ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশারের চিকিৎসার দায়িত্ব নিল র‌্যাব

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩১ জুলাই ২০১৮

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশারের চিকিৎসার দায়িত্ব নিল র‌্যাব

আজাদ সুলায়মান ॥ শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কিংবা জঙ্গী, মাদক ও সন্ত্রাস দমনেই সীমাবদ্ধ নয় র‌্যাবের ভূমিকা। এগুলো র‌্যাবের মূল দায়িত্ব। এর বাইরেও র‌্যাব এগিয়ে আসে আর্তপীড়িতের সেবায়, বিপন্ন মানবতায় কিংবা সামাজিক সমস্যা দূরীকরণেও। সর্বশেষ এমনই এক মানবিক সেবায় এগিয়ে এসেছে এই এলিট ফোর্স। মাত্র ১ লাখ টাকার অভাবে চিকিৎসাবঞ্চিত আবুল বাশারের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছেন স্বয়ং র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। রবিবার দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত শেষের পাতার ফিচার প্রতিবেদনে মাত্র ১ লাখ টাকার অভাবে চট্টগ্রামের বীর মু্িক্তযোদ্ধা আবুল বাশারের চিকিৎসা না হওয়ার করুণচিত্র দেখে তাৎক্ষণিক সাড়া দেন র‌্যাব প্রধান। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ককে নির্দেশ দেন। সোমবার সকালেই অসুস্থ আবুল বাশারকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, র‌্যাবের একটি টিম গাড়ি নিয়ে আবুল বাশারের বাসায় গিয়ে তাকে নিয়ে যায় হাসপাতালে। সেখানে কার্ডিওলজি বিভাগীয় প্রধান ডাঃ প্রবীর কুমার দাসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু হয়। আগামী শনিবার তার অপারেশন করার প্রস্তুতি চলছে। ডাঃ প্রবীর কুমার দাস র‌্যাবকে নিশ্চিত করেছেন, আবুল বাশারের হার্টে দুটো রিং লাগানো হবে। এতে চিকিৎসা ব্যয়ের অধিকাংশই মওকুফ করা হবে। বাকিটুকু পরিশোধ করতে হবে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আবুল বাশারের পরিবারের পক্ষ থেকে মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও চট্টগ্রাম অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদসহ গোটা র‌্যাব ফোর্সের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বিগত দুই যুগ ধরে বসবাস করছেন আবুল বাশার। সর্বশেষ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ছোট চাকরি করতেন। সেখান থেকেই অবসরে যান ২০১০ সালে। দীর্ঘ জীবন সংগ্রামে ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধা এখন আর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না। গত চার বছর ধরে অসুস্থ তিনি। বর্তমানে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। তবে হার্টের সমস্যাই প্রকট। ইতোমধ্যে পাঁচবার হার্ট এ্যাটাকের শিকার হয়েছেন। অবস্থার ক্রমাবনতি দেখে সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয় তাকে। পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে ডাক্তাররা জানান, হার্টে মোট ৩টি ব্লক। অন্তত দুটিতে রিং বসাতে হবে। তাই অপারেশন জরুরী। নচেৎ দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু এ জন্য টাকা লাগবে ২ লাখ। মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে ১ লাখ ছাড় আছে। বাকি ১ লাখের বন্দোবস্ত পরিবারকেই করতে হবে। রবিবার তারই করুণ কাহিনী ছাপা হয় জনকণ্ঠে। ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে তার জীবনের করুণ কাহিনী। যা দেখে অনেক পাঠকের মতো র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের মনও করুণ রসে সিক্ত হয়। তিনি ভাল করে প্রতিবেদনটি পড়েন। বিশেষ করে মাত্র এক লাখ টাকার জন্য এই বীর মুক্তিসেনার জীবন বিপন্ন হবে- এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। বিবেকের দংশনেই বেনজীর আহমেদ এগিয়ে আসেন চিকিৎসার সব দায়িত্বে। এ বিষয়ে র‌্যাব পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, শুধু আবুল বাশার কেন, এ ধরনের মানবসেবার অনেক নজির রয়েছে র‌্যাবের। যা আমরা কখনোই স্বপ্রণোদিত হয়ে ফোকাস করি না। নীরবে নিভৃর্তেই দেশজুড়ে অনেক বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ায় র‌্যাব। তিনি জানান, উল্লেখ ২০১৬ সালে র‌্যাবের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আত্মসমর্পণকারী ২ জঙ্গীকে পুনর্বাসনের জন্য ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। গত বছর আত্মসমর্পণকারী ১৩২ জলদস্যু পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২০ হাজার টাকা, শীতবস্ত্র, ১টি করে মোবাইল সেট ও ঈদ উপহার সামগ্রী দেয়া হয়। একই বছর ১৯ সেপ্টেম্বর মিরপুরের দারুস সালামের জঙ্গী কর্তৃক বোমা বিস্ফোরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কমল প্রভার ৪র্থ তলার ভাড়াটিয়া দলিল উদ্দিন আহমেদের পরিবারকে ১ লাখ টাকার আর্থিক অনুদান প্রদান করে র‌্যাব। গত ১ নবেম্বর আত্মসমর্পণকারী মানজু বাহিনী ও মজিদ বাহিনীর ২০ জলদস্যুর প্রত্যেককে একটি করে মোবাইল সেট এবং নগদ ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। গত ১৬ জানুয়ারি র‌্যাবের পক্ষ হতে আত্মসমর্পণকারী ভাই বাহিনী এবং সুমন বাহিনীর সর্বমোট ৩৮ জলদস্যুর প্রত্যেককে একটি করে মোবাইল সেট এবং নগদ ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়। ২৩ মে আত্মসমর্পণকারী ডন বাহিনী, ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনী এবং ছোট সুমন বাহিনীর সর্বমোট ২৭ জলদস্যুর প্রত্যেককে একটি করে মোবাইল সেট এবং নগদ ২০ হাজার করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। গত ২৭ জুন র‌্যাব মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫২০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিরতণ করেন র‌্যাব মহাপরিচালক। ২২ জুলাই র‌্যাবের পক্ষ থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত অতিদরিদ্র পরিবারের কাকলী আক্তারকে নগদ ১০ হাজার টাকা, মিষ্টি ও নতুন পোশাক এবং আগামীতে শিক্ষা জীবন চালিয়ে যেতে র‌্যাব কাকলীর পাশে থাকবে বলে আশ্বাস প্রদান করা হয়। গত ৫ অক্টোবর মহাপরিচালক র‌্যাব টেকনাফে অস্থায়ী র‌্যাব ক্যাম্পের উদ্বোধন ও রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিররণ করেন।
×