ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর হারানো ঐতিহ্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩০ জুলাই ২০১৮

  রাজশাহীর হারানো ঐতিহ্য

রেশম শিল্পের ঐতিহাসিক শহর রাজশাহী। যাকে সিল্ক সিটি নামেও অভিহিত করা হতো। শিক্ষা নগরী রাজশাহীর সিল্ক কাপড় বুননের ইতিহাস অনেক দিনের। ১৯৬১ সালে নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর এই ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানাটির গোড়াপত্তন হয়। শুরু থেকেই রেশম উৎপাদনের এই কারখানাটি সিল্ক বস্ত্র উৎপাদনে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে আসছিল। শুধু তাই নয়, রেশম শিল্পের এই অনবদ্য সৃষ্টিকে বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতেও সক্ষম হয়। গুটি পোকা থেকে উদ্ভূত এই রেশম সিল্ক বস্ত্র তৈরিতে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করে। রেশম শিল্পকে উন্নতমানের সিল্ক কাপড়ে বিশেষায়িত করে যে দক্ষতা প্রদর্শন করা হয়েছিল তা আমাদের বস্ত্র উৎপাদন খাতে ঐতিহাসিক অবদান রাখতেও সফলভাবে এগিয়ে যায়। ফলে রাজশাহীর সিল্ক শাড়ির সুনাম এবং চাহিদা এত ব্যাপক ছিল যে দেশী-বিদেশী ক্রেতার অভাব কখনও হতো না। কিন্তু এই শতাব্দীর শুরুতে বিএনপি জোট সরকারের শাসনামলে সিল্ক উৎপাদনের মূল উপাদান রেশম শিল্প হুমকির মুখে পড়ে। ২০০২ সালে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ঋণের বোঝা চাপিয়ে কারখানাটি বন্ধ করে দেয় বিএনপি জোট সরকার। কারখানার ৩০০ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেও রেশম শিল্পকে পুনরায় চালু করা সম্ভব হয়নি তখন। সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রেশম বোর্ডের সহসভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর কারখানাটিকে তার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেয়ার সঙ্কল্প করেন। তারই ধারাবাহিকতায় রেশম শিল্পের পুনরুত্থানের নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। নতুন করে এই রেশম শিল্প-কারখানা চালু আপামর রাজশাহীবাসীকে নব উদ্দীপনায় স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। এই রেশম এখন থেকে শুধু কারখানাই নয়, মানুষের ঘরে ঘরে উৎপাদন করা হবে। সেই সুতা সবাই কারাখানায় বিক্রি করারও সুযোগ পাবে। বর্তমান সরকার উৎপাদনের বিভিন্ন খাতে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার যে মহতী উদ্যোগ হাতে নিয়েছে, রেশম উৎপাদন ব্যবস্থাকেও সেভাবে বাংলার সর্ব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন তৈরি হবে একইভাবে বৃহত্তর বস্ত্রশিল্পও গতিশীল হয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় অবদান রাখতে সক্ষম হবে। রেশম শিল্পকে পুনরায় প্রতিস্থাপন করার এই অনুষ্ঠানে অনেক পুরনো কারিগর এবং কর্মকর্তার উপস্থিতি ছিল নজর কাড়ার মতো। সবাই সম্মিলিতভাবে এক যোগে এই হারানো সম্পদকে আবারও নতুন করে তৈরি করার অঙ্গীকারে কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সাধারণ জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে বর্তমান সরকার যে উন্নয়নের জোয়ারে সবাইকে শামিল করেছে, রেশম কারাখানা প্রতিষ্ঠার নতুন উদ্যোগ সেই সম্ভাবনারই আরও একটি সংযোজন। এই শুভ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন রেশম বোর্ডের মহাপরিচালক আবদুল হাকিম। তিনি সেই দুঃসময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বিনা নোটিসে লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে একদিন এই রেশম কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সময়ে কারখানার চাকরি হারানো অনেককে তাদের পুরনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্যমে এই রেশম শিল্পে শরিক হওয়ার আবেদন জানানো হয়। প্রত্যেকের জোর প্রচেষ্টায় কারখানাটিকে আধুনিক এবং সময়োপযোগী করতে পারলে রাজশাহীর সিল্ক কাপড়ের উৎপাদন আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। সেই মহৎ উদ্দেশ্যে কারখানাটির নতুন যাত্রাপথ জোর কদমে সামনে এগিয়ে যাবে, এই প্রত্যাশায় পুরো দেশবাসী।
×