ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ সাখাওয়াত হোসেন

অপরাধ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৯ জুলাই ২০১৮

অপরাধ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়

অপরাধ একটি সামাজিক প্রপঞ্চ, প্রত্যেক সমাজেই অপরাধ থাকে। এমন কোন সমাজব্যবস্থা নেই যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয় না। সৃষ্টির শুরু থেকেই পৃথিবীতে অপরাধ এবং অপরাধীদের বিকাশ ঘটেছে এবং এখনও পর্যন্ত তা বহমান। কালের বিবর্তনে, অপরাধের বিষবাষ্পে অপরাধের ভয়াবহতা ও অপরাধীর জঘন্যতা এবং নৃশংসতা যে কোন সময়ের তুলনায় আরও ভয়ঙ্কর পরিণতি পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সমাজে অপরাধের বিস্তার রয়েছে। কোন সমাজে কম আবার কোন সমাজে বেশি। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ও বিশ্বায়নের আধুনিকতায় অপরাধের কৌশলে ও ভয়াবহতায় বাংলাদেশও বিভিন্নভাবে হুমকির সম্মুখীন। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীরা কৌশলী ভূমিকা প্রয়োগ করে ভয়ঙ্কর সব অপরাধ সংঘটিত করে থাকে। অনেকসময় অপরাধীদের গতিবিধি ও কর্মকৌশলের কাছে অসহায় ভূমিকা পালন করা ছাড়া কিছু করার থাকে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কারণ; সঙ্কট, সমস্যা, সীমাবদ্ধতা ও বহুবিধ ঝুঁকির মধ্য দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীতে আধুনিকায়নের যে ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে সেটি খুবই আশাবাদের সঞ্চার করার পাশাপাশি অপরাধ দমন ও অপরাধীদের গ্রেফতার করার সক্ষমতা দেখিয়েছে পুলিশের নবগঠিত বেশ কয়েকটি ইউনিট। আবার এও স্বীকার করতে হবে, পুলিশের যে রীতিতে কিংবা গতিতে আধুনিকায়ন হচ্ছে অপরাধীরা তার তুলনায় আরও দ্রুতগতিতে সুসংগঠিত হয়ে উন্নত রণকৌশল ও আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে অপরাধ কর্ম সংঘটিত করছে। আবার কোন কোন সমাজে দেখা যায়, সামাজিক বাস্তবতা, লোকচক্ষুর ভয়, পুলিশের মামলা নিতে অপরাগতা, কেস মামলা সম্বন্ধে অজ্ঞতা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা পুলিশের কাছে মামলা নথিভুক্ত করে না। এর ফলে অপরাধের একটা বড় অংশ অপ্রকাশিত থেকে যায়। তাই অপরাধের সংখ্যা, ধরন ও আনুপাতিক হারের সঠিক তথ্য-উপাত্ত জানা সম্ভব হয়ে উঠে না সরকারের পক্ষে। তার ফলে, সামগ্রিক অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। আবার এও দেখা গেছে, অপরাধীর ভয়ে ভিক্টিম মামলা না করার কারণে অপরাধীরা পূর্বের ন্যায় আবারও অপরাধ করে থাকে। কাজেই পুলিশের অপরাধের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপও খুব বেশি একটা কাজে আসে না (অপরাধের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট না থাকায়)। আবার অন্য দৃষ্টিকোণ দেখা যায়, পুলিশ সদর দফতর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, সারাদেশে পুলিশের সংখ্যা প্রায় ২ লাখের কাছাকাছি। এর মধ্যে কমবেশি ৩০ হাজারের মতো কর্মরত থাকে রাজধানী ঢাকাতে। মানুষকে অধিক সেবা দিতে শুধু রাজধানীতেই এক লাখ পুলিশ দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, দেশে প্রতি ১ হাজার মানুষের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য। আমাদের পুলিশরা আবার রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং রাজনীতিবিদদের প্রটোকলে ব্যস্ত থাকে, যেখানে সাধারণের নিরাপত্তা ভূলুণ্ঠিত হয়। মূলত সার্ভিস অরিয়েন্টেড না হওয়াটা আমাদের পুলিশ বাহিনীর একটি বড় ব্যর্থতা। সিকিউরিটি অরিয়েন্টেড পুলিশিং দিয়ে অপরাধ প্রতিকার করা সম্ভব নয়। তাছাড়া, যেখানে পাশের দেশ ভারতে প্রতি ৭৩০ জনের জন্য একজন এবং জাপানে ২৫০ জনের নিরাপত্তায় একজন করে পুলিশ সদস্য রয়েছে। সুতরাং অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করা তথা সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে কখনই সম্ভব নয়। তাই, বিকল্প চিন্তা ও কৌশলের আবির্ভাব ঘটাতে হবে যার মাধ্যমে সমাজে অপরাধ করার সুযোগ পরিবেশগত ও প্রাকৃতিকভাবেই কমে আসবে। সেক্ষেত্রে অপরাধের সুযোগ কমিয়ে কিভাবে অপরাধীকে দমন করা যায় তার জন্য বিকল্প চিন্তা-ভাবনা ও কৌশলের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। আর একটি বিষয় এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয়, আমরা ইচ্ছে করলেই পুলিশ বাহিনীতে আমূল পরিবর্তন আনতে পারব না নিমিষেই। কারণ, এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। তবে কর্মপ্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে পরিবর্তনের লক্ষ্যে। কাজেই আমাদের যা সম্পদ রয়েছে তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও গঠনগত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমেই অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে সম্ভবপর হবে। প্রথমত. আমাদের পুলিশ বাহিনীকে প্রোএ্যাকটিভ হতে হবে। অর্থাৎ অপরাধ ঘটার পূর্বেই অপরাধীকে অপরাধ করার সুযোগ প্রদানে বাধা দিতে হবে। এর জন্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের চৌকস, উন্নত মানসিকতা ও পেশাদারিত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। তা না হলে প্রোএ্যাকটিভ পুলিশিং ব্যবস্থা কখনই চালু করা সম্ভব হবে না। আমরা সাধারণত রিএ্যাকটিভ পুলিশিং ব্যবস্থার প্রচলন দেখি। ঘটনার পরে পুলিশ এসে হাজির হয় যার ফলে অনেক সময় তথ্যউপাত্ত সংগ্রহে সমস্যা হয় এবং অপরাধীও লাপাত্তা হয়ে যায়। যদি প্রো-এ্যাকটিভ ব্যবস্থা চালু করা যায় তাহলে নিমিষেই অপরাধের সংখ্যা কমে আসবে এবং অপরাধীও পুলিশের সক্ষমতা সম্বন্ধে জেনে বারংবার অপরাধ করার দুঃসাহস দেখাবে না। অপরাধ সচেতনতা বৃদ্ধি, উদ্বুদ্ধকরণ, প্রচার প্রচারণা, কমিউনিটির মেম্বারদের একীভূতকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রোএ্যাকটিভ পুলিশিং ব্যবস্থাকে কার্যকর করা যায়। দ্বিতীয়ত. পুলিশে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও বাস্তবসম্মত করে তুলতে হবে। কারণ, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হলে পুরোপুরি পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি দক্ষ ছেলে-মেয়েদের পুলিশ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। যার ফলে, জনসাধারণের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান; চৌকস পুলিশিং চালুকরণের ফলে জনমনে স্বস্তি ও শান্তি ফিরিয়ে আনা সময়ের ব্যাপার মাত্র। বেশ কিছুদিন আগে পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগের সময় স্বচ্ছতার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। আশা রাখব, ভবিষ্যতে পুলিশের প্রত্যেকটি নিয়োগে যথাযথ যাচাই-বাছাই, যোগ্যতা এবং নিরপেক্ষতার মাপকাঠির মাধ্যমে নিয়োগ নিশ্চিত করা হবে। তৃতীয়ত. স্মার্ট পুলিশিং সিস্টেম চালু করতে হবে। অর্থাৎ পুলিশ বাহিনীর বিচক্ষণতাকে বৃদ্ধি করতে হবে। সংখ্যা নয় বিচক্ষণ পুলিশ প্রয়োজন মর্মে বিদ্যমান ব্যবস্থার মাধ্যমে যত বেশি দক্ষ পুলিশ তৈরি করা যায় সেটাই হবে মূল এবং মুখ্য চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ পুলিশকেও স্বউদ্যোগে তাদের বাহিনীকে আধুনিক, দক্ষ ও জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসে কাজ করতে হবে। সমাজে এমন একটি ব্যবস্থার সৃষ্টি করতে হবে যাতে জনসাধারণ পুলিশকে যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধার জায়গায় স্থান দিয়ে পরস্পরের সহযোগী ভেবে কাজ করতে পারে। পুলিশের নিয়মমাফিক টহল ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি উন্নত ও আধুনিক টহলের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে অপরাধীদের নিভৃত রাখা যেতে পারে নিমিষেই। চতুর্থত. কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থাকে আরও কার্যকরী এবং যথাযথ করার স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায়, অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে যে বিদ্যমান ব্যবস্থা রয়েছে তা থেকে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে কমিউনিটি পুলিশের কমিটি গঠনে সমাজের মধ্যে গ্রহণযোগ্য মানুষটিকে দায়িত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে সমাজব্যবস্থার স্বার্থে। কমিউনিটি পুলিশের ভূমিকা মূলত প্রো-এ্যাকটিভ। অর্থাৎ অপরাধ ঘটার যোগসূত্র অনুধাবন করে তা নিবারণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা। অথচ, আমাদের দেশে কমিউনিটি পুলিশের উপর মানুষের আস্থা তেমন নেই বললেই চলে কিংবা আস্থার জায়গায় পৌঁছাতে এখনও সক্ষম হয়নি আমাদের কমিউনিটি পুলিশিং সিস্টেম। পুলিশ ও জনগণের যৌথ প্রচেষ্টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সমাজের বিবিধ সমস্যার সমাধান মর্মে বিশ্বাস স্থাপন করে কাজ করতে হবে। পঞ্চমত. অংশীদারিত্বভিত্তিক পুলিশিং সিস্টেম চালু করতে হবে। পুলিশ ও জনগণ যৌথভাবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সমস্যার কারণ চিহ্নিতকরণ, সমস্যার সমাধান উদ্ঘাটন এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ পাবলিক একে অন্যের সহযোগী হয়ে কাজ করলে সমাজের প্রচলিত নানামুখী অনাচার, বিশৃঙ্খলা, সহিংস অপরাধ ও জঙ্গীবাদ ভিত্তিক কার্যক্রম সহসাই কমে আসবে। অংশীদারিত্ব পুলিশের উদাহরণ বহির্বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। যথাযথ উদ্যোগ ও উন্নত মানসিকতা বপন করতে পারলেই আমাদের দেশেও অংশীদারিত্ব পুলিশের বাস্তবায়ন কল্পনাপ্রসূত হবে না। ষষ্ঠত. প্রব্লেম অরিয়েন্টেড পুলিশিং ব্যবস্থার চালুকরণ করতে হবে। এটি মূলত গঠনগত প্রপঞ্চ যা সঠিক জায়গায় কড়া নাড়ে অর্থাৎ সমস্যার মূলোৎপাটন করে পদ্ধতিগত এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করে থাকে। হারম্যান গোল্ডস্টেইন ১৯৭৯ সালে প্রব্লেম অরিয়েন্টেড পুলিশিং ব্যবস্থার উদ্ভাবন করেন। এই পুলিশিং ব্যবস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে, সনাতন পদ্ধতির তুলনায় প্রব্লেম অরিয়েন্টেড পুলিশিং গঠনগত উপায়ে সমস্যা চিহ্নিত করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সমস্যার যৌক্তিক সমাধান নিশ্চিত করা। মূলত চক্রাকার উপায়ে প্রব্লেম অরিয়েন্টেড পুলিশিংয়ের ফিলোসপি (দর্শন ও মূলনীতি) বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। স্ক্যানিং পর্যায়ে দেখা হয়Ñ ঘটনাটি যে ঘটেছে সেটি সমস্যা কিনা তা প্রথমত চিহ্নিত করতে হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ্যানালাইসিস; এ ধাপে সমস্যা সংক্রান্ত তথ্যের উৎস, কারণ ও প্রকৃতি উদ্ঘাটন করতে হবে। তৃতীয় পর্যায়ে রেসপন্স: এ ধাপে পুলিশসহ অন্যান্য দায়িত্বশীল সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে সমস্যা সমাধান কল্পে সমন্বয় সাধন করতে হবে। চতুর্থ পর্যায়ে এ্যাসেসমেন্ট তথা মূল্যায়ন; এ পর্যায়ে পুলিশ তাদের কাজের জন্য জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকবে এবং পরবর্তীতে সমস্যা সমাধানের জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে অধিকিন্তু সে সংক্রান্ত সমস্যায় ঐরূপ পদ্ধতি অবলম্বন করে অপরাধকে প্রতিরোধ করা। সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে কমপক্ষে শতাধিক মাদকব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার খবর জানা গেছে। অভিযানের পক্ষে-বিপক্ষে নানা রকমের মতামত পাওয়া গেছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে; মাদকবিরোধী এ রকম অভিযানের মাধ্যমে কি দেশ থেকে মাদকের মূলোৎপাটন সম্ভব? কখনই সম্ভব হবে না যদি মাদকের সঙ্গে জড়িত বিশাল চক্রের মদদদাতা, মাদকের উৎস, মাদক পাচার, মাদক বাজারজাতকরণ ইত্যাদি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত থাকে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা না হয়। মাদক ও মাদকাসক্ততা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রো-এ্যাকটিভ পুলিশিং ব্যবস্থার বিকল্প হতে পারে না। প্রাকৃতিক, পরিবশেগত, সামাজিক এবং কৌশলগত উপায়ে এমন একটি ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন যার নিমিত্তে কেউই মাদক পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সাহস না পায়। তবে এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে বিশেষ এবং কৌশলগত উপায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অপরাধ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে পুলিশের পাশাপাশি আমাদের/জনগণের ভূমিকাও অগ্রগণ্য। কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজির অধ্যাপক আরভিন ওয়ালার তাঁর ‘লেস ল মোর অর্ডার’ বইয়ে ক্রাইম প্রিভেনশন (অপরাধ প্রতিরোধ) এর উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি তাঁর বইয়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যানিক তথ্য, বেস্ট প্র্যাকটিসেস ও উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দিয়েছেন অপরাধ প্রতিরোধ নিয়ে। এক সমীক্ষায় তিনি দেখিয়েছেন; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৪ সালে সহিংস এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধে ২৪ মিলিয়ন টাকা খরচ হয়ে থাকে। পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে ২.৫ মিলিয়ন পুলিশ, সংশোধনী প্রতিষ্ঠান এবং বিচারক ও আইনী কর্মকা-ে সংশ্লিষ্টদের জন্য অতিরিক্ত ২০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়। ফলাফল খুব বেশি একটা সুখকর হয়নি। ওই বছর কারাদ- ব্যক্তিদের সংখ্যা ২ মিলিয়ন অতিক্রম করে এবং আরও ৫ মিলিয়ন অপরাধী কমিউনিটির তত্ত্বাবধানে প্রবেশন এবং প্যারোলে ছিল। সুতরাং, আইনগত কাঠামো ও প্রক্রিয়ায় ব্যয়ের পরেও বিপুলসংখ্যক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তিনি আরও যুক্তি দিয়ে উল্লেখ করেছেন; অপরাধ প্রতিরোধের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখা যেতে পারে এবং সেটি অপরাধ প্রতিকারের তুলনায় ব্যয়িত খরচের চেয়ে খুবই তাৎপর্য বহন করে। আমারও মনে হয়, অপরাধ করার প্রাকৃতিক, পরিবেশগত, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য সুযোগ কমিয়ে অপরাধীদের নিবৃত্ত করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অপরাধী যদি অপরাধ করার সুযোগ না পায় তাহলে অপরাধের ফলে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমে আসবে, জনমনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসবে সহসাই। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি কমে আসবে এবং পুলিশ বাহিনীও সার্ভিস অরিয়েন্টেড হয়ে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে। লেখক : প্রভাষক, ক্রিমিনোলজি এ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
×