ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শোকের মাস

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১ আগস্ট ২০১৮

শোকের মাস

আগস্ট বাঙালীর শোকের মাস, বেদনার মাস। এ মাসেই জাতির স্বাধীনতার স্থপতিকে জীবন দিতে হয়েছে ঘাতকদের হাতে। ইতিহাসে রক্তের আখরে লেখা শোকাবহ মাস আগস্ট। আজ আগস্টের প্রথম দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের এই পৈশাচিক হত্যাকা- ঘটে। সেদিন ঘাতকরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে, যা ইতিহাসের যে কোন বর্বর হত্যাকা-কে হার মানায়। ১৫ আগস্ট শুধু একজন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি ঘৃণ্য নরপশুরা, তারা একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে। জঘন্যতম এ হত্যাকা- থেকে রক্ষা পাননি বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি, বেগম আরজু মণি, কর্নেল জামিলসহ ১৬ জন। ঘাতকদের নিক্ষেপিত গোলায় মোহাম্মদপুরে মারা যান কয়েকজন সাধারণ নারী-পুরুষও। এসব হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনাকে মুছে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। শোকাবহ আগস্টের স্মরণে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। ১ আগস্ট রাতের প্রথম প্রহর থেকেই শুরু হয়েছে এই কর্মসূচী। যে কোন বিচারেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক অনন্য নেতা। সহজ-সরল, সাদামাটা অথচ দৃঢ়চেতা এক মানুষ। দেহ সৌষ্ঠবে এবং বজ্রকণ্ঠের বিস্ময়কর শক্তির এই মানুষটিকে সহজেই এবং আলাদাভাবে চেনা যেত। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্মের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সংগ্রামী জনতার পুরোভাগে। বজ্রকণ্ঠে তিনি ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার। তাঁর আদর্শ, ত্যাগ, দূরদর্শিতা এবং অকুতোভয় আপোসহীন নেতৃত্বে দেশ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়। বাঙালী জাতি পায় হাজার বছরের কাক্সিক্ষত প্রিয় স্বাধীনতা, স্বাধীন পতাকা ও স্বাধীন মানচিত্র। এ দেশের মানুষ পুরো আগস্ট মাসে গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদকে। এ কথা সত্য যে, একটা সময় ছিল যখন বঙ্গবন্ধুর নাম এক রকম নিষিদ্ধ ছিল। শিশু-কিশোরদের দীর্ঘকাল জানতে দেয়া হয়নি মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। শুধু বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করাই নয়, নানাভাবে তাঁর সম্পর্কে অপপ্রচারও করা হয়েছে। তাঁর অবদানকে নানাভাবে খাটো করা, এমনকি অস্বীকারও করা হয়েছে। কিন্তু তাদের সে অপচেষ্টা সময়ের বিবর্তনে নস্যাত হয়ে যায়। বাংলার মাটিতে তাঁর হত্যার বিচারও সম্পন্ন হয়েছে। ঘাতকদের দ-াদেশ কার্যকর হয়েছে। পিতৃহত্যার কলঙ্ক থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। দুঃখের বিষয়, এখনও কোন কোন মহল থেকে আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর হুমকির কথা শোনা যায়। বিষয়টি হাল্কাভাবে দেখলে চলবে না। কারণ যারা এই হুমকি দিচ্ছে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্মূল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ধ্বংস করতে চায়। এখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা রাষ্ট্রক্ষমতায়। দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বদলেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিরাজ করছে। ১৫ আগস্টের সাজাপ্রাপ্ত খুনীদের কেউ কেউ এখনও পলাতক। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করার চেষ্টা আরও জোরদার করা দরকার। সরকার ২০২০-২০২১ সালকে মুজিব বর্ষ হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর জন্য দেশ ও জাতি কৃতজ্ঞ। তবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বাংলাদেশ ও বাঙালীর ইতিহাসে।
×