ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নেয়া হয়েছে

৩০ পাহাড়ে ফাটল

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৯ জুলাই ২০১৮

৩০ পাহাড়ে ফাটল

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ পাহাড় কাটার কারণে মাটি নরম হয়ে পড়ায় এখন কক্সবাজারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাহাড় ধসে পড়ছে। হতাহত হচ্ছে স্থানীয় লোকজন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে ৩০টি পাহাড়ে ফাটল ধরেছে। ভারি বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে পড়ছে ওসব পাহাড়। শুক্রবার রাতেও ধসে পড়েছে লিংক রোড বিসিক শিল্প এলাকার একটি উঁচু পাহাড়। এতে পাঁচটি বসতবাড়িসহ দুই দোকানঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতে স্থানীয়রা ওই এলাকার বসবাসকারীদের সরিয়ে নিয়ে গেছে অন্যত্র। বিসিকের পাহাড়তলীতে ক্ষয়ক্ষতির কবলে পড়েছে আরও অন্তত ২৫টি পরিবার। শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসন সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে অন্তত ২০টি ঘর। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে প্রায় ৩০ পাহাড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাহাড় কাটার কারণে পাহাড়ের ভেতরে শুকনো মাটি চুষে খাচ্ছে ওই বৃষ্টির পানি। এতে ৩০টি পাহাড়ে কমবেশি ফাটল ধরেছে বলে জানা গেছে। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা করেছেন সচেতন মহল। সূত্র জানায়, ফাটল ধরা ওই পাহাড়গুলোর মধ্যে লিংক রোডের মুহুরীপাড়ায় একটি পাহাড় ধসে গেছে। কক্সবাজার লাইটহাউসপাড়া, কলাতলী, শরণ সমিতি, উত্তরণ গৃহায়ন সমিতি, সাহিত্যিকা পল্লী ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার পাহাড়ী ভূমিতে ভয়াবহ ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার রাতে শহরের লিংক রোডরে মুহুরীপাড়ার বিসিক শিল্প এলাকার দক্ষিণ পার্শ্বে প্রায় দেড়শ’ ফুট উঁচু একটি পাহাড় আকস্মিক ধসে পড়েছে। উঁচু পাহাড়টির কিছু কিছু অংশে ফাটল ধরেছে জানিয়ে কক্সবাজারের দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির জানান, টানা ও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে ধসে পড়ছে। প্রায় পাঁচ একরের দেড়শ’ ফুট ওই উঁচু পাহাড়টির কিছু অংশ স্থানীয়রা কেটে ফেললে এতে বৃষ্টির পানি সহজে পাহাড়ের মাটির ভেতর ঢুকে পড়ায় পাহাড়টি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় শনিবার সকাল থেকে ভূমি ধসে আটকেপড়া বসতিগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস বাহিনীর লোকজন উদ্ধার তৎপরতা ও উচ্ছেদ অভিযান চালায়। পাহাড় ফাটল ধরায় ভবিষ্যতে মানুষের জানমালের যাতে কোন ক্ষতি না হয়, সেজন্য প্রশাসনের সহযোগিতায় সেখানে বসতিদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে জানিয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল হাসান জানান, পাহাড়ে ও পাহাড়ের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে অতিঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো। বুধবার শহরে ও রামুতে পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনার পর জেলার পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে বসবাসকারীরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। অনেকে নারী-শিশুদের অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় চরম আতঙ্কে রয়েছে রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ করার পর হাজার হাজার রোহিঙ্গা যে যেভাবে ইচ্ছে পাহাড় কেটে আশ্রয়স্থল ঠিক করেছে। ওই সময় রোহিঙ্গারা শুনেনি কারও বাঁধা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপন ও বিভিন্ন এনজিওর স্থাপনা নির্মাণকল্পে পাহাড় কাটা হয়েছে নির্বিচারে। সচেতন মহল বলেন, উখিয়া ও টেকনাফে অনুপ্রবেশ করা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে শতাধিক পাহাড় কাটা হয়েছে। অন্তত ৫ হাজার একর বনভূমি কেটে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমার থেকে আসা ওসব রোহিঙ্গা। তাদের সেবা প্রদানকারী কয়েকটি এনজিও নিজেদের স্থাপনা নির্মাণকল্পে নির্বিচারে কেটেছে বহু পাহাড়-টিলা। যার ফলে পাহাড়ের স্থায়িত্ব নরম হয়ে পড়ে এখন ধসে পড়ছে। নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু হতে নবনির্মিত সড়ক ৩ নং ওয়ার্ডের মক্কা টিলা (মক্কোর ভিটা) নামক স্থানে চলাচলের প্রধান রাস্তা সংলগ্ন পাহাড় ধসে পড়েছে। এতে স্থানীয়দের চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তুমব্রু থেকে সরাসরি বাইশপারী যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে প্রবল বর্ষণে পাহাড়ী ঢলে টেকনাফ-কক্সবাজার এলজিইডি সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে ওই সড়ক দিয়ে কোন প্রকারের যানবাহন চলাচল করছে না। তবে টেকনাফ-কক্সবাজার হাইওয়ে প্রধান সড়ক ও টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক চালু রয়েছে। এলজিইডি সড়কটি টেকনাফের উপকূল দিয়ে গ্রামের ভেতর থেকে শামলাপুর উখিয়ার ইনানী হয়ে কক্সবাজারের কলাতলী গিয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে প্রবল বর্ষণে পাহাড়ী ঢলে টেকনাফ বাহারছড়া নোয়াখালীয়াপাড়া বাঘঘুনা মসজিদের পাশে পাহাড়ী ঢলে বিধ্বস্ত হয়ে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে। টেকনাফ উপজেলা প্রকৌশলী বলেন বিষয়টি কক্সবাজার নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।
×