ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গলাচিপা-পটুয়াখালী সড়ক যেন মরণফাঁদ

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৩১ জুলাই ২০১৮

গলাচিপা-পটুয়াখালী সড়ক যেন মরণফাঁদ

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ গলাচিপা-পটুয়াখালী সংযোগ সড়ক যেন মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৭ কিলোমিটার সড়কের ১৬ কিলোমিটারজুড়েই সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানা-খন্দক আর বড় বড় গর্ত। কাপের্টিং উঠে কোথাও কোথাও সড়কের বুকে তৈরি হয়েছে জলাশয়। একদিকে মাঝে মধ্যে সংস্কার-মেরামতের নামে চলে লোক দেখানো কিছু জোড়াতালি। আর অন্যদিকে দাপটে চলে ভারি যানবাহন। যে কারণে সড়কটি রীতিমতো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সর্বোচ্চ ২০ মিনিটের এ সামান্য পথটুকু বাসে কিংবা অন্য কোন বাহনে পাড়ি দিতে ৪০ থেকে ৬০ মিনিট পর্যন্ত লাগছে। এতে হচ্ছে সময়ের অপচয়। বাড়ছে দুর্ঘটনা। গলাচিপার হরিদেবপুর বাসস্ট্যাান্ড থেকে পটুয়াখালী জেলা সদরের সড়ক পথের দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে হরিদেবপুর থেকে আমতলী উপজেলার শাঁখারিয়া পর্যন্ত সংযোগ সড়ক মাত্র ১৭ কিলোমিটার। এ সামান্য পথটুকুর জন্য গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী দুই উপজেলার মানুষকে জেলা সদরে যাতায়াতের জন্য যুগের পর যুগ বিপদসঙ্কুল ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ পাড়ি দিতে হয়েছে। অনেক অপেক্ষার পরে ১৯৯৬ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এ সংযোগ নির্মাণ করে। ফলে দুই উপজেলার মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথ পাড়ি দেয়ার দুর্ভোগের অবসান ঘটে। কিন্তু ২০০১ পরবর্তী সরকারের সময়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সংযোগ সড়কটিকে আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীত করার যখন উদ্যোগ নেয়, তখনই তা সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের হাতে ন্যস্ত হয়। ফলে আরেক দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এ যাবত কখনই সড়কটিকে প্রশস্তসহ পূর্ণাঙ্গ কোন উন্নয়ন কাজ করেনি। এমনকি সড়কটিতে যে সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে, তারও নিরসন করেনি। মাঝে মধ্যে যেখানে সেখানে কিছু কার্পেটিংয়ের প্রলেপ দিয়েই দায়িত্ব সেড়েছে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ জেলা সদরসহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে। হাজার হাজার টন তরমুজ, আলু, ইলিশ মাছসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল করে। ফলে সারা বছর সড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ত থাকে। কিন্তু আশানুরূপ সংস্কার, মেরামত ও প্রশস্ত না হওয়ায় সড়কটি বর্তমানে প্রায় ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ১৭ কিলোমিটারের ১৬ কিলোমিটারজুড়েই রয়েছে অসংখ্য গর্ত আর খানা-খন্দক। সরেজমিনে দেখা গেছে, মুসুরিকাঠি স্লুইসগেট, আমখোলা, মুদিরহাট ও বাদুরা এলাকায় এতটাই বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে যে, তাতে রীতিমতো মাছ চাষ করা যায়। কোথাও কোথাও গর্ত বড় হওয়ায় যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে পার হতে হয়। অনেক সময় এসব গর্তের কারণে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্য যানবাহনকে দীর্ঘ সময় নষ্ট করতে হয়। এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন কয়েক যাত্রী জানান, গলাচিপা থেকে পটুয়াখালী বাসে যেতে যেখানে সর্বোচ্চ ৫০ মিনিট লাগার কথা সেখানে লাগছে দেড় ঘণ্টা। সড়কটির বর্তমান বেহালদশা সম্পর্কে পটুয়াখালী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা জানান, পটুয়াখালী-গলাচিপা সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ মেরামত-সংস্কার ও প্রশস্ত না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কটি জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করা না হলে পটুয়াখালীর সঙ্গে গলাচিপার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে সড়কটি চলাচল উপযোগী রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সড়কটিকে টেকসই করার লক্ষ্যে জেলার মহাসড়ক মানে উন্নীতকরণ করা হবে। ফেস-২ প্রকল্পের আওতায় এর কাজ আগামী শুকনো মৌসুমে শুরু হবে। ইতোমধ্যে এর টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
×