ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন

কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বরিশালে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩১ জুলাই ২০১৮

কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বরিশালে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ভোটগ্রহণ সোমবার সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে একটানা বিকেল চারটা পর্যন্ত চলেছে। নগরীর অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার সকাল থেকেই পুরুষের পাশাপাশি নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা উৎসবের আমেজে আগামী ৫ বছরের জন্য তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নগরপিতা নির্বাচনের জন্য কখনও প্রচ- রোদ আবার কখনও কয়েক দফায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। এদিকে ৪টি ওয়ার্ডের ১১টি ভোট কেন্দ্রের ৭৮টি বুথে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোটাররা। নির্বাচন শুরুর পর কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই এখানে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোট শুরুর পর পরই সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারী বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট প্রদান করেছেন। বিএনপির ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার সকাল পৌনে নয়টার দিকে নগরীর ১ নম্বর ওয়ার্ডের লাকুটিয়া সড়ক সংলগ্ন সৈয়দা মজিদুন্নেসা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত লাঙ্গল মার্কার মেয়রপ্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস মুসলিম গোরস্তান রোডের সৈয়দ আব্দুল মান্নান ডিডিএফ সিনিয়র ও হাফেজী মাদ্রাসা কেন্দ্রে। বাসদ মনোনীত মই মার্কার প্রার্থী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী সকাল আটটার দিকে বগুড়া রোডের অক্সফোর্ড মিশন হাইস্কুলে। একই সময়ে হাতপাখা মার্কার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুফতি ওবাইদুর রহমান মাহবুব আমনতগঞ্জের মাহমুদীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সিপিবির কাস্তে প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ কাউনিয়ার বীণাপানি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল আটটায় ভোট দিয়েছেন। এদিকে জাপার দলীয় সিদ্ধান্তে সরে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া বশীর আহমেদ ঝুনু ভোট দিয়েছেন দক্ষিণ আলেকান্দার শহীদ আলতাফ মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ে। সকাল আটটায় ভোট শুরুর পর নগরীর প্রাণকেন্দ্র অশ্বিনী কুমার টাউন হল, সদর গার্লস, সরস্বতী স্কুল, বরিশাল কলেজ, মথুরানাথ পাবলিক স্কুল, কাউনিয়া আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় অর্ধশতাধিক ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, আগেভাগে ভোট দেয়ার জন্য তরুণ ও নারী ভোটাররা সকাল থেকেই দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়েছেন। এসব কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারদের পাশাপাশি নারী ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্যণীয়। ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রার্থীর সমর্থক ও ভোটারদের উপস্থিতিতে দিনভর পুরো বরিশাল নগরীতে ছিল উৎসবের আমেজ। ভোট শুরুর পূর্বে প্রখর রোদ থাকলেও মাঝখানে কয়েকবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও থামাতে পারেনি ভোটারদের। তারা রোদ ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পছন্দের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। বিএনপির ভোট বর্জন ॥ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। সোমবার দুপুর ১২টায় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভোট বর্জনের ঘোষণা করেছেন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থীরাও এই বর্জনের সঙ্গে একমত। এর আগে সকালেই তার পোলিং এজেন্টদের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন বিএনপির প্রার্থী। ইসলামী আন্দোলন প্রার্থীর ভোট বর্জন ॥ সিটি নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা মার্কার মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব ভোট বর্জন করেছেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে সদরের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, সকাল আটটার দিকে ভোট শুরুর পরই সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্রে প্রবেশ করে জালভোট দেন। এতে ভোটের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এ কারণেই তিনি ভোট বর্জন করেছেন। দুই দফা হামলার শিকার মনীষা ॥ সিটি নির্বাচনে জালভোটের প্রতিবাদ করায় বাসদ মনোনীত মই মার্কার মেয়র প্রার্থী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীর ওপর দুই দফা হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার সকাল পৌনে দশটার দিকে মেয়র প্রার্থী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীর ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। মনীষা চক্রবর্তী জানান, সদর গার্লস স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে তিনি দেখেন ব্যালটে আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রকাশ্যে সিল মারছে। তাৎক্ষণিক তিনি রিটার্নিং অফিসারকে সংবাদ দেন। এ সময় জালভোটের প্রতিবাদ করায় আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে তার বাগ্বিত-া হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের দুই কর্মী তাকে (মনীষা) শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে মারধর করে। মনীষা আরও বলেন, সকালে নগরীর অক্সফোর্ড মিশন স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিয়ে তিনি বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শনে নামেন। নগরীর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে তিনি তার মই মার্কার সিল মারা ব্যালট পেপার ছেঁড়া দেখতে পেয়ে বিষয়টি জানতে চান। এ সময় নৌকার ব্যাজ পরা পোলিং এজেন্টরা তার ওপর হামলা চালায়। তবে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার প্রভাস কুমার ম-ল বলেন, তার কেন্দ্রে হামলার কোন ঘটনাই ঘটেনি। তার (মনীষা) অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। পিকেটিংয়ের ঘটনায় সাংবাদিক রক্তাক্ত ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সদর রোড বরিশাল সিটি কলেজ কেন্দ্রে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মীদের সঙ্গে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় নির্বাচনের খবর সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা সাংবাদিক গোবিন্দ সাহা রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভোট স্থগিতের দাবি ॥ ভোটগ্রহণের চারঘণ্টার মধ্যেই নির্বাচন বর্জন করে ভোট স্থগিতের দাবি করেছেন বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব, বাসদ প্রার্থী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী ও জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। সোমবার বেলা সাড়ে বারোটার দিকে ওই চারপ্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ মুজিবুর রহমানের কাছে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপি, হামলা, এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে লিখিত আবেদন করে ভোট স্থগিতের দাবি করেন। এক টিপেই খেল খতম ॥ নগরীর জিলা স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর নাবিলা আহম্মেদ অভি নামের এক ভোটার তার অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করে আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, মোর জীবনে এই পেরতোম মেশিনে ভোট দিলাম। খুবই ভাল লাগছে, কোন ঝামেলা নাই। এই পদ্ধতিতে তাড়াতাড়ি ভোট দেয়া যায়, ভালোই ল্যাগাছে, এক টিপেই খেল খতম।
×