ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ জয়

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৩১ জুলাই ২০১৮

সিরিজ জয়

অবশেষে বহু কাক্সিক্ষত ও বহু প্রতীক্ষিত জয়, অবশ্য শুধু জয় নয়, একেবারে সিরিজ জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলÑ তাও আবার বিদেশের মাটিতে। একদা বিশ্ব ক্রিকেট দাপিয়ে বেড়ানো তুখোড় তুখোড় ফাস্ট বোলার ও ব্যাটসম্যান সমৃদ্ধ ক্যারিবীয় দীপপুঞ্জ ওয়েস্ট ইন্ডিজে। অবশ্য দ্বীপ দেশটির ক্রিকেটীয় ঐতিহ্য ও গৌরব বর্তমানে অনেকটাই ম্রিয়মান। সেখানকার ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের টানাপোড়েনের বিষয়টিও সুবিদিত বহির্বিশ্বে। সেসব সত্ত্বেও বিদেশের মাটিতে টাইগারদের বিজয় মুকুটে যুক্ত হলো আরও একটি বর্ণিল ময়ূরপুচ্ছ। টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণে একেবারে ধবল ধোলাইয়ের পর ওয়ান ডেতে এই সিরিজ জয় টাইগারদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস অনেকাংশে বৃদ্ধি করবে নিঃসন্দেহে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয়ায় বঙ্গ শার্দূলদের সার্বিকভাবে ২৩তম, দ্বিপাক্ষিকভাবে ২২তম, বিদেশের মাটিতে ষষ্ঠ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তৃতীয় সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব। এর আগে টাইগাররা দুবার পরাজিত করেছিল ক্যারিবীয়দের ২০০৯ সালে ৩-০ এবং ২০১২-১৩ সালে ৩-২ ব্যবধানে। এর বাইরে দীর্ঘ নয় বছর পর বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের তুমুল আস্বাদ পেল সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কোচ স্টিভ রোডসের শিষ্যরা। সে অবস্থায় টাইগারদের জন্য একটি ‘থি চিয়ার্স’ অথবা ‘হ্যাটস অফ’ জানানো যেতেই পারে। অবশ্য টাইগারদের এই সাফল্য অর্জনের পথ খুঁজে পাওয়া এবং হৃতগৌরবের পুনরুদ্ধার খুব একটা সহজ ছিল না। বিশেষ করে ভারতের শৈল শহর দেরাদুনে ক্রিকেটে একেবারেই নবাগত আফগানিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডেতে লজ্জাজনক হার এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দুই টেস্টে শোচনীয় পরাজয়ের পর টাইগারদের মনোবল প্রায় ভেঙ্গে পড়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও কিছু কম হয়নি গণমাধ্যম ও ক্রীড়াঙ্গনে। বিদেশে থেকেও বিদেশের মাটিতে দলীয় অন্তর্কোন্দল ও সমঝোতার মনোভাবের অভাবের কথা শোনা গেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে নাস্তানাবুদের পর বিদায়ী শ্রীলঙ্কান কোচ হাতুরাসিংহে আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করে স্বদেশে ফিরে গেলে বিষয়টি অনিবার্যভাবে সামনে চলে আসে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকেও হস্তক্ষেপ করতে হয় এ সময়ে ক্রিকেটের সুনাম ও হৃতগৌরব ধরে রাখার জন্য। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, টাইগারদের জন্য সময়টা ছিল কঠিন ও দুরতিক্রম্য। একদিকে দলের প্রবীণ ও নবীনদের মধ্যে সমঝোতার মনোভাবের তীব্র অভাব, দলীয় শৃঙ্খলা ও বিধি মেনে না চলা, নবীন খেলোয়াড়দের দুর্বল ব্যাটিং- বোলিং-ফিল্ডিংÑ সব মিলিয়ে প্রকৃতপক্ষেই এক ছন্নছাড়া অবস্থা। সেই অমানিশা যে এখনও অপসারিত হয়েছে এমন কথা বলা যাবে না। দলের অভিজ্ঞ ও খ্যাতিমান খেলোয়াড়ের পাশাপাশি নবীন খেলোয়াড় বিশেষ করে টি-২০ খেলায় অনীহা প্রকাশ বিস্ময়কর একটি বিষয় বৈকি। বোর্ডের সভাপতিও এ নিয়ে রীতিমতো হতাশা ব্যক্ত না করে পারেননি। বাস্তবতা হলো, বিশ্ব ক্রিকেটের অপার মহিমা, ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য প্রকৃতপক্ষে নিহিত রয়েছে টেস্ট ক্রিকেটেই। বর্তমানে আর্থিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি, সর্বোপরি মাঠে দর্শক ধরে রাখার জন্য ওয়ান ডে এবং টি-২০র বহুল প্রচলন হলেও টেস্ট ক্রিকেটের চিরায়ত ঐতিহ্য ও আবেদন কখনই ফুরিয়ে যাবার নয়। যে কোন ক্রিকেটার বিশেষ করে ভাল ক্রিকেটার ও ব্যাটসম্যানের চিরকালের স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা টেস্ট ক্রিকেটের সুমহান ঐতিহ্যের খাতায় নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে তুলে রাখার প্রাণপণ প্রচেষ্টা। টাইগারদেরও সেই স্বপ্ন দেখা থেকে নিজেদের বঞ্চিত করা চলবে না কিছুতেই। সেই স্বপ্নকে মাথায় রেখেই সিরিজজয়ী টাইগারদের মোকাবেলা করতে হবে আসন্ন টি২০। মনে রাখতে হবে, ছোট জয়ের মধ্য দিয়েও অর্জিত হয় বড় বিজয়।
×