রাজনীতিতে এক যোগ্য উত্তরসূরি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। বংশ পরম্পরায় যার ধমনীতে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত প্রবাহিত। সাদিক আব্দুল্লাহর বাবার আপন মামা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ফুফু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দাদা কৃষককুলের নয়নের মণি সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এবং পিতা সাবেক চীফ হুইপ (বর্তমানে মন্ত্রী পদমর্যাদায়) আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি। গর্ভধারিণী মা বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহানারা বেগমের আদর্শের সিঁড়ি বেয়ে বড় হয়ে ওঠেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে বাবা ও মায়ের সঙ্গে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া স্বজনের রক্তে ভেজা সেই সময়ের দেড় বছরের শিশু বরিশালের রাজনীতির বর্তমান ‘আইকন’ যুবরতœ সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ নিজেকে যোগ্য উত্তরসূরি হিসেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি নিজের মেধা, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় উঠে আসা এক ‘উদীয়মান সূর্য’। যার আলোয় ‘আলোকিত’ বরিশালের আওয়ামী লীগের রাজনীতির অঙ্গন। শুধু তাই নয়; বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে তার নেতৃত্বে বরিশালের আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত।
সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দল মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী হিসেবে সর্বস্তরের ভোটারদের কাছে সর্বাপেক্ষা আলোচিত ও জনপ্রিয়। ব্যক্তি সাদিক আব্দুল্লাহর জনপ্রিয়তায় গোটা বরিশালে নৌকা পক্ষে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। তার দাদা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুধু বোন জামাতাই ছিলেন না, বিশ্বস্ত এক অকৃত্রিম বন্ধুও ছিলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে হোস্টেলে থাকার সময় আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের সাথে তৎকালীন উদীয়মান ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচয় হয়। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে মায়ের মুখের ভাষা প্রতিষ্ঠা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সতীর্থ সহযোদ্ধা ছিলেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। দু’জনের আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক এক সময় বন্ধুত্ব থেকে আত্মীয়তার বন্ধনে রূপ নেয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুর রব সেরনিয়াবাত জোনাল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ব বিবেকের সামনে মুক্তিযুদ্ধের বিশাল ভাবমূর্তি নির্মাণের অন্যতম কারিগর ছিলেন গণমানুষের নেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। স্বাধীনতা অর্জনের পর বিভিন্ন সময় তিনি ভূমি প্রশাসন, বন, মৎস্য ও পশু সম্পদ, বিদ্যুত, সেচ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও তিনি বার বার ছুটে যেতেন নিজের আপন ঠিকানায় অর্থাৎ কৃষক সম্প্রদায়ের মাঝে। কৃষকের মনের ভাষা যেমন তিনি বুঝতেন ঠিক তেমনি মেহনতি কৃষক শ্রেণীও তাকে আত্মার আত্মীয় হিসেবে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারতেন।
কালক্রমে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত হয়ে ওঠেন ‘কৃষককুলের নয়নের মনি’। একজন মন্ত্রী হলেও সাধারণের কাছে তিনি ছিলেন তাদেরই লোক। তার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক ফারাক্কা চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। ভূমি ব্যবস্থার সংস্কার, ভূমিহীন কৃষককে খাস জমি দান, পরিবেশ ও বনায়ন, ভূমিহীনদের জন্য সমবায় গ্রামের পরিকল্পনা, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণে উপকূলীয় বৃক্ষরোপণ পরিকল্পনা, সেচ, খাল ও নদী খননের প্রকল্প, বাংলার হারানো ঐতিহ্য তুলা চাষের জন্য উন্নয়ন বোর্ড গঠন এবং তুলা চাষের প্রবর্তনসহ মাটি ও মানুষের কল্যাণে অসংখ্য ভূমিকা রয়েছে আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের।
নির্মোহ ও সৎ রাজনীতিকের পথিকৃৎ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে জাতির পিতার পরিবারের সাথে ঘাতকরা হত্যা করেছে দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার অভিলিপ্সায়। অপরদিকে ১৯৯৭ সালে অশান্ত পার্বত্য অঞ্চলে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘শান্তি চুক্তি’ সম্পাদনের মাধ্যমে তৎকালীন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে মামা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সারাদিয়ে সেই সময়ের টগবগে যুবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে বরিশাল অঞ্চলে মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে জীবনপণ লড়াই করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ বির্নিমাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন, বিভাগ, শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগীয় পাসর্পোট অফিস, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠা, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, দোয়ারিকা-শিকারপুর ও দপদপিয়া সেতু নির্মাণসহ বরিশালের সার্বিক উন্নয়নে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে রক্তঝড়া অচিন্তনীয় বিয়োগান্তক অধ্যায়ের শোকগাঁথায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে বাবা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও নিজের শিশু পুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতসহ পরিবারের অনেক স্বজনকে হারিয়েছেন। সেদিন রাতে মৃত্যুর দুয়ার থেকে অলৌকিকভাবে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, বুলেটবিদ্ধ সহধর্মিণী শাহানারা বেগম ও তার কোলে থাকা দেড় বছরের শিশু পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ প্রাণে বেঁচে যান। শরীরে পাঁচটি বুলেট বহন করে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে শাহানারা বেগম স্বামী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখের অংশীদার।
১৯৭৫-এর পর সেনা শাসক জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে (৯১-৯৬ ও ২০০১-২০০৬) মিথ্যা মামলাসহ নানাভাবে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও তার পরিবারকে হয়রানির শিকার হতে হয়। ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থিত সরকারের আমলেও ষড়যন্ত্রের শিকার হন এ পরিবারটি। তবে সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মাঝেও এ পরিবারটি বরিশালের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসাস্থল ও শেষ ঠিকানা। স্বাধীনতার পর বরিশাল অঞ্চলের দৃশ্যমান যত বৃহৎ উন্নয়ন কর্মকা- হয়েছে তার শুরুটা করেছিলেন শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এবং অব্যাহত রেখেছেন তার সুযোগ্য পুত্র আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তাই তো গৌরব ও ঐতিহ্যের যোগ্য উত্তরসূরি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে ৩০ জুলাইয়ের বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচিত করে আগামীর উন্নত, আধুনিক ও আলোকিত এক তিলোত্তমা বরিশাল নগরী গড়তে স্বপ্নের জাল বুনছেন পুরো নগরবাসী।
নগরীর তরুণ ভোটার তানভির আহম্মেদ অভি বলেন, বরিশাল নগরীর উন্নয়ন প্রশ্নে আজও প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন সকলের কাছে স্মরণীয়। গত পাঁচ বছরে বিএনপি মনোনীত নির্বাচিত মেয়র আহসান হাবিব কামাল উন্নয়ন কর্মকা-ে কোন ভূমিকাই রাখতে না পারেননি বরং হিরনের সময়কার নগরীর শ্রীবৃদ্ধি হারিয়ে বরিশাল শহর আবারও পুরনো খানাখন্দের শহরের রূপে ফিরে গেছে। বিএনপির এ মেয়রের সীমাহীন ব্যর্থতায় শ্রীহীন হয়ে পরা বরিশাল শহরকে হিরনের বরিশালের রূপে ফিরিয়ে আনতে নগরবাসী আরেকজন হিরনকে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে ফিরছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন ভোটের। অবশেষে কাক্সিক্ষত সেই সিটি নির্বাচন আজ। এ নির্বাচনকে ঘিরে জমজমাট প্রচারণায় ঘুরে ফিরে হিরনের নামটিই সর্বত্র আলোচনায়। প্রয়াত হিরণের বিকল্প খুঁজতে গিয়ে শীর্ষ আলোচনায় যে নামটি নগরজুড়ে আলোচিত হচ্ছে সেটি হলো সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার মার্কার এ মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হলে হিরনের শুধু বিকল্পই নয় বরিশালকে ‘আলোকিত এক তিলোত্তমা’ নগরীতে রূপান্তরিত করে হিরনের উন্নয়ন রেকর্ড ভেঙ্গে চমক সৃষ্টি করতে পারবেন।
[email protected]