ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এগিয়ে নৌকা ॥ রাজশাহী বরিশাল সিলেট সিটি নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩১ জুলাই ২০১৮

এগিয়ে নৌকা ॥ রাজশাহী বরিশাল সিলেট সিটি নির্বাচন

শাহীন রহমান ঢাকা/মামুন-অর-রশীদ, রাজশাহী/খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ও সালাম মশরুর, সিলেট ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ১৩৮ কেন্দ্রের বেসরকারী ফলাফলে তিনি ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৯৪। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোট পেয়েছেন ৭৮ হাজার ৪৯২ ভোট। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ৮৭ হাজার ৯০২ ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে বরিশাল সিটিতে নিশ্চিত জয়পথে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্র্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থী এগিয়ে আছেন। বরিশাল সিটি নির্বাচনে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১২৩ কেন্দ্রের মধ্যে ১১৬ কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ১০৩ ভোট। অপরদিকে এই সিটিতে বিএনপির প্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ার পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪১৩ ভোট। সিলেট সিটি নির্বাচনে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৩৪ কেন্দ্রের মধ্যে ১০৫ কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ভোট পেয়েছেন ৭০ হাজার ৮৯৪। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ৬৯ হাজার ৬৭৩। এদিকে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদ দিলে তিন সিটিতেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে অনিয়মের অভিযোগে বরিশালে বিএনপি প্রার্থীসহ চার প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। যেসব কেন্দ্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে কমিশনের পক্ষ থেকে যেসব কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন কিছু অনিয়ম ছাড়া তিন সিটিতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তিনি বলেন, যে কেন্দ্রে অভিযোগ এসেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে। তিন সিটিতে অনিয়মের অভিযোগে মাত্র ১৫ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে তিন সিটিতে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ তিন সিটিতে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের দাবি ভোট উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটগ্রহণ শেষে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তিন সিটি নির্বাচনে ভোট নয়, আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন হলো। গাজীপুর ও খুলনায় অল্প কিছু লোক ভোট দিতে পারলেও আজকে তিন সিটিতে সেটিও সম্ভব হয়নি। অপরদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, যখনই বিএনপির পরাজয়ের শঙ্কা থাকে তখনই তারা সেই নির্বাচনকে বিতর্কিত করার নানা মিথ্যাচার করে। একই অভিযোগ আমরা তিন সিটি ভোটে দেখেছি। এ ধরনের মিথ্যাচারের ভাঙ্গা রেকর্ড বাজানো বিএনপির পুরনো অভ্যাস। এদিকে ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া সার্বিক ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। অনিয়ম ও গোলযোগের কারণে বরিশালে একটি এবং সিলেটে দুটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া গেলে বিস্তারিত তথ্য জানানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টির কিছু নেই। যে রকম আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছিল, সেরকম কিছু ঘটেনি। বরিশালে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে কাউন্সিলরদের মধ্যে। সিলেটেও সামান্য সমস্যা হয়েছে। রাজশাহীতে ভাল ভোট হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সোমবার সকাল আটটা থেকে রাজশাহী বরিশাল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ভোটগ্রহণ করা হয়। নির্বাচন শুরুর চার ঘণ্টা পর বেলা বারোটার দিকে বরিশালে বিএনপির প্রার্থী মজিবুর রহমান সরোয়ারসহ অন্য প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেন। এ সময় তিনি নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ করে বলেন, আগের কোন সরকারের আমলেই বরিশালে এমন নির্বাচনের ঘটনা ঘটেনি। খুলনা গাজীপুরে তাও ভোট হয়েছে। কিন্তু বরিশালে কোন নির্বাচনই হয়নি। তিনি সকালেই সব ভোটকেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি, সিপিবি সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থীরাও এই বর্জনের সঙ্গে একমত। তবে বরিশালে বিএনপিসহ অন্য দলের মেয়র প্রার্থীরা ভোট বর্জন করলেও সকাল থেকেই এই সিটিতে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যদিয়ে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, পুরুষের পাশাপাশি নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসবের আমেজে প্রচ- রোদ, কয়েক দফায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। এদিকে এ সিটিতে কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বিএনপিসহ অন্য মেয়র প্রার্থীরা বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে নিজেদের নিশ্চিত পরাজয় জেনে ভোট বর্জন করেছেন। অনেক কেন্দ্রেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এজেন্ট দিতে পারেননি। অথবা যাদের এজেন্ট দিয়েছেন তারা কেন্দ্রে আসেননি। এখন তারা কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়ার মিথ্যাচার করছে উল্লেখ করেন। এদিকে রাজশাহী সিটিতেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সম্পূর্ণ ফাঁকা শহরে হেঁটে হেঁটেই ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সকালের দিকে কেন্দ্রগুলো ফাঁকা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটার। মূল শহরের চেয়ে একটু অদূরের কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন নারী-পুরুষ সবাই। দুপুরের আগে কেন্দ্রগুলোতে নারীদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক বেশি। তবে দুপুর গড়াতেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভিড় বাড়ে পুরুষ ভোটারদের। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু কেন্দ্রে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে শুরু থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। ভোটগ্রহণ শুরুর আগে থেকেই কেন্দ্রের সামনে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী মানুষ। লম্বা লাইন দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেন ভোটাররা। কোন প্রকার চাপ বা গ-গোল ছাড়াই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ভোটাররা। তবে ভোটগ্রহণের শেষ সময়ে কিছু কিছু কেন্দ্রে হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। নির্ধারিত সময়ে নগরীর আটকোষি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয় কেন্দ্রে বেশকিছু ভোটার ভোট দিতে পারেনি অভিযোগ করে বিক্ষোভ করেন। সকাল সাড়ে আটটায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী লিটন নগরীর স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে। আমরা এমন সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশই চেয়েছিলাম। আশা করি শেষ পর্যন্ত এমন পরিবেশই থাকবে। রাজশাহী শান্তির নগরী এখানে কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। এদিকে একই কেন্দ্রে ও একই সময়ে বিএনপি প্রার্থী বুলবুল ভোট দিতে আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষ হলেও তিনি তার ভোট দেননি। এদিকে সিলিট সিটিতে বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ছাড়া দিনভর শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি ছিল নগরীর সর্বত্র। যানবিহীন নগরীতে যেমন ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ সেই সঙ্গে ছিল অজানা আতঙ্ক। সিলেট নগরীর কালী ১৪নং ওয়ার্ডের কালীঘাট এলাকার সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল পৌনে নয়টার দিকে ভোট দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। সিলেট নগরীর ১৮নং ওয়ার্ডের রায়নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি এই ওয়ার্ডের ১ নম্বর ভোটার। সকাল আটটায় ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই ভোট প্রদান করেন তিনি। সিইসির ব্রিফিং ॥ এদিকে ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কিছু অনিয়ম ছাড়া সার্বিকভাবে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। যেসব কেন্দ্রের বিষয়ে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত হবে বলে। নির্বাচনে গণমাধ্যম মাধ্যমে কিছু অভিযোগ শুনেছি। আমরা কেবল নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যকে ধরতে পারি। সে হিসাবে ১৫টি কেন্দ্রে অনিয়মের তথ্য এসেছে। এসব কেন্দ্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। বরিশালে মেয়র প্রার্থী ডাঃ মনীষাকে লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল সার্বিক নিরাপত্তার জন্য। ডাঃ মনীষা মামলা করতে পারেন, আদালতের কাছে যেতে পারেন। অভিযোগ পেলে আমরাও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। রাজশাহীতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর বুলবুল ভোট না দেয়ার বিষয়ে বলেন, সেটা তার ব্যাপার, কিভাবে নিয়েছেন। আমাদের কাছে যে তথ্য তাতে কোন অনিয়ম হয়নি উল্লেখ করেন।
×