ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারীদের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি

রাজশাহীতে হেঁটেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের ঢল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩১ জুলাই ২০১৮

রাজশাহীতে হেঁটেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের ঢল

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রবিবার রাতে বৃষ্টির পর সোমবার সকাল থেকেই রাজশাহীর আকাশ ছিল মেঘলা। মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তবে আবহাওয়া ছিল চমৎকার। এমন আবহাওয়ায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভোট গ্রহণ। প্রশাসনের কড়াকড়ি ও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এদিন সকাল থেকে যানবাহন চলাচলে ছিল বাধ্যবাধকতা। গাড়ি-ঘোড়া চলেনি। এমনকি রিক্সাও চোখে পড়েনি রাজশাহী নগরীতে। সম্পূর্ণ ফাঁকা শহরে হেঁটেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সকালের দিকে কেন্দ্রগুলো ফাঁকা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটার। মূল শহরের চেয়ে একটু অদূরের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন নারী ও পুরুষরা। দুপুরের আগে কেন্দ্রগুলোতে নারীদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক অনেক বেশি। তবে দুপুর গড়াতেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভিড় বাড়ে পুরুষ ভোটারদের। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কেন্দ্রে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে শুরু থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। ভোটগ্রহণ শুরুর আগে থেকেই কেন্দ্রের সামনে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী মানুষ। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেন ভোটাররা। কোন প্রকার চাপ বা গ-গোল ছাড়াই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ভোটাররা। তবে ভোটগ্রহণের শেষ সময়ে কিছু কিছু কেন্দ্রে হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। নির্ধারিত সময়ে নগরীর আটকোষি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কিছু ভোটার ভোট দিতে পারেনি অভিযোগ করে বিক্ষোভ করেছে। এদিকে দিনের শুরুতেই সকাল সাড়ে ৮টায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নগরীর স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোটপ্রদান করেন। সকাল সোয়া ৮টার দিকে খায়রুজ্জামান লিটন স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল কেন্দ্রে যান। এরপর ওই কেন্দ্রের ৫ নম্বর কক্ষে ভোট দেন লিটন। এদিকে একই কেন্দ্রে ও একই সময়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোট দিতে আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষ হলেও তিনি তার ভোট দেননি। এদিকে সোমবার সকালে নগরীর ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সরব অবস্থান থাকলেও সকাল থেকেই মাঠে অনুপস্থিত বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের সহায়তায় বিএনপি প্রার্থীর কোন তালিকা সরবরাহ বা বুথও খুঁজে পাওয়া যায়নি। নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ্ মখদুম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল থেকেই উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ে। কেন্দ্রে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়ানো তোরাব আলী বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন চলছে। আমাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সহায়তা করছে। নগরীর বরেন্দ্র কলেজ কেন্দ্রে পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় ভোট কেন্দ্রে এসেছেন সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ এনামুল হক। অস্পষ্ট কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। বয়স হয়েছে, দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এত মানুষ দেখে মনে আনন্দও হচ্ছে। এলাকার অনেকের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, ভাল লাগছে। ভোটকেন্দ্রে তাকে নিয়ে এসেছেন তার নাতনি শাহানা বেগম। তিনি বলেন, আমার দাদি ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। চোখেও কম দেখেন। তবুও সকাল থেকে ভোট দেয়ার জন্য তিনি বেশ উদগ্রীব হয়ে ছিলেন। কেন্দ্রে ভিড় হবে ভেবে সকালে পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে এসেছি। এদিকে সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে নির্বাচনকে ঘিরে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। নগরীর সাহেরা খাতুন নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল থেকেই ছিল নারীদের উপচেপড়া ভিড়। একই অবস্থা নগরীর বিনোদপুর এলাকার বিসিএসআইআর ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয় ও মির্জাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে। কেন্দ্রে মহিলা ভোটারদেরকেও লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। একটু এগিয়ে ম-লমোড়ে অবস্থিত পুরুষ ভোটার কেন্দ্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তারা ভোট দিয়েছেন। সকালে ভোট শুরুর পর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট কেন্দ্রসমূহে ছিল নারী ভোটারদের আধিক্য। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রগুলোয় ছিল নারী ভোটারদের দীর্ঘ সারি। এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভি বুধপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সজল নামের এক আওয়ামী লীগ সমর্থককে ছুরিকাঘাত করা হয়। সজল কাটাখালি পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এদিকে সোমবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর জুলফিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সস্ত্রীক নিজের ভোট দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি ভোট প্রদান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এত সুন্দর পরিবেশে ভোটগ্রহণ তিনি আগে কখনও দেখেন নি। বাদশা বলেন, এত সুন্দর ভোট নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন তোলে তবে তারা দেশের গণতন্ত্রকে নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। এত সুন্দর নির্বাচনকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই। রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ আমিরুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান এই নির্বাচন কর্মকর্তা।
×