ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১ আগস্ট ২০১৮

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ

একটি অসাধুচক্র সুইজারল্যান্ড থেকে আমদানি করা মাতৃগর্ভে শিশুর প্রাণরক্ষাকারী ওষুধ রোসাইলাক-৩০০ মেয়াদোত্তীর্ণের পরও জালিয়াতির মাধ্যমে মেয়াদ বাড়িয়ে বাজারে ছেড়েছেÑ এমন একটি সংবাদ সোমবার প্রকাশিত হয়েছে জনকণ্ঠে। দেখা যাচ্ছে নৈতিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি গর্ভবতী মাকে বিপদে ফেলতে চায়! অতিরিক্ত মুনাফা লোটার লোভ সংবরণ করতে পারেনি তারা। জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার কথা দেশবাসী জানতে পারলেন। দেশের সর্বত্র ওষুধটি অবাধে বিক্রি হচ্ছে। ফলে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পরিণত হয়েছে জীবননাশকারী বিষ হিসেবে। মেয়াদোত্তীর্ণ এ ওষুধ প্রয়োগে ইতোমধ্যে যে শত শত শিশু মায়ের গর্ভেই মারা যায়নি তা কে জানে? দুর্লভ এ ওষুধটি সুইজারল্যান্ডের ঈঝখ ইঊঐজওঘএ অএ কোম্পানি উৎপাদন করে থাকে। ওষুধটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আমদানি করে চিকিৎসা সেবায় ব্যবহার করে। বাংলাদেশে ওষুধটি ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি বাংলাদেশ লিমিটেড আমদানি করে বাজারজাত করে আসছে। শুধু মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধই নয়, ভেজাল ও নিষিদ্ধ ওষুধের বেচাকেনাও জনস্বাস্থ্যের জন্য মহাঝুঁকির্পূণ। বাজারে ভেজাল ও নিষিদ্ধ ওষুধের ছড়াছড়ি সংক্রান্ত প্রতিবেদন জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে বহুবার। কয়েক মাস পরপরই জনস্বার্থে এ ধরনের সংবাদ ও প্রতিক্রিয়া সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর সাময়িকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়। আইনানুগ দণ্ড দেয়া হয় অপরাধীদের। তারপর আবার শুরু হয় একই বিপজ্জনক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি। বাজারে থেকে যায় নিষিদ্ধ ওষুধ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিয়মিত মনিটরিং এবং বিশেষ সক্রিয়তার ধারাবাহিকতা জরুরী। সে কথা আমরা বারবার বলে আসছি। দেশে এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর ওষুধ বাজার থেকে তুলে নেয়ার দায়িত্ব কেউ পালন করেনি বলে অভিযোগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, লাইসেন্স বাতিলকৃত কোম্পানি ও ওষুধের বিষয়ে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, অনেক চিকিৎসক ও খুচরা ওষুধ বিক্রেতা কোন ধারণা রাখেন না। বাতিলকৃত কোম্পানির ওষুধ বাজারে রয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের। অপরদিকে তালিকা না থাকায় রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে নিষিদ্ধ ওষুধ লিখে যাচ্ছেন অনেক চিকিৎসক। এভাবে লাইসেন্স বাতিলকৃত অনেক কোম্পানির ওষুধ বাজারে রয়ে যাচ্ছে। ওষুধের অভ্যন্তরীণ বাজার বিশালÑ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার। তাই মুনাফালোভী কোম্পানিগুলোর অনৈতিক কাজ করতে বাধছে না। তারা দেদার উৎপাদন করে চলেছে মানহীন ওষুধ। কিন্তু ওষুধ তো শখ করে খাওয়ার কোন ‘রসগোল্লা’ নয়, এ হচ্ছে এক অর্থে জীবনরক্ষাকারী দরকারি বস্তু। অথচ জীবন রক্ষার জন্য ওষুধ সেবন করতে গিয়ে সে ওষুধ জীবন সংহারে সক্রিয় হয়ে উঠছে! পক্ষান্তরে এটাও সত্যি যে, বাংলাদেশেরই অনেক ওষুধ কোম্পানি বিদেশে মানসম্পন্ন ওষুধ রফতানি করে আসছে সুনামের সঙ্গে। তার পরিমাণও নিহায়ত কম নয়। প্রায় ৯০টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হয়। বিগত বছরগুলোয় গড়ে কমবেশি ৫০০ কোটি টাকার ওষুধ রফতানি হচ্ছে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ক্ষতিকর ওষুধ রোসাইলাক-৩০০ তুলে নেয়ার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। সময় নষ্ট করার কোন সুযোগ নেই। আর দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মানুষের জীবন নিয়ে আর কেউ কোন ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এই ঘটনা দেশের ওষুধ আমদানিকারক ও পরিবেশকদের ব্যবসায়িক তৎপরতাকে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণের আবশ্যকতার বিষয়টি আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
×