ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অসমে এনআরসি প্রকাশ ॥ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত

নাগরিক তালিকায় বাদ ৪০ লাখ

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৩১ জুলাই ২০১৮

নাগরিক তালিকায় বাদ ৪০ লাখ

ভারতের অসম রাজ্যে জাতীয় নাগরিকত্ব তালিকা থেকে বাদ ৪০ লাখ লোক। ৩ কোটি ৪৯ লাখের মধ্যে ২ কোটি ৯০ লাখ নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পেরেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার রাজ্যে বিপুল সংখ্যক সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়। এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। অসমে সোমবার বহু প্রতীক্ষিত ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) প্রকাশ করা হয়। এতে বাংলাদেশ থেকে ১৯৭১ সালের আগে যারা সেখানে গেছে তারাই কেবল নিজেদের বৈধ নাগরিক প্রমাণ করতে পেরেছে। ভারতের রেজিস্টার জেনারেল শৈলাস জানিয়েছেন, ৩ কোটির ওপর মানুষ এনআরসি তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে সোমবার প্রকাশিত চূড়ান্ত খসড়ায় বাদ ৪০ লাখ নাম। অসমের বৃহত্তম শহর গুয়াহাটিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রকৃত নাগরিকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। চূড়ান্ত তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনেক সুযোগ দেয়া হবে।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা চাইলে আপীল করতে পারে। নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া ৩০ আগস্ট থেকে শুরু হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ শেষ হতে পারে। তালিকা থেকে বাদ পড়াদের মধ্যে যারা আপত্তি জানাবে বা নাম অন্তর্ভুক্তির দাবি করবে তাদের সহযোগিতা করা হবে বলে শৈলাস জানান। এদিকে মোদি সরকার আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছে অবৈধ অভিবাসীদের উচ্ছেদ করার জন্য তালিকা পুনর্র্মূল্যায়ন প্রয়োজন। ওই সম্মেলনে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘খসড়া তালিকার ওপর ভিত্তি করে কাউকে বন্দী শিবিরে পাঠানোর কোন প্রশ্নই উঠে না’। এদিকে নয়াদিল্লীতে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এদিন তালিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রশমনের চেষ্টা করেন। পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারও বিরুদ্ধে বলপূর্বক কিছু করা হবে না।’ কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করলেও অসমের সংখ্যালঘু বাঙালী বিশেষত মুসলিমদের ‘উইচ হান্টিং’য়ের শিকার হতে হবে বলে আশঙ্কা অনেক পর্যবেক্ষকের। পরিস্থিতি মোকাবেলায় আধাসামরিক বাহিনীর ২৩ হাজার সদস্যকে অসম পাঠানো হয়েছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্কতা জারি হয়েছে রাজ্যটির প্রতিবেশী মেঘালয়, মনিপুর, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশেও। সমালোচকরা বলছেন, ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন দক্ষিণপন্থী সরকার যে দেশটির সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর পরিবর্তে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের স্বার্থরক্ষা করতে বদ্ধপরিকর এটি তার সর্ব সাম্প্রতিক উদাহরণ। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে হাজার হাজার লোক ভারতে আশ্রয় নেয়। বেশিরভাগ গিয়েছিল অসমে। রাজ্যটির সঙ্গে বাংলাদেশের অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে। ভারতের কর্তৃপক্ষের এ পদক্ষেপকে অনেকে মিয়ানমারে ১৯৮২ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব ও অধিকার কেড়ে নেয়ার সঙ্গে তুলনা করছেন। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অধিকার গ্রুপ আভাজ বলেছে, এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়াদের কার্যকরভাবে আপীল করার সুযোগ খুবই সীমিত। আভাজের নির্বাহী পরিচালক রিকেন প্যাটেল বলেন, ‘মুসলিমদের জন্য নিবন্ধন পুনরায় আবেদন প্রক্রিয়া এগোনো কঠিন হবে, তাদের কাউন্সিলিংয়ের সুযোগ থাকবে না।’ ৩ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত অসম চা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। সেখানে আদিবাসী ও বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে অতীতে অনেকবার সংঘাত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। রাজ্যের নেলিতে একদিনেই ২ হাজার লোককে হত্যা করা হয়। যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম ও শিশু।
×