ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অন্তু আজাদের ‘আহত ফুলের গল্প’ চলচ্চিত্রের ট্রেলার প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩০ জুলাই ২০১৮

 অন্তু আজাদের ‘আহত ফুলের গল্প’ চলচ্চিত্রের ট্রেলার প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তরুণ নির্মাতা অন্তু আজাদ পরিচালিত ‘আহত ফুলের গল্প’ চলচ্চিত্রের ট্রেলার প্রকাশ পেয়েছে। দুই মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ট্রেলারটি প্রকাশের পর পরই সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনায় এসেছে। চলচ্চিত্রের ট্রেলারে দেখা যায় বিলে ফুটে থাকা সাদা শাপলা ফুল (একটি পাপড়ি লাল!), নদী-নৌকা, শিশু কিশোরদের কাঁচের গুলি খেলা, শীতের সকালে বুকে আরবী বই জড়িয়ে মাদ্রাসায় যাওয়া, কিশোর বয়সে ছেলে মেয়েদের প্রেমের আবেগে জড়িয়ে যাওয়া-বিরহ, মায়ের লাঞ্চনা-গঞ্জনা সহ্য করা, বাবাদের এক রৈখিক মনোভাব, বিরহ নির্ভর সহজ কথায় ফোঁক সুরে গান, অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর গৃহবন্দী জীবন, মাতব্বরদের গ্রামীণ পলিটিক্স, তারপরও শুভ চিন্তার মানুষদের স্বপ্নসঙ্গী করে বেঁচে থাকার বাস্তবতা। এক কথায় বলতে গেলে ‘আহত ফুলের গল্প’ চলচ্চিত্রের প্রতিটি ফ্রেমেই আছে আবহমান বাংলার ছাপ! ‘আহত ফুলের গল্প’ চলচ্চিত্র গত ১ জুলাই সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র পেয়েছে। পরিচালক অন্তু আজাদ বলেন, চলচ্চিত্রের গল্পের উপরিতলে শাপলা ও সবুজের একটি বিরহ নির্ভর প্রেমের গল্প দেখতে পাবেন দর্শক। এর সমান্তরালে চলবে অন্যান্য গল্পও। মূলত এই চলচ্চিত্রে আছে চলমান আবহমান বাংলাদেশের সহজ জীবন এবং একিসঙ্গে সঙ্কটের কথাও। আছে ফোক গান এবং উত্তর বঙ্গের বিয়ের গীতের ব্যবহার। পিতৃতান্ত্রিক বাংলাদেশের মুসলিম সমাজব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তি ও সংস্কৃতি সংস্পর্শ; এ তিনটি বিষয়- যথাক্রমে শাপলা, কামিনী এবং মোহনা নামের তিনজন মেয়ের জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করেছে সেই গল্পও আছে চলচ্চিত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। পরিচালক সূত্রে জানা যায়-বৈচিত্র্যময়তার কারণে ট্রেলারটি পছন্দ করেছেন অনেকেই। বিশেষ করে ফ্রেমিং, ফোঁক নির্ভর গানের অংশবিশেষ, ঘোরলাগা আবহ সঙ্গীত ও শব্দ মিশ্রণ এবং কৈশোর বয়সের প্রেমের আবেগপূর্ণ দৃশ্যগুলো ছুঁয়ে গেছে দর্শক হৃদয়। চলচ্চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফি মোঃ আরিফুজ্জামান, সম্পাদনা করেছেন- সৈকত খন্দকার, আবহ সঙ্গীত ও গানের সঙ্গীত আয়োজন- পিন্টু ঘোষ ও রোকন ইমন, সাউন্ড- শৈব তালুকদার, কালার-রাশেদুজ্জামান সোহাগ, টাইটেল এ্যান্ড ভিএফএক্স- নাজমুল হাসান। চলচ্চিত্রটির গল্প, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা- অন্ত আজাদ। প্রযোজনা-ওশান মাইন্ড এন্টারটেইনমেন্ট। অচিরেই চলচ্চিত্রের মুক্তির তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আহত ফুলের গল্প চলচ্চিত্রের ট্রেলার প্রকাশের পর বেশ আলোচনা চলছে। আলোচনায় চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ইতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা করছেন চলচ্চিত্র দর্শকরা। এর মধ্যে রাকিবুল ইসলাম রিফাত নামের একজন দর্শক ‘আহত ফুলের গল্প’ চলচ্চিত্রের ট্রেলার দেখে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘আয়নাবাজি’, ‘গহীন বালুচর’, ‘অজ্ঞাতনামা’ এর পরের নামটা হয়ত ‘আহত ফুলের গল্প’ হবে। গ্রামীণ পটভূমিতে বাস্তবিক গল্প নিয়ে তৈরি ‘আহত ফুলের গল্প’। একতরফা সমাজ ব্যবস্থার নিচে আত্মাহুতি দেয়া নারীকেন্দ্রিক এই গল্প সবাই স্পর্শ করবে, ভাল লাগবে। এই কুসংস্কার আর ঘরবন্দী সেকেলে অবহেলিত নারী জীবন নিয়ে বানানো এই মুভির সবচেয়ে বেশি নজরকাড়া বিষয় হল মুভির নান্দনিক দৃশ্যায়ন। ফ্রেমিং, কালার টিউন আর সুন্দর সাউন্ড মিলিয়ে একটা সুন্দর মুভি দেখতে পাবেন আপনারা। বাংলাদেশে যখন ভাল ছবির আকাল চলছে তখনি কিছু নির্মাতা তাদের সব পরিশ্রম উৎসর্গ করে দিচ্ছে বাংলা ছবির সুদিন ফিরিয়ে আনার জন্য। যেখানে চলচ্চিত্র শিল্পের সার্বিক অবস্থাও অত সুবিধার নয় আর নায়ক-নায়িকার রঙচঙ্গে নাচগান দেখেই প্রেক্ষাগৃহে ছবি নেয়া হয়, সেখানে নানা অপ্রতুলতার মাঝেও ভাল মানের- কাহিনী নির্ভর একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পথটি নিশ্চয় অনেক কণ্টকাকীর্ণ! চলচ্চিত্রের নব্য পরিচালক অন্তু আজাদের প্রতি অনেক শুভকামনা। ভাল কাজের পাশে থাকবেন সবসময় এই প্রত্যাশা করি। আপনাদের সহযোগিতা পেলে অনেকদূর যাবে এই ছবি।’ মোহাম্মদ তারেক লিখেছেন ‘তরুণ পরিচালক অন্তু আজাদ সম্প্রতি শেষ করেছেন তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আহত ফুলের গল্প’ এর কাজ। ট্রেলার এসেছে কদিন আগে, টিজার এসেছিল আরও আগে। আমি সেটি দেখলাম, পরিচিত অভিনেতা গাজী রাকায়েতকে দেখে ভাল লাগল। ছবিতে গল্পের প্রয়োজনে এক জোড়া নতুনমুখকে নেয়া হয়েছে। নির্মাতা এক্ষেত্রে স্টার কাস্টের চেয়েও গল্পের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়েছেন। টিজারে, ট্রেলারে পুরো গল্প কেমন হবে তার আভাস পুরোটা পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিনয় দুর্বল মনে হলো, নির্মাণশৈলী ভালই মনে হলো ট্রেলারে। ছবিটি এলে হয়ত পুরোটা বুঝতে পারব। বিভিন্ন কলাকুশলীর যতটুকু কাজ ট্রেলারে দেখলাম তাতে নতুন মেয়েটি ও গাজী রাকায়েতকে মনে হলো ভাল অভিনয় করেছে। আমি আশাবাদী ছবিটি নিয়ে। ভাল হবে, তবে দর্শককে দেখতে হবে। নতুনদের ভুল হবে, সেসব গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে’। রিফান স্বর্ণা লিখেছেন ‘গহীন বালুচরের পর গ্রামীণ পটভূমিতে আরেকটি সিনেমা! তবে কাহিনীর সঙ্গে বাস্তবিক ও নান্দনিক দৃশ্যায়ন আর নারীকেন্দ্রিকতা- সব মিলিয়ে নতুন কিছুর আশাবাদ জাগায়। আমাদের দেশে যেখানে চলচ্চিত্র শিল্পের সার্বিক অবস্থাও অত সুবিধার নয় আর নায়ক-নায়িকার রঙচঙ্গে নাচগান দেখেই প্রেক্ষাগৃহে ছবি নেয়া হয়, সেখানে নানা অপ্রতুলতার মাঝেও ভাল মানের- কাহিনীনির্ভর একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পথটি নিশ্চয় অনেক কণ্টকাকীর্ণ! চলচ্চিত্রের নব্য পরিচালক অন্তু আজাদের প্রতি অনেক শুভকামনা।’
×