ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গতবারের চেয়ে ১২ লাখের বেশি পশু প্রস্তুত

দেশী গরু, ছাগল দিয়েই এবার কোরবানি হবে ॥ কোন সঙ্কট নেই

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৩০ জুলাই ২০১৮

 দেশী গরু, ছাগল দিয়েই এবার কোরবানি হবে ॥ কোন সঙ্কট নেই

এম শাহজাহান ॥ অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ায় কোরবানিতে গবাদি পশুর সঙ্কট তৈরির কোন আশঙ্কা নেই। কোরবানি হবে এবার দেশী গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ দিয়েই। কয়েক বছর ধরে আমদানি নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রাণিসম্পদ খাতে নীতিগত সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া গরু ও খাসির মাংসের ন্যায্য দামও নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে খামারিরা গবাদি পশু উৎপাদনে উৎসাহ পাচ্ছেন। কোরবানি দেয়ার জন্য এবার প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ গবাদিপশু তৈরি রয়েছে। গত বছর যে পরিমাণ পশু জবাই হয়েছিল এবার তার চেয়ে ১২ লাখের বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। যারা কোরবানি দেয়ার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য এটি সুখবর বটে। জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে গবাদি পশুর উৎপাদন বাড়ায় এখন আর গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষের মতো প্রাণী আর আমদানি করার প্রয়োজন হচ্ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু গরু দেশে আমদানি হলে ও তা হিসেবের পর্যায়ে আর নেই। সারা বছর দেশীয় পশুর মাংস দিয়ে চাহিদা মেটানো হয়। এবার কোরবানির চাহিদাও সামাল দেয়া হবে দেশে উৎপাদিত গরু-ছাগল দিয়ে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, কোন গবাদি পশুর সঙ্কট দেশে এখন আর নেই। দেশের কৃষি অর্থনীতির জন্য এটি সুখবর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গবাদি পশুর উৎপাদন বাড়ায় চামড়া শিল্পেও সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর ১৫৫টি ট্যানারি কাঁচা চামড়া সংগ্রহে পুরোপুরি প্রস্তুত। সরকারের পক্ষ থেকে এবার কোরবানির চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক এবিএম খালেদুজ্জামান সম্প্রতি বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও কোরবানি সামনে রেখে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর নানা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। শুধু তাই নয়, গত বছর যে পরিমাণ পশু জবাই হয়েছিল এবার তার চেয়ে ১২ লাখ বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। তাই কোরবানিতে পশুর কোন সঙ্কট হবে না এবং ন্যায্যমূল্যে গবাদি পশু কেনাবেচা হবে। অধিদফতরের তথ্যমতে, সারাদেশে এবার কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭১ লাখ। গত বছর এ সংখ্যা ছিল এক কোটি ৪ লাখ ২২ হাজারের কিছু বেশি। তবে এ বছর কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গরু-মহিষের সংখ্যা প্রায় ২৯ লাখ ২০ হাজার এবং ভেড়া ছাগল ১৮ লাখ ২৬ হাজার। বাকিগুলো অনুৎপাদনশীল গরু-মহিষ ও ছাগল ভেড়া। জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে গবাদি পশু বিশেষ করে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার উৎপাদন বাড়ায় কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। রফতানিতে দ্বিতীয় থাকা দেশের চামড়াখাতও এগিয়ে যাচ্ছে। এখন চাহিদা সামাল দিতে দেশীয় গবাদি পশুই হয়ে উঠছে ভরসা। খামারিদের ন্যায্যদাম নিশ্চিত হওয়া এবং পশুপালনে সহজশর্তে ঋণসহ নীতিগত সহায়তা প্রদানের কারণে পশু উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ২৩৯ লাখ ৩৫ হাজার গরু উৎপাদন হয়েছে। আর সর্বশেষ গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গরু উৎপাদন হয়েছে ২৪০ লাখ ৩৫ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ১ লাখ গরু বেশি উৎপাদন হয়েছে। একইভাবে ছাগল, ভেড়া ও মহিষের উৎপাদনও বেড়েছে। উৎপাদন বাড়ায় দেশে গবাদি পশুর সঙ্কট দূর হচ্ছে। আসন্ন কোরবানিতে এই গরু ও ছাগল দেশের বাজারে আসবে। ফলে কোরবানি সামনে রেখে প্রতিবছর গরু নিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হয়ে থাকে এ বছর সে আশঙ্কা আর থাকছে না। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এবারের কোরবানিতে চাহিদা অনুযায়ী গরুর যোগান থাকবে বাজারে। জানা গেছে, বাংলাদেশে ২৮ লাখ পরিবার সরাসরি গবাদি পশু পালনের সঙ্গে জড়িত। এর পাশাপাশি ভারত থেকে গরু আমদানি কঠিন হওয়ায় গত কয়েক বছরে দেশে ৬৫ হাজার গরুর খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এখন গরু উৎপাদন করছেন খামারিরা। পাশাপাশি প্রান্তিক কৃষক পর্যায়েও অবাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিপুলসংখ্যক গরু ও ছাগল উৎপাদন হচ্ছে। ফলে বাড়ছে উৎপাদন। এতে করে ভারত, মিয়ানমার এবং নেপাল থেকে গরু আমদানির প্রবণতা একেবারে শূণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে। কোরবানি সামনে রেখে যাতে গরু আমদানি না হয় সে দাবিও রয়েছে খামারি এবং স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীদের। গরুর ন্যায্যদাম নিশ্চিতে অবৈধপথে আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু জনকণ্ঠকে বলেন, কোরবানিতে এবার গরুর কোন সঙ্কট হবে না। এছাড়া কাঁচা চামড়া ও যাতে ন্যায্য দামে বিক্রি হয় সেটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই চামড়াখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। আশা করছি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কোরবানির বাজার পরিস্থিতি এবার স্বাভাবিক থাকবে। এদিকে আমদানি কমে আসায় দেশীয় খামারিরাও গরু উৎপাদনে নজর দিয়েছেন। গবাদি পশুপালনে সহজশর্তে ঋণ দেয়া হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে গরু উৎপাদনে বেশ এগিয়েছে বাংলাদেশ।
×