ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রঙের বৈভবে উজ্জ্বল আবু তাহেরের ক্যানভাস

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৯ জুলাই ২০১৮

রঙের বৈভবে উজ্জ্বল আবু তাহেরের ক্যানভাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রঙের উদ্দীপনায় ভরপুর প্রতিটি ক্যানভাস। বর্ণের বৈভবে চিত্রিত হয়েছে বিবিধ বিষয়। এভাবেই রঙের নেশায় শিল্পরসিকের নয়নে প্রশান্তির পরশ ছড়িয়েছেন চিত্রশিল্পী আবু তাহের। একুশে পদকজয়ী এই শিল্পী এখন অসুস্থতার কারণে শুয়ে আছেন হাসপাতালের বিছানায়। তবে শিল্পীর কর্মজীবনের সাক্ষী একঝাঁক বর্ণবহুল ক্যানভাস শোভা পাচ্ছে ধানম-ির গ্যালারি চিত্রকে। সেসব ছবি নিয়ে শনিবার থেকে এই প্রদর্শনালয়ে শুরু হলো প্রদর্শনী। শ্রাবণ সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি সচিব নাসির উদ্দীন আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিল্প-সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ। সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক চিত্রশিল্পী মোঃ মনিরুজ্জামান। আবু তাহেরের চিত্রকর্মের মূল্যায়ন করে রফিকুন নবী বলেন, চিত্রকলার একটি মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে কাজ করা বেশ কঠিন। কিন্তু আবু তাহের সেই কাজটি করেছেন। তার মানসিক শক্তি ছিল প্রচ-। সব সময় নিজের স্টাইল বজায় রেখেছেন। কিবরিয়া স্যারের পর মিশ্র মিডিয়া নিয়ে সব চেয়ে বেশি কাজ করেছেন আবু তাহের। শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি চারুকলার শিক্ষকদেরও প্রিয় পাত্র ছিলেন। নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, টানা ছয় দশকের শিল্পচর্চার মাধ্যমে এই শিল্পী চিত্রকলায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। এটা অনন্য। যতদূর সম্ভব জাদুঘর ও ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারিতে শিল্পীর চিত্রকর্মগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব। যাপিত জীবনের সঙ্গে নিসর্গের নানা রূপ চিত্রিত হয়েছে শিল্পীর ক্যানভাসে। তেল রং, এ্যাক্রেলিক ও মিশ্র মাধ্যমে আঁকা ৫৫টি চিত্রকর্মের সমন্বয়ের সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। ১২ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘অরূপ তোমার বাণী’ ॥ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। অনেক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করলেও একক আবৃত্তি সন্ধ্যা করার সময়কাল পেরিয়েছে দুই দশক। অবশেষে শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের একক আবৃত্তিসন্ধ্যা ‘অরূপ তোমার বাণী’। আবৃত্তি সংগঠন হরবোলার দুই দশক পূর্তিতে ‘হরবোলার এককুড়ি’ শিরোনামে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে এর আয়োজন করা হয়। জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় পাঠ করেন আবুল হাসানের ‘নিঃসঙ্গতা সেই প্রথম শোনা’ ও ‘অতটুকু চায়না বালিকা’, নির্মলেন্দু গুণের ‘তুমি চলে যাচ্ছ’, রবীন্দ্রনাথের ‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর এ ভুবনে’সহ নবীন ও প্রবীণ কবিদের কবিতা। বাবুল আখতার স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা ॥ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক বাবুল আখতার। তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তবে তাকে নিয়ে তার সুহৃদদের স্মৃতি এখনও জ্বলজ্বলে। তাদের লেখা নিয়ে প্রকাশ পেয়েছে স্মারকগ্রন্থ হৃৎ-অর্ঘ্য। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ঘাস ফুল নদী। শনিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাবুল আখতার স্মৃতি পরিষদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। পরিষদের সভাপতি মাসুদ কাদের মনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক কামাল লোহানী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক আশরাফুল আলম, কবি জাহিদুল হক, ড. নীরু শামসুন্নাহার প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঘাস ফুল নদীর নির্বাহী পরিচালক মুনীর মোরশেদ। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শব্দসৈনিক বাবুল আখতার মানুষকে ভালবাসতেন। প্রত্যেকের জন্য তার মঙ্গল চিন্তা ছিল। বাবুল আখতারের সঙ্গে মিশে তার সুন্দর ও সংগ্রামী মনের পরিচয় পেয়েছিলাম। শব্দসৈনিকদের সংগঠিত করা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তিনি অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন। তিনি আরও বলেন, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে, সেখানেই বাবুল আখতার সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের সহযাত্রী ছিলেন। ‘উত্তরাধিকার-রবীন্দ্র নজরুল’ ॥ এক আয়োজনে উঠে এলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আলোচনা নির্ভর সে আয়োজনে প্রতিধ্বনিত হলো সৃষ্টির আলোকে উভয় কবির সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা। তাঁদের সাহিত্যের আশ্রয়ে উচ্চারিত হলো মানবিক পৃথিবী গড়তে বাঙালীর মননের দিশারী দুই কবির ভাবনার কথা। শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো ‘উত্তরাধিকার-রবীন্দ্র নজরুল’ শিরোনামের আয়োজন। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সঙ্গে সাজানো এ আলোচনা সভার আয়োজন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এতে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য সোমার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাসদের (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী ও ধনাঢ্য শ্রেণী সভ্যতার বিপরীতে সাম্যবাদী সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পথে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সঙ্কোচে থাকলেও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তেমনটা ছিলেন না। ‘অচলনায়তন’, ‘মুক্তধারা’, ‘ডাকঘর’, ‘রথের রশি’ ও ‘রক্তকরবী’ নাটকের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, এসব নাটকে রবীন্দ্রনাথ পুঁজিবাদের সমস্যার কথা বললেও প্রকৃত অর্থে তিনি কখনও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেননি। ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে তিনি মনে করতেন, সম্পত্তির মধ্যে দিয়ে ব্যক্তি নিজেকে প্রকাশ করতে পারে। এ নিয়ে দ্বিধায় ভুগতেন তিনি। অন্যদিকে ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবে উজ্জীবিত হয়ে কবি নজরুল ‘লাল ফৌজ’ গল্পে লিখেছেন বিপ্লবের কথা, পরে অর্ধ সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’ ও প্রবন্ধ ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’, গান ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ ও পরে ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় পুঁজিবাদের স্বরূপ উন্মোচন করেন কবি নজরুল। তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্র যুগে রবীন্দ্রনাথের ধারা থেকে বের হওয়া চাট্টিখানি কথা ছিল না। অথচ নজরুল তা পেরেছেন, পেরেছেন নিজের স্বকীয় অবস্থান তৈরি করে নিতে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় তিনি বললেন, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা হলেই তিনি শান্ত হবেন। এখানে রবীন্দ্রনাথ থেকে আলাদা হয়ে নজরুল স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। কবিগুরুর মূল্যায়নে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উদারনীতিক ছিলেন। জীবনের শেষ লেখা ‘সভ্যতার সংকট’ এ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। তিনি অপেক্ষা করছেন, মুক্তি দূতের। যিনি পূর্ব দেশ থেকে আসবেন। এক পরিত্রাণ কর্তার ভূমিকার আশায় ছিলেন তিনি। তিনি মনে করতেন, শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আসবে। অন্যদিকে কবি নজরুল ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। লেখনীর মধ্য দিয়ে তিনি বলেছেন, গণমানুষের জাগরণের মধ্য দিয়ে আসবে কাক্সিক্ষত মুক্তি। তিনি প্রথম লিখেছেন ‘গাহি সাম্যের গান’। পুঁজিবাদের বিপরীতে তিনি সাম্যের জয়গান গেয়েছেন। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে ‘ক্লাসের ফাঁকে বইমেলা’ ॥ সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ক্যাম্পাসে শনিবার থেকে শুরু হলো তিনদিনের ‘ক্লাসের ফাঁকে বইমেলা’। এ বইমেলায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ২৫টি প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করছে। বইমেলার উদ্বোধন করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ও কথাসাহিত্যিক মোশতাক আহমেদ। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের গবর্নিং বডির সভাপতি এসএম মাহমুদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন আহমদ পাবলিকেশন্সের কর্ণধার মেজবাহউদ্দিন আহমদ। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজ এ প্রতিষ্ঠানে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। এটি সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই মেলায় বাংলা ভাষার কেমন ব্যবহার হচ্ছে তা আমি জানি না। তবে শ্রেণীকক্ষে ভাষার কেমন ব্যবহার হচ্ছে তা অবশ্যই শিক্ষককে খেয়াল রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ভাষা বিকৃতির প্রধান মাধ্যম ফেসবুক। এজন্য নবীন শিক্ষার্থীদের তিনি এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিন দিনের এ বইমেলা চলবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
×