ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভোট না দিয়ে দিনভর বুলবুলের নাটক

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩১ জুলাই ২০১৮

ভোট না দিয়ে দিনভর বুলবুলের নাটক

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে সকাল ৮টায় নিজস্ব কেন্দ্র নগরীর স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুলে ভোট দেয়ার কথা বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের। প্রতিবেশী হওয়ায় একই সময়ে ওই কেন্দ্রেই নিজের ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তবে আসি আসি করে আর আসেননি বুলবুল। শেষ পর্যন্ত নিজের ভোট না দিলেও দিনভর বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে নাটক করেছেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তাৎক্ষণিক মিডিয়ায় কাভারেজ পাওয়ায় জন্য বুলবুলের এ নাটক বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। সর্বশেষ একটি কেন্দ্রে গিয়ে বৃষ্টির মধ্যে বসে দীর্ঘক্ষণ কালক্ষেপণ নাটক করায় নগরজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন তিনি। মূলত, ভোট উৎসবের দিনেও নিঃসঙ্গ ছিলেন বিএনপি মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সকাল থেকেই ক্ষিপ্ত আচরণে মেতে ওঠেন। সাংবাদিকদের সঙ্গেও উচ্চবাক্য বিনিময় করেন বিএনপির এ প্রার্থী। তার নিজ কেন্দ্র স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট দেয়ার কথা থাকলেও বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তিনি নিজের ভোট প্রদান করেননি। অনেকেই এটাকে তার স্ট্যান্টবাজি বা নাটক হিসেবে অভিহিত করেছেন। অবশ্য তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র নেই সেখানে আমার ভোট দিয়ে কোন লাভ নেই। কারো সঙ্গে কোন ঝামেলাও করতে আমি রাজি নই। সকাল থেকে রাজশাহীর ১৩৮ কেন্দ্রের অধিকাংশই কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল। দীর্ঘ লাইনও দেখা গেছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রতিটি কেন্দ্রেই ভোটারদের উৎপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। তবে ভোটের দিনও নিঃসঙ্গ ছিলেন বুলবুল। চোখে পড়ার মতো কোন নেতাকর্মীই তার সঙ্গে ছিল না। তিনি ১০টার দিকে বিনোদপুরের ইসলামিয়া কলেজ কেন্দ্রে যান। বিকেল পর্যন্ত তিনি সেখানেই আছেন। তার সঙ্গে মিজানুর রহমান মিনু ছাড়া কোন নেতাকর্মীও দেখা যায়নি। এ সময় বুলবুল সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, নগরীর সব কেন্দ্র দখল করে আছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আমি কোন কেন্দ্রে যাব আর কোন কেন্দ্রে গিয়ে ঠেকাব। তাই বসে আছি কেন্দ্রের বাইরে। তাঁর অভিযোগ ওই কেন্দ্রে মেয়র প্রার্থীর ব্যালট শেষ হয়ে গেছে। মোসাদ্দেক হোসেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে ব্যালটের হিসাব চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ব্যালটের হিসাব না পেলে তিনি সেখান থেকে যাবেন না। এর আগে একটি কেন্দ্র দায়িত্বরত নারী আনসার সদস্যের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন তিনি। এদিকে বুলবুলের সঙ্গে শুরু থেকে ভোটের মাঠে সোচ্চার ছিলেন বিএনপির নেতা মিজানুর রহমান মিনু ও বুলবুলের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তোফাজ্জল হোসেন তপু। শুরুতেই মিনু তার ভোট দিলেও ভোট দেননি তোফাজ্জল হোসেন তপু। বুলবুল জানান, তিনি ভোট দিচ্ছেন না। কারণ জানতে চাইলে তিনি তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে বলেন, ‘এই বিপন্ন গণতন্ত্রে আমার পোলিং এজেন্টরা ভোট দিতে পারেনি, সেখানে আমার একটি ভোট দিয়ে লাভ কী? ভোট শেষ হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে চারটা) বুলবুল নগরীর ইসলামীয়া কলেজ মাঠেই অবস্থান নেন। তিনি বলেন, এ কেন্দ্রের ভোটের ফলাফল নিয়েই তিনি ফিরবেন। এদিকে অন্যকে ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করেও নিজে ভোট না দেয়ায় এটিকে বুলবুলের স্ট্যান্টবাজি বলছেন অনেকে। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তার এই নাটক বলে দাবি করেছেন অনেকেই। নগরীর কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, কোন্দলের কারণে তিনি এমনিতেই একাকী ছিলেন। ভোটের দিন ভোট না দিয়ে এখন নাটক করছেন। তিনি দাবি করেন, বিগত ২০১৩ সালের চাইতেও ভোটের পরিবেশ এবার অনেক ভাল। তিনি এখন যে দাবিই করবেন সেটি আর গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা তিনি তার নিজের ভোট দেননি। তিনি নিজের ভোট দিয়ে যদি কোন অভিযোগ করতেন সেটি গ্রহণযোগ্য হতো। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের উপপ্রচার প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ লেমন বলেন, বুলবুল ভোট না দিয়ে এখন নাটক করছেন। জনগণ তাদের নাটক বুঝতে পেরেছে। বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কাতেই তিনি এখন এ নাটক শুরু করেছেন। দলীয় কোন্দলে জর্জরিত বুলবুল ভোটের প্রচার শুরুর দিন থেকেই শুধু মিডিয়া কাভারেজের জন্য নাটক করে আসছিলেন। তবে ভোটের দিনের নাটকে অবাক নগরবাসী। ভোটের প্রচার-প্রচারণার প্রথম থেকেই তিনি নিঃসঙ্গ ছিলেন। বারবার তিনি নিজেকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে দাবি করলেও জামায়াতকে তিনি পাশে পাননি শেষ দিনেও। গত ২৬ তারিখ জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার প্রচারণা চালানোর কথা বলেছিলেন বুলবুল। কিন্তু তারা সেই কথাও তারা রাখেনি।
×