ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পেশাদার পারফর্মেন্সেই ওয়ানডে সিরিজ জয়

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ৩০ জুলাই ২০১৮

পেশাদার পারফর্মেন্সেই ওয়ানডে সিরিজ জয়

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হারলেও ওয়ানডে সিরিজ ঠিকই জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের ১০৩ রানের অসাধারণ ইনিংসের সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত ৬৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ১৮ রানে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাতে করে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছে মাশরাফিবাহিনী। এই জয়টি কিভাবে আসল? বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা মনে করছেন পেশাদার পারফর্মেন্সেই সিরিজ জয় সম্ভব হয়েছে। প্রথম ওয়ানডেতে ৪৮ রানে জেতার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩ রানে হেরে সিরিজে এসেছিল ১-১ সমতা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দল যেভাবে আক্ষেপের হারের মুখে পড়েছে তাতে ক্রিকেটারদের মানসিকতায় আঘাত আসার কথা। মানসিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারত। কিন্তু ক্রিকেটাররা যে এখন অনেক পেশাদার। তার ঝলক মিলেছে। মাশরাফি বলেছেন, ‘ক্রিকেট মেন্টাল গেম। আমরা দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ হেরেছিলাম। যদিও ৯৯ ওভার পর্যন্ত ম্যাচ আমাদের হাতে ছিল। কিন্তু এ ম্যাচে আমি বলব ছেলেরা পেশাদার পারফমেন্স দেখাতে পেরেছে। ছেলেরা দারুণ ছন্দে আছে।’ সেই ছন্দ সিনিয়ররাই আসলে ধরে রেখেছেন। পুরো সিরিজে দারুণ পারফর্মেন্স করেছেন তামিম ইকবাল। দুটি সেঞ্চুরি করে সিরিজ সেরা হয়েছেন তিনি। সাকিব আল হাসান ব্যাট-বল হাতে ছিলেন দারুণ। মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহও দারুণ পারফর্ম করেছেন। বল হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি নিজেও। তবে সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, এনামুল হক বিজয়ের মতো তরুণরা, জুনিয়ররা ছিলেন ব্যর্থ। দুই সেঞ্চুরি আর এক হাফসেঞ্চুরিসহ ২৮৭ রান করেছেন তামিম। ওয়েস্ট ইন্ডিজে সফরকারী দলের পক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। তামিমের পর সাকিব (১৯০), মাহমুদুল্লাহ (১১০), মুশফিকও (১১০) দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। মাশরাফি শেষ ম্যাচে ছয় নম্বরে নেমে ৩৬ রানের যে ইনিংসটা খেলেন সেটিও অসাধারণ। এই সিরিজে তামিম-সাকিবের জুটিও আলাদা নজর কেড়েছে। তিন ম্যাচে দু’জনের জুটিতে যোগ হয়েছে মোট ৩৮৫ রান। একটি ওয়ানডে সিরিজে যা বাংলাদেশের যে কোন জুটির সর্বোচ্চ অবদান। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে নির্দিষ্ট কোন জুটির সর্বোচ্চ সংখ্যক রানও। সিনিয়রদের নৈপুণ্যে তাই বিদেশের মাটিতে ৯ বছর পর সিরিজও জেতা গেল। ২০০৯ সালে সর্বশেষ বিদেশের মাটিতে, জিম্বাবুইয়ের মাটিতে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে জেতার আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২০০৯ সালের জুলাই মাসেই ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটি মাশরাফির জন্য আক্ষেপের সফরই ছিল। প্রথম টেস্টেই যে ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে পড়েছিলেন। এরপর সাকিব দায়িত্ব নিয়ে সব ম্যাচ জিতলেন। এবার মাশরাফিকে সিনিয়র ক্রিকেটাররা সেই আক্ষেপ যেন ঘুচিয়ে দিলেন। মাশরাফি তাই সিনিয়রদের কৃতিত্ব দিলেন। বললেন, ‘তামিম, সাকিব, মুশি (মুশফিক), মাহমুদুল্লাহ দারুণ খেলেছে। বোলাররা তিন ম্যাচেই দারুণ বল করেছে।’ কিন্তু জুনিয়রদের পারফর্মেন্সে হতাশ মাশরাফি। জুনিয়ররা সিনিয়রদের ধারে কাছেও যেতে পারেননি। তিন ম্যাচে সাব্বিরের অবদান ২৭ (১২, ১২, ৩), মোসাদ্দেক সৈকতের ১৪* (১১* ও ৩*)। এনামুল বিজয়ের সংগ্রহ ৩৩ (০, ২৩, ১০)। মাশরাফি হতাশ না হয়ে পারেন। তাইতো বলেছেন, ‘এখন জুনিয়রদের একটু এগিয়ে আসতে হবে।’ সঙ্গে উন্নতির অনেক জায়গাও দেখছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। বলেছেন, ‘যদি গত ৩-৪ মাসের পারফর্মেন্স দেখেন, এই সিরিজ জয়টা আমাদের জন্য খুব দরকার ছিল। এটা অবশ্যই এশিয়া কাপের আগে আমাদের জন্য ভাল হলো। তবে কিছু জায়গায় আমি মনে করি এখনও অনেক উন্নতি করতে হবে। সিরিজ জেতা মানেই তো সব না। অনেক জায়গায় এখনও অনেক উন্নতির দরকার, যেগুলো এখন আমরা পারছি না।’ জায়গাগুলোও দেখিয়ে দিলেন মাশরাফি, ‘ফিল্ডিংয়ে মনে হয়েছে অনেক উন্নতি প্রয়োজন। এছাড়া ব্যাটিংয়ে কিছু জায়গা আছে। বোলিংয়েও কিছু জায়গা আছে। উন্নতি করতে হবে।’ রুবেলকে উদাহরণ হিসেবে সামনে তুলে ধরেছেন মাশরাফি, ‘আমরা যেটা চেয়েছিলাম (তৃতীয় ওয়ানডেতে), রুবেল একদম সেটি করতে পেরেছে। এ রকম কিছু জায়গা আছে যেগুলোয় ধারাবাহিক হতে হবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমরা জানি যে উইকেট ভাল। আমার কাছে মনে হচ্ছিল আমাদের আরও ২০-২৫টা রান হলে হয়তো ভাল হতো। শুরুতে উইকেট নেয়া প্রয়োজন ছিল। কারণ ওদের টপঅর্ডার বেশ ভাল। সৌভাগ্যবশত লুইস আগে আউট হওয়ায় গেইলের ওপর চ্যালেঞ্জ বেশি ছিল। গেইলও ভালভাবেই চালিয়ে যাচ্ছিল। আবারও রুবেলের কথা বলতে হয়। রুবেল এসে ওই জায়গাটাতে ব্রেক থ্রু দেয়াতে পরের বোলারদের জন্য সুবিধা হয়েছে।’ সিরিজ জিতে গেছে বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজের হতাশা দূর করতে পেরেছে বাংলাদেশ। সামনে টি২০ সিরিজ রয়েছে। তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ শুরু হবে বুধবার। সেন্ট কিটসের প্রথম টি২০ ম্যাচটি হবে। এরপর ৫ ও ৬ আগস্ট মার্কিন মুলুকে ফ্লোরিডায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০ ম্যাচ মাঠে গড়াবে। ওয়ানডে’র সিরিজ জয়ের ধারাবাহিকতা টি২০তেও দেখতে চান মাশরাফি। তার নেতৃত্বের পালা শেষ। এবার দেশে ফেরার পালা। সাকিবের হাতে এখন নেতৃত্ব। মাশরাফি চান, টি২০তেও যেন দল জয়ের ধারাবাহিকতা দেখায়। এ নিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের এখন টি২০ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শুরু করতে হবে। কেননা ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-২০তে সেরা দল।’ পেশাদার পারফর্মেন্সে ওয়ানডে সিরিজ জেতা গেছে। এখন একই পারফর্মেন্সে টি২০ সিরিজ জেতা গেলেই হলো।
×