের মধ্যেই কোন একজনকে তামিমের সঙ্গী হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে পারে। এছাড়া বেঞ্চে বসে থাকা নাজমুল ইসলাম শান্তকেও পরীক্ষা করে দেখতে পারে। ফিনিসার সমস্যা ॥ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ফিনিসার হিসেবে খেলার পরে ওই জায়গায় সমস্যা কিছুটা কম ছিল। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে আবার সাব্বির রহমান রুম্মন এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে শেষটা টানার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সাব্বিরের খারাপ ফর্ম এবং মোসাদ্দেকের বড় শট খেলতে না পারার কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে শেষ সময়ে ভুগেছে। শেষ ওয়ানডেতে তাই সাব্বির-মোসাদ্দেকের আগে মাশরাফিকে ব্যাট করতে দেখা গেছে। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও শেষ সময়ে ব্যাট হেসেছে মাহমুদুল্লাহর। তিনি ২১৪.২৯ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন সদ্য শেষ হওয়া ওয়ানডে সিরিজে। তাই মাহমুদুল্লাহকে শেষের ৭-৮ ওভারের দায়িত্ব দেয়াটা বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ হতে পারে। এছাড়া তার পরে বড় শট খেলতে পারে এমন কাউকে দলে রাখা যেতে পারে। মোসাদ্দেকের ব্যাটিং অর্ডারটাও করা যেতে পারে মাহমুদুল্লাহর আগে। নির্ভরযোগ্য সøগ ওভার বোলার ॥ গত তিন বছরে মুস্তাফিজুর রহমান থাকায় শেষের দিকের বোলিং নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা কিছুটা কম ছিল। শেষ পাঁচ ওভারে কম রান রেটের বোলারদের মধ্যে মুস্তাফিজ ছিলেন দুইয়ে। তার ওপরে ছিলেন কেবল রশিদ খান। তবে ইনজুরিতে জর্জরিত মুস্তাফিজ তার সেরা ছন্দে নেই। অন্যদিকে সøগ ওভারে বাংলাদেশের ভরসা রুবেল হোসেন শেষ পাঁচ ওয়ানডে ম্যাচে শেষ পাঁচ ওভারে ১০.৪০ করে রান দিয়েছেন। শেষ দুই বছরে শেষ পাঁচ ওভারে তার গড় রান ৭.৮৯ করে। তাসকিন আহমেদও শেষের দিকে বেশ খরুচে। কিন্তু তিনি সøগ ওভারের উইকেট টেকার হিসেবে পরিচিত। তিনিও পেস আক্রমণ বিভাগ থেকে ছিটকে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের জন্য তাই সøগ ওভার দুশ্চিন্তা না হয়ে পারে না। শেষের দিকে নির্ভরযোগ্য বোলারের অভাবে বাংলাদেশ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচও হেরেছে বাংলাদেশ। নতুন বলের জুটি ॥ ওয়ানডে ক্রিকেটে নতুন বলে বাংলাদেশের সেরা বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ। রানরেটে হিসেবতো তাই বলে। উইকেট নেয়ার বিচার বাদ দিয়ে নতুন বলে তার রান রেটের দিকে তাকালে সেটাই প্রমাণ হয়। প্রথম পাওয়ার প্লেতে মিরাজের ওভার প্রতি রান রেট মোটে ৩.৭৩ করে। উপমহাদেশীয় উইকেট বিবেচনায় সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ, এরপর দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও মিরাজকে শুরুতে নতুন বলে বল করতে দেখা যেতে পারে। তবে ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে মেহেদীকে নতুন বলে বল করানো বিদপজ্জনক হতে পারে বাংলাদেশের জন্য। এর পরপরই চলে আসবে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ। সেখানেও স্পিনার দিয়ে নতুন বলে বল করানো কঠিন হয়ে পড়বে। আর তাই বাংলাদেশকে অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে নতুন বলে পেস আক্রমণের জুটি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করে রাখতে হবে। বেঞ্চ ক্রিকেটারের সামর্থ্য ॥ বিগত ১০ মাসে বাংলাদেশ দলে পুরনো খেলোয়াড়দের সঙ্গে নতুন বেশ কিছু ক্রিকেটার দেখা গেছে। তারপরও বাংলাদেশের অনেক জায়গায় দুর্বলতা আছে। টেস্টের জন্য ভাল পেস আক্রমণ নেই। তামিমের ওপেনিং সঙ্গী খুঁজতে হাপিত্যেশ। মিডল অর্ডারে দু’জন মারকুটে ব্যাটসম্যানের অভাব। নাজমুল ইসলাম শান্তর মতো তরুণ দলে থাকলেও তাকে পরীক্ষা করে দেখেনি বাংলাদেশ। লিটন দাস, সৌম্য, আরিফুল হকরা বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের গভীরতা বাড়াতে পারেন। এছাড়া মিজানুর রহমান, আল আমিন, আফিফ হোসেন, সাইফ হাসানদের বিশ্বকাপের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হবে বাংলাদেশের।
×