ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল পঞ্চগড়

আসন ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি পুনরুদ্ধারে মরিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩০ জুলাই ২০১৮

  আসন ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ আর  বিএনপি পুনরুদ্ধারে মরিয়া

এম রায়হান, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহ জেলার চার সংসদীয় আসনই নির্বাচনী জ্বরে আক্রান্ত। জেলার ছয় পৌরসভা ও ৬৭ ইউনিয়ন নিয়ে এই চার সংসদীয় আসন গঠিত। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার চার আসনের মধ্যে তিনটিই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এবং অপরটি দলেরই এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর দখলে ছিল। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছড়াছড়ি। এ ঘটনায় বড় দুই দলেই সৃষ্টি হয়েছে গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব ও বিভেদ। প্রতি আসনেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন। তবে এ জেলায় চার আসনেই আওয়ামী লীগের রয়েছে শক্ত অবস্থান। বিএনপি ও জামায়াতের প্রকাশ্য কোন তৎপরতা না থাকলেও চার আসনই পুনরুদ্ধারে কিংবা ঘুরে দাঁড়াতে তারা চালিয়ে যাচ্ছে গোপন তৎপরতা। গত ২০১৪ সালের নির্বাচনে চার আসনেই আওয়ামী লীগের চার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারা হলেন, ঝিনাইদহ-১ থেকে আবদুল হাই, ঝিনাইদহ-২ থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি, ঝিনাইদহ-৩ আসনে নবী নেওয়াজ এবং ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুল আজিম আনার। আওয়ামী লীগ এই চার আসনই নিজেদের বিজয় ধরে রাখতে দিনরাত নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের কাছে গিয়ে নৌকায় ভোট চাইছেন। অন্যদিকে বিএনপি-ও জামায়াত আসনগুলো পুনরায় নিজেদের দখলে রাখতে ভেতরে ভেতরে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। ভোটারদের মতে, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে নির্বাচনে নৌকার পক্ষেই পুনরায় রায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) ॥ এ আসনে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে চলছে জোর হিসাব নিকাশ। নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। পৃথক পৃথকভাবে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠপর্যায়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। নির্বাচনে এ আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপির টার্গেট আসনটি পুনরুদ্ধার করা। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। তিনি এ আসন থেকে ২০০১ সাল থেকে তিন তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। দলের উচ্চপর্যায়ে তার যোগাযোগ ভাল। তিনি পুনরায় মনোনয়ন চাইবেন তা নিশ্চিত। কিছুদিন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়েরে প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সভা-সমাবেশ করছেন আব্দুল হাইয়ের পক্ষে। আব্দুল হাইকে তারা আবারও এমপি হিসেবে দেখতে চান। বর্তমান সাংসদ আবদুল হাই ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক শিল্পপতি নজরুল ইসলাম দুলাল, প্রিয়াঙ্কা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম আসাফোর সভাপতি শিল্পপতি সাইদুর রহমান সজল, আওয়ামী লীগের এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা অধ্যক্ষ মোঃ কামরুজ্জামানের মেয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পারভীন জামান কল্পনা ও ঢাকা মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কাজী আজাদুল কবির আজাদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও আওয়ামী আইন ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এম লিটন আহমেদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে পরাজিত নায়েব আলী জোয়াদ্দার শৈলকুপা আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। এছাড়াও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও দেশের অভিজ্ঞ কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমানও মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে তিনি জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন। অনেক আগে থেকেই তিনি এলাকায় এসে ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। এদিকে শিল্পপতি নজরুল ইসলাম দুলাল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। প্রায়ই তিনি হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে শৈলকুপায় আসছেন। বিভিন্ন সভা সেমিনার অংশ নিচ্ছেন, ভোটারদের কাছেও যাচ্ছেন। দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী বলে জানান দিচ্ছেন। অন্যদিকে শিল্পপতি সাইদুর রহমান সজলও এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান দিচ্ছেন। তিনি গ্রামগঞ্জ, হাট-বাজারে পোস্টার সেঁটেছেন। ঢাকা থেকে এলাকায় এসে গণসংযোগ করে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনিও আশাবাদী বলে ভোটারদের জানাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পারভীন জামান কল্পনাও মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। তার বাবা দলের সভাপতিম-লীর সদস্য অধ্যক্ষ মোঃ কারুজ্জামান এ আসন থেকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঢাকা মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদুল কবির আজাদ এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ্যাডভোকেট এম লিটন আহমেদও মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নায়েব আলি জোয়ার্দ্দার মনোনয়নও চাইবেন। তিনি শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আব্দুল হাইয়ের কাছে পরাজিত হন। আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিতেও এ আসনে রয়েছে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। হাইকোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক। তিনি মাঝে মাঝে শৈলকুপা এসে গণসংযোগ করছেন। বিএনপির কাযনির্বাহী কমিটির সদস্য ও শৈলকুপা থানা কমিটির সভাপতি আব্দুল ওহাবও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ আসন থেকে তিনি বিএনপির মনোনয়নে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে বিএনপির খুলনা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডুও মনোনয়ন চাইবেন। তিনিও দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এ আসনে বিএনপির আরও একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক ওসমান আলি। এ আসনে বিএনপিতে তীব্র গ্রুপিং রয়েছে। এ আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী রয়েছে। প্রার্থী হতে পারেন মনিকা আলম। এ আসনে জামায়াতের অবস্থান খুবই দুর্বল তাই তাদের কোন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে এ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান ভাল। তবে দলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনেও ভাল ফল করতে পারে। ঝিনাইদহ- ২ আসন (সদর ও হরিণাকুন্ডু) ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগ ও বিএনপি উভয় দল চায় এই আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে সদ্য আ’লীগে যোগ দেয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ সফিকুল ইসলাম অপু। এর আগে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ সফিকুল ইসলাম অপুর কাছে ধরাশায়ী হয়েছিলেন বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মসিউর রহমান। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু এবার শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে যাচ্ছেন। সেই বিবেচনায় একাদশ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য এখনও সবুজ সঙ্কেত। বিএনপির জন্য মূলত এ আসনটি পুনরুদ্ধারের লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তাদের দৃশ্যমান কোন তৎপরতা নেই। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৭৩ সালে এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার পুত্র সাংসদ তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এলাকায় ব্যাপক যোগাযোগ করছেন। দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তিনি উঠে পড়ে লেগেছেন। ঝিনাইদহ পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু দলের মনোনয়নের জন্য গণসংযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যানার বিলবোর্ডে তার ছবি শোভা পাচ্ছে। এই মুহূর্তে তার নাম তৃণমূল নেতাকর্মীদের মুখে মুখে উচ্চরিত হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাইদুল করিম মিন্টু ব্যক্তি জীবনে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যেও তিনি ছাত্র রাজনীতি থেকে আজ পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থেকেছেন। জেল-জুলুম, হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন তবুও দলীয় আদর্শ থেকে বিচ্যুতি হননি। তার কর্মী সমর্থকদের বক্তব্য, ইতোমধ্যে পৌর মেয়র মিন্ট নবীন ও প্রবীণদের নিয়ে গঠিত জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাংগঠনিকভাবে গতিশীল করেছেন। এর মধ্যে তার নেতৃত্বে অধিকাংশ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড আ’লীগের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম অপু এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। গত নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। দলে তারও একটি শক্ত গ্রুপ রয়েছে। তিনিও মাঠে নেমে পড়েছেন, ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। পর পর দু’বার দল তাকে মনোনায়ন দেয়ায় এবারও মনোনায়ন পেতে তিনি মরিয়া। নির্বাচনী এলাকায় তার সৎ রাজনীতিক হিসেবেও সুনাম রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। বিএনপি থেকে চারবার নির্বাচিত (বিতর্কিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ) সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমানকে প্রথমবারের মতো পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন অপু। তার কর্মী সমর্থকদের দাবি, দলের অনেক প্রবীণ নেতা তার মনোনায়নের পক্ষে কাজ করছেন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন এবং জয়লাভ করবেন। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শিল্পপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে মনোনায়ন চাইবেন এমন কথাও শুনা যাচ্ছে। তিনি জাহেদী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দুস্থ অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে এ আসনে বিএনপির শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী হচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মসিউর রহমান। তিনি ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আসনটি থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনে তিনি ফের মনোনয়ন চাইবেন। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এবং হরিণাকুন্ডু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মজিদও এ আসন থেকে মনোনায়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম। এই আসনে বিএনপির আরও একজন প্রার্থী হলেন সাবেক ছাত্রনেতা, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাবলু। এছাড়াও বিএনপি নেতা আবদুল মজিদ ও কামাল আজাদ পান্নু এ দু’জনও মনোনয়ন চান। এ আসনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ও জামায়াতের তেমন কোন প্রার্থীর গণসংযোগ করতে দেখা যায়নি। ঝিনাইদহ- ৩ আসন (মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর) ॥ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়দলে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার লড়াই। যে কারণে পুরনো প্রার্থীদের পাশাপাশি সম্ভাব্য নতুন প্রার্থীরাও মাঠ গরম করতে মাঠে নেমেছেন। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটি বা হাইকমান্ডেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন তারা। জামায়াতের প্রার্থী রয়েছে এ আসনে। মনোনয়ন পেতে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাশীর ছড়াছড়ি। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ নবী নেওয়াজ। তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা। দলের মনোনয়ন পেলে তিনি নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চলও একজন শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি জোরের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে চঞ্চল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে জোর লবিং করে যাচ্ছেন। তিনি এলাকায় মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ করছেন। তৃণমূল পর্যায়ে তার সমর্থন শক্ত। দলের পক্ষে মনোনয়ন পেলে বিজয়ের ঝান্ডা তার হাতেই থাকবে এমন দাবি কর্মী সমর্থকদের। সাবেক সংরক্ষিত মহিলা এমপি পারভিন তালুকদার মায়া মাঝে মধ্যে এলাকায় আসছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মিছিল মিটিং সভা-সমাবেশ করে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এ আসনে মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিল্পপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা মনোনয়নের জন্য ঢাকাতে লবিং করে চলেছেন। তবে এলাকায় কম আসেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আরও রয়েছেন- ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, ব্যারিস্টার মহম্মদ আলী, কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুন্নেছা মিকি, জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও মহেশপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ ও দলের সহ-তথ্য গবেষণা সম্পাদক এসএম জামান মিল্লাত। তারা সকলেই মাঠে তৎপর রয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, মহেশপুর থানা কমিটির যুগ্মসম্পাদক মেহেদী হাসান রনি। তার বাবা শহিদুল ইসলাম মাস্টার এ আসন থেকে ৩ বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলের কেন্দ্রীয় সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মনির খান মনোনয়ন চাইবেন এটা নিশ্চিত। দলের মহেশপুর থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মমিনুর রহমান আগে থেকেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। মহেশপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এমএ আহাদ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এ আসনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) একক প্রার্থী আব্দুর রহমান। এ আসনে জামায়াত বেশ শক্তিশালী। মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াতের। চাপের মধ্যেও তারা টিকে আছে। আগামী নির্বাচনে জামায়াতের পক্ষ থেকে মতিয়ার রহমান এলাকায় গোপনে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। ঝিনাইদহ-৪ আসন (কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার একাংশ) ॥ এ আসনেও আওয়ামী লীগে তীব্র গ্রুপিং রয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম আনার এবারও শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশী। নির্বাচনকে সামনে করে ব্যাপক গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। তার সমর্থকদের দাবি, এ আসনে এমপি আনারই নিশ্চিত ফের মনোনয়ন পাবেন। এলাকার উন্নয়নের ব্যাপারেও এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার বেশ তৎপর। সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। মানুষের বিপদে আপদে তিনি ছুটে যান তাদের পাশে। এলাকার ভোটারদের মধ্যে একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে এলাকায় কখনও পুলিশ নিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়নি। বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে বা সভা সমাবেশে তিনি নিজেই মোটরসাইকেল চালিয়ে দিন অথবা রাত যে কোন সময় পৌঁছে যান এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের যে কোন গ্রামে। এছাড়া সংসদ সদস্য আনার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামের পর গ্রাম চষে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া কালীগঞ্জে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের নিজে এ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে যশোর হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে আলোচনায় এসেছেন। গত সাড়ে চার বছরে রাস্তা, কালভার্ট, ব্রিজ, বিদ্যুত, স্কুল-কলেজের একাডেমিক ভবন, স্টেডিয়াম, স্কুল সরকারীকরণ ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে তার হাত দিয়ে। যা ইতোপূর্বে কোন সরকারের সময়ে হয়নি। আগামী নির্বাচনে দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে জনগণ আবারও তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে এমন বিশ্বাস তার কর্মী সমর্থকদের। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান। তিনিও জোর প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশসহ দলের নানান কর্মসূচী পালন করছেন। তিনি এবার দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু দল থেকে মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনায়ন প্রত্যাশী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শহীদুজ্জামান বেল্টু। তিনি এ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি গণসংযোগ করছেন। কালীগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ ইতোমধ্যে গণসংযোগে অধিক তৎপর হয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। এ আসনে জামায়াতের কোন তৎপরতা নেই। আওয়ামী লীগ দলীয় কোন্দল মেটাতে পারলে আগামী নির্বাচনেও জয়ের মালা তারাই পরবে বলে তৃণমূলের ধারণা।
×