ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জনপ্রশাসন পদক পেলেন কামরুল আহসান

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ৩১ জুলাই ২০১৮

জনপ্রশাসন পদক পেলেন কামরুল আহসান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ চর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিস্তার সংক্রান্ত কর্মসূচিতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তিগত পর্যায়ে জনপ্রশাসন পদক-২০১৭ পেলেন নতুন প্রজন্মের মেধাবী বিসিএস কর্মকর্তা কামরুল আহসান তালুকদার। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি বিশ্ব প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার নয় মাস আগে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন এই উদ্যোগ নেন কামরুল আহসান তালুকদার। বিসিএস ২৫ ব্যাচের এই মেধাবী অফিসার বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সংগ্রামী নেতৃত্বের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। বাঙালীর রাজনৈতিক জীবনে এই ভাষণের গুরুত্ব বহুমাত্রিক। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিচার করলেও এ ভাষণটির শ্রেষ্ঠত্ব অগ্রগণ্য। তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সে প্রেক্ষিতে কী কী করণীয় তার দিক-নির্দেশনা ছিল এই ভাষণে। ছিল স্বাধিকার আন্দোলনকে জনযুদ্ধে রূপান্তরিত করার কৌশল ও রূপরেখা। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ উৎসবকে কেন্দ্র করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন কামরুল আহসান। কামরুল আহসান তালুকদার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ‘জাতীয় ভাষণ’ এবং এই দিনটিকে ‘জাতীয় ভাষণ দিবস’ হিসেবে ঘোষণার জন্য ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন পাঠিয়েছিলেন। এরপর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে প্রধান উপদেষ্টা, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান মনিরা সুলতানা মনিকে উপদেষ্টা করে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল জাকির, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুজ্জামান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামসহ বেশ ক’জন শিক্ষকের সমন্বয়ে বিচারক প্যানেল গঠন করে ভাষণ উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়। সিদ্ধান্ত হয়, ৭ মার্চের কালজয়ী এই ভাষণের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতির জেগে ওঠার মন্ত্রকে শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে স্থায়ীভাবে জাগিয়ে তুলবে। সেই লক্ষ্যে উপজেলার চার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষণের ১ হাজার ২০০ সিডি এবং এর মুদ্রিত কপি বিতরণ করা হয়। প্রথমে স্কুল পর্যায়ে, পরে ইউনিয়ন পর্যায়ে সেরা বক্তা নির্বাচিত করা হয়। এভাবে চারটি বিভাগে ১২ জন সেরা ভাষণদাতা চূড়ান্ত হয়। সিদ্ধান্ত ছিল, ৭ মার্চ ভালুকা ডিগ্রী কলেজ মাঠে শিক্ষার্থী-শিক্ষক, অভিভাবক ও ভালুকাবাসীর সমন্বয়ে দুই লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশে এ ১২ প্রতিযোগীকে পুরস্কার প্রদান করা হবে। এর আগেই কামরুল আহসান বদলি হলে পরিকল্পনায় ছন্দপতন ঘটে। তবে তার সেই পরিকল্পনার আলোকেই এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসবে ভালুকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সঙ্গে অন্তত ৫০ হাজার খুদে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। পুরস্কৃতও করা হয় প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের। উপজেলা পরিষদ এ উৎসবের আয়োজন করে। এই উদ্যোগের ফলে ভালুকার ঘরে ঘরে তৈরি হয়েছে হাজার হাজার খুদে বঙ্গবন্ধু। সারাদেশে কালজয়ী ১৯ মিনিটের সেই ভাষণ কত জনের মুখস্থ রয়েছে, তা জানা না থাকলেও ভালুকা উপজেলার চার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ হাজারেরও বেশি কোমলমতি শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি মুখস্থ বলতে পারেন। এই চেতনায় উজ্জীবিত করার কারিগর ছিলেন কামরুল আহসান তালুকদার। তিনিই উৎসবের মূল পরিকল্পনাকারী। সংস্কৃতিমনা এই মানুষটি দেশকে ভালবাসেন, দেশের মানুষকে ভালবাসেন, ভালবাসেন এদেশের প্রতিষ্ঠাতাকে। সেই ভালবাসা থেকেই ৭ মার্চে ঐতিহাসিক ভাষণটি কেন্দ্র করে উদ্যোগ নেয়া এবং স্বীকৃতি অর্জন। আসলে দেশপ্রেম হলো নিজের কাজটি সঠিকভাবে করা। সততা, ন্যায়, নীতির সঙ্গে কর্ম করা। দেশপ্রেম হলো দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংবিধান মেনে চলা। সত্যকে তুলে ধরা। সেই কাজটিই কামরুল আহসান করেছেন।
×