ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৯ জুলাই ২০১৮

পাকি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন

পাকিস্তানে বুধবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানে নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যে উদ্বেগ প্রকাশ করছে তার সঙ্গে ওয়াশিংটন মতৈক্য পোষণ করে। ডন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভোটের আগেও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপের মতো প্রকাশের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা হয়েছে। তাদের স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালাতে দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হিদার নুয়ার্ট বিবৃতিটি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের নির্বাচনকে পুরোপুরি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্য পূরণ হয়নি বলে ওয়াশিংটন মনে করে। নুয়ার্ট বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইলেকশন অবজারভার মিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানে নির্বাচনে আইনী কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে যা ইতিবাচক, কিন্তু এসব কিছু ছাপিয়ে গেছে সব গ্রুপকে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ এবং নির্বাচনী প্রচার চালানোর সুযোগ না দেয়ার মতো বিষয়গুলো। নুয়ার্ট বলেন, সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে এরকম ব্যক্তি বা গ্রুপকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়ার সুযোগে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। তবে ওই সব গ্রুপকে ব্যালটের মাধ্যমে প্রত্যাখান করার তিনি পাকিস্তানী ভোটারদের প্রশংসা করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সব পাকিস্তানীর জন্য রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ থাকুক এরকম একটি ব্যাপক ভিত্তিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুশীলনের নির্বাচন হোক বিষয়টি আমরাও আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে উৎসাহিত করি। পাকিস্তানে নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ওই সরকারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগের অপেক্ষায় আছে। কারণ একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া আমাদের লক্ষ্য।’ পররাষ্ট্র দফতর থেকে দেয়া ওই বিবৃতির প্রথম অনুচ্ছেদে বুধবারের নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যক নারী ভোটারের উপস্থিতির প্রশংসা করা হয়েছে। কারণ তারা নিজেদের দেশের ভবিষ্যত গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে। নির্বাচনের আগে যেসব সহিংসতা হয়েছে এবং নির্বাচনের দিন কোয়েটায় একটি ভোটকেন্দ্রের কাছে বোমা হামলায় প্রায় ৪০ জনের মতো নিহত হওয়ায় বিবৃতিতে হামলার নিন্দা এবং ঘটনা শিকার ব্যক্তি ও নিহতদের স্বজনের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। নুয়ার্ট বলেন, গণতান্ত্রিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালীকরণ এবং একটি সক্রিয় সুশীল সমাজ পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিবিড় নজরদারি করে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে তাৎক্ষণিকভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু ঘোষণা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন পর্যবেক্ষকরা প্রথম থেকেই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। এর নির্বাচনের একদিন পর ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) (পিএমএল-এন)। একইসঙ্গে ফল প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি। লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে পিএমএল-এনের প্রধান শাহবাজ শরীফ ওই অভিযোগ করে বলেন, এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। এতে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ। নওয়াজ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এদিকে ইইউ ও কমনওয়েলথের পর্যবেক্ষকরা শুক্রবার তাদের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সেনাবাহিনী ভোটকেন্দ্রগুলোতে মোতায়েন থাকলেও তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেনি। তারা কেবল প্রিজাইডিং অফিসারদের তাদের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করেছেন। সেনাবাহিনী ভোটের কোন পর্যায়ে হস্তক্ষেপ না করলেও যে পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে সে বিষয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইসলামাবাদে ইইউ অবজারভেশন মিশনের প্রধান মাইকেল গাহলার বলেন, মিশনের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রিসাইডিং অফিসারদের কাজে সেনাবাহিনী কোন রকম হস্তক্ষেপ করেনি। তবে বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলোকে টার্গেট করে সহিংস হামলা হয়েছে। সাবেক ক্ষমতাসীন দল থেকে যারা দাঁড়িয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে নানা রকম দুর্নীতির মামলা রয়েছে, অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা এবং অনেকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
×