ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিকসে সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৩০ জুলাই ২০১৮

ব্রিকসে সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষার বিষয়টি এবারের সম্মেলনে প্রাধান্য পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক তরফা শুল্ক আরোপ মোকাবেলায় বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানোর পটভূমিতে এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এএফপি ও ব্রিকস পোস্ট। বুধবার দুদিনের সম্মেলনে শুরুতে রামাফোসা বলেন, ‘এককভাবে নিয়ম ঠিক করার রীতি এখনও দেখা যাচ্ছে তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এর পরিণতি নিয়ে আমরা চিন্তিত।’ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বাস ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলোতে। সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক জোট হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এর আছে। তবে দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ নয়। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টায় এখনও অনেক পিছিয়ে আছে দেশগুলো। পাঁচটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি বৃহস্পতিবার বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষা এবং মার্কিন শুল্ক হুমকি ও এককভাবে চলার নীতির বিপরীতে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে সম্মত হয়েছে। ব্রিকস নামে পরিচিত পাঁচ দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃবৃন্দ গত সপ্তাহে জোহানেসবার্গে তাদের ১০ম বার্ষিক সম্মেলনে বসেন। ব্রিকসের আউটরিচ আয়োজন হিসেবে ৩১টি দেশকে নিয়ে সম্মেলনে বসার পরিকল্পনা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন বাণিজ্যনীতি জোটকে নতুন করে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। ব্রিকস নেতৃবৃন্দ যেদিন জোহানেসবার্গে ট্রাম্পের শুল্ক ও সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন, একই দিন ওয়াশিংটনে ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে সাময়িকভাবে হলেও একটি আপোসে পৌঁছেন। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মনুচিন বৃহস্পতিবার বিষয়টি অবহিত করেন। এর আগে ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়ামের ওপর ওয়াশিংটনের একতরফা শুল্ক আরোপে ক্ষুব্ধ হয় পশ্চিমা মিত্ররা। যুক্তরাষ্ট্রের এক তরফা শুল্ক আরোপ মোকাবেলায় বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা এবারের সম্মেলন প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল। নেতৃবৃন্দের কেউই অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম স্পষ্ট করে উল্লেখ করেননি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই বহুপাক্ষিক নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা উচিত। সংরক্ষণবাদ ও একপাক্ষিকতা এরই মধ্যে আঘাত আনতে শুরু করেছে... বিশেষ করে উদীয়মান বাজারগুলো এর ফলে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যৌথ সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতাই ব্রিকসের মূল লক্ষ্য ও অগ্রাধিকার।’ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও সদস্য দেশগুলোর পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে রাজি হয়েছেন। প্রায় দু’সপ্তাহ আগেই তিনি হেলসিঙ্কিতে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। পুতিন বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য এক অনন্য স্থান হলো ব্রিকস। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মার্কেট। এর সদস্য দেশগুলো বিশ্বের মোট জিডিপির ৪২ শতাংশ পূরণ করে থাকে এবং এখানে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে।’ তিনি আরও বলেন, গত বছর ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান ওআইসির মহাসচিব হিসেবে এবারের ব্রিকসের সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনের ফাঁকে পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্তকে যুক্তরাষ্ট্র্র এখন প্রায়ই টার্গেট করছে। ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, তিনি ৫শ’ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের চীনা পণ্য আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। ট্রাম্পের অভিযোগ চীন অন্যায্যভাবে মুদ্রা কারসাজি করে বাণিজ্য সুবিধা নিচ্ছে। এটি চীনের ওপর ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা শুল্ক আরোপ। কয়েক মাস আগে তিনি চীনসহ কানাডা ও ইউরোপ থেকে ইস্পাত এবং এ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। জোহানেসবার্গে গিয়ে পৌঁছানোর আগে শি আফ্রিকার দেশ সেনেগাল ও রুয়ান্ডা সফর করেন। আফ্রিকায় নতুন মিত্র অনুসন্ধান তার এ সফরের অন্যতম লক্ষ্য।
×