ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষাসহ চিকিৎসা সেবা

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৯ জুলাই ২০১৮

পরীক্ষাসহ চিকিৎসা সেবা

দেশে জনস্বাস্থ্য সেবা সুরক্ষাসহ ফি নির্ধারণে সমতাবিধানে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এবার নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আইন অনুসারে দেশের সব বেসরকারী ক্লিনিক, হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ চিকিৎসা সেবা বিষয়ক মূল্য তালিকা ও ফি প্রকাশ্য স্থানে জনসমক্ষে প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এর পাশাপাশি আদালত ১৯৮২ সালের দ্য মেডিক্যাল প্র্যাকটিস এ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস এ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিন্যান্স অনুসারে বিধিমালা প্রণয়ন করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করারও নির্দেশনা দিয়েছে। এ সম্পর্কিত পরবর্তী আদেশের জন্য ৭ অক্টোবর নির্ধারণ করেছে হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলকে এই নির্দেশ যথাযথভাবে পালন, বাস্তবায়ন ও নিয়মিত তদারকির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশে সময়ে সময়ে উদ্ভূত জনস্বাস্থ্য সেবার সমস্যা ও সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের এই নির্দেশ সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। বিচক্ষণ পাঠকের হয়তো কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় একটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনাকে উপলক্ষ করে সৃষ্ট পরিস্থিতির কথা মনে পড়তে পারে। শিশুটির সাংবাদিক পিতা গণমাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যাব সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে ঘটনার সত্যতা তথা ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চরম অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পেলে কতিপয় আইনী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর প্রতিবাদে চট্টগ্রামের সব বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়ে আহ্বান করে ধর্মঘট। চট্টগ্রাম বিএমএও এতে সমর্থন জানায়। জনস্বাস্থ্য সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায় হাইকোর্ট এতে স্বপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করে এবং নির্দেশনা দেয় যে, জনস্বার্থ সেবা বিঘিœত করে এমন কোন ধর্মঘট ডাকা যাবে না এবং তা বেআইনী। সুখের কথা এই যে, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিক কর্তৃপক্ষ ও বিএমএ চট্টগ্রাম শাখা বিষয়টির আইনী গুরুত্ব বুঝতে পেরে অনতিবিলম্বে তা প্রত্যাহার করে নেয়। সত্য বটে, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো অগণিত প্যাথ ল্যাব, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল ও ক্লিনিক গজিয়ে উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা ফি নির্ধারণের আদৌ কোন বালাই নেই। এসব তদারকির জন্যও নেই কোন সরকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ। থাকলেও তা খুবই অপ্রতুল, অপর্যাপ্ত ও দুর্নীতিগ্রস্ত। দেশে বেসরকারী খাতে জনস্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারিত হয়েছে ঠিকই, তবে এক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণসহ ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে চলছে যথেচ্ছাচার। ফলে স্বভাবতই রোগী ও স্বজনরা একদিকে যেমন জিম্মি হয়ে পড়ে আর্থিক দিক থেকে, অন্যদিকে বঞ্চিত হয় ন্যায্য ও মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উভয়দিকেই। উচ্চ আদালতের নির্দেশনাসহ বিধিমালা প্রণীত হলে এর অবসান ঘটতে পারে। তবে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন এবং নিয়মিত তদারকির দায়দায়িত্ব অবশ্যই বর্তায় সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের ওপর। পাশাপাশি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের মালিক কর্তৃপ্েক্ষরও সবিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে বৈকি। মোটকথা কোন অবস্থাতেই জনস্বাস্থ্য সেবা জিম্মি বা বিঘিœত করা যাবে না। সর্বোপরি মানসম্মত চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ফিও নিতে হবে ন্যায়সঙ্গতভাবে।
×