ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জন্মগত পা-হারা শিশুর কৃত্রিম পা স্থাপন করতে পারছেন না দরিদ্র বাবা

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৩১ জুলাই ২০১৮

জন্মগত পা-হারা শিশুর কৃত্রিম পা স্থাপন করতে পারছেন না দরিদ্র বাবা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ৩০ জুলাই ॥ জন্মগত পা হারা এক শিক্ষার্থীর কষ্টের পথচলা দেখে হতবাক হতে হয় সহপাঠীদের। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর পরিবারের সব কাজ শেষে নিজের লেখাপড়া চালাতে প্রায় ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উপজেলার জাঙ্গীর দারকাবোর টেক হতে পিতলগঞ্জ চেয়ারম্যান বাড়ি পর্যন্ত কখনও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে, কখনও অর্ধেক পথ রিক্সার মাধ্যমে যাতায়াত করতে হয়। রোদ, বৃষ্টি কি শীত! যে কোন আবহাওয়ায় বিদ্যালয়ে তার নিয়মিত যাতায়াত। তবু একটি কৃত্রিম পা হলে এই শিশুটিই আট দশজন সাধারণ শিক্ষার্থীর ন্যায় স্বাভাবিক চলাচল করত স্বাচ্ছন্দ্যে। কিন্তু বিধি বাম। দিনমজুর বাবা জাফর আলী কয়লা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে কোনমতে সংসার চালায়। তবে সেই বাবার আরও ৩ সন্তান রয়েছে। সংসারে বড় ছেলে আসিফ আব্দুল হক ভুইয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ৯ম শ্রেণীর বিজ্ঞান শাখায় পড়ে। একই বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পাঠদান করছে সেই জন্মগত পা-হারা আছমা আক্তার জাইনুর (১২)। তার অপর এক ভাই ও বোন একই প্রতিষ্ঠানের ৩য় শ্রেণীতে পাঠদান করছে। সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের পরিচালক মনিরুল হক্ব ভুইয়া তাদের অর্ধেক বেতনে পাঠদান করাচ্ছেন। তাই দিনমজুর হয়েও জাফর আলীর ৪ সন্তানকেই বেসরকারী স্কুলে পড়াতে পারছেন। আছমা আক্তারও নিয়মিত অন্য ভাইবোনদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লেখাপাড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। কথা হয় আছমা আক্তার জাইনুরের সঙ্গে। সে জানায়, লেখাপড়া করে সমাজের জন্য কিছু করতে চায়। সুযোগ থাকলে ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা রয়েছে। তবে কৃত্রিম পা ব্যবহার করার কথা শুনে কেঁদে ফেলে সে। তার বাবার আর্থিক টানাপড়েন তাই কিভাবে পা লাগাবে তা তার জানা নেই। তার সহপাঠী ইভা আক্তার জানায়, জাইনুর অনেক শান্ত প্রকৃতির। কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করে না। বরং তার ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ। আছমার শিক্ষক সাইফুল ইসলাম রাজু জানান, আছমা ছুটি হলে যখন অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে বিদ্যালয় থেকে বের হয়। তখন অন্য শিক্ষার্থীরা তার ব্যাগ এগিয়ে ও বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার মতো মহৎ কাজ করে। এতে আছমাও খুশি। আছমার বাবা দিনমজুর জাফর আলী জানান, তার মেয়ে আছমার জন্মগতভাবেই পা-হারা ছিল। অপর ৩ সন্তান সুস্থ হলেও পা-হারা আছমাকে ছোটকালেই ডাক্তার দেখানো হয়েছে। ডাক্তাররা বড় হলে কৃত্রিম পা লাগানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখন সে বড় হয়েছে। কিন্তু ওই কৃত্রিম পা লাগাতে ৭০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানালেন সাভারের সিআরপি (পঙ্গু) হাসপাতালের ডাক্তাররা। টাকার অভাবে মেয়েটির পা লাগাতে পারছেন না বলে জানান তিনি। এ সময় বিত্তবানদের সহযোগিতার চান তিনি। এ বিষয়ে আব্দুল হক্ব ভুইয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মনিরুল হক ভুইয়া বলেন, আছমা কোনদিন বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে না। তার মেধাও খুব ভাল। ভবিষ্যতে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারলে সমাজের ভাল একজন হবে। তার পা স্থাপনের জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছি। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি, লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, মেয়েটির কথা শুনেছি। তার কৃত্রিম পা স্থাপনের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×